কর্মী থেকে গার্মেন্টসের মালিক হলেন ছবি শিকদার - Textile Lab | Textile Learning Blog
যেভাবে কর্মী থেকে গার্মেন্টসের মালিক হলেন ছবি



কঠিনকে জয় করা এক নারী উদ্যোগতার নাম হলো ছবি সিকদার। শ্রমিক থেকে আজ তিনি গার্মেন্টসের মালিক। যা অনেক বাংলা সিনেমার ছবির মতো। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও শুধুমাত্র প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হয়েছেন চট্টগ্রামের এই মেয়ে ছবি।

১৯৯৭ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে অভাবে দিনকাটা ছবি কাজ নেন একটি গার্মেন্টে। তখন বেতন পেতেন মাত্র ১৪০০ টাকা। ১৯ বছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন ক্লিপটন গ্রুপ, ফোরএইচ গ্রুপ এবং ইপিজেডের জেমিনাসের মতো প্রতিষ্ঠানে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’র এক বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় জীবন যোদ্ধা এই নারীকে।

কিন্তু পথটা এতো সহজ ছিলো না ছবির। বাবা মনোরঞ্জন সিকদারের মৃত্যুর পর অভাবের তাড়নায় কাজ নেন ক্লিফটন গ্রুপের একটি গার্মেন্টে। এর পরও পড়াশোন করার ইচ্ছা থেকে ২০০৪ সালে ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল শাখায়। তবে সংসারের টানাপোড়েন ও কাজের চাপে তা শেষ করতে পারেননি তিনি। ২০১৬ পর্যন্ত বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে হন এক্সিকিউটিভ। তখন বেতনও পেতেন ভালো।

কিন্তু নতুন কিছু করার ইচ্ছা থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৬ সালে পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ঘরের মধ্যে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন ছবি। এ সময় সঙ্গে নেন মাত্র ছয়জন কর্মী। এখান থেকেই তার নতুন জীবনের শুরু হয়। এরপর ২০১৮ সালে দুই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোরে গড়ে তোলেন ‘সেন্স ফ্যাশন লিমিটেড’ নামে একটি পোশাক কারখানা। এভাবেই গার্মেন্ট কর্মী থেকে হয়ে উঠেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।

বর্তমানে তার ওই গার্মেন্টসে ১১০ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। ব্যাংক থেকে ভালো ঋণ সুবিধা এবং জায়গা পেলে একটি গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন ছবি সিকদার।


চট্টগ্রাম নগরীর নতুন চাক্তাই এলাকার রাবেয়া টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় গড়ে তোলেন সেন্স ফ্যাশন। নিট ওয়্যার (আন্ডার গার্মেন্ট) এবং ওভেন (শার্ট ও টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) তৈরি করা এ প্রতিষ্ঠানে। এখানে উৎপাদিত পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকায়।

প্রথম দিকে স্টক লটের ফ্রেব্রিক্স দিয়ে বিভিন্ন লোকাল মার্কেটে পোশাক সরবরাহ করতেন। কিন্তু সময়মতো টাকা ফিরে না আসার কারণে পড়তে হয়েছে বিপাকে। পরে বড় বড় কারখানা থেকে সাব কন্ট্রাক্টের অর্ডার নিতে শুরু করলেন কাজ। প্রতিষ্ঠান বড় করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরলেও পাননি পর্যাপ্ত ঋণ। তারপরও ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পাঁচ হাজার বর্গফুটের বিশাল ফ্লোরে ৬০টি মেশিন দিয়ে শুরু করেন সেন্স ফ্যাশনের কাজ। বর্তমানে রয়েছে ৮৭টি মেশিন। আর সেখানে কাজ করছেন ১১০ জন নারী কর্মী।

এখন ছবির মোট বিনিয়োগ প্রায় এক কোটি টাকা। প্রতিমাসে কর্মীদের বেতন, ফ্লোর ভাড়া এবং অন্যান্য খরচসহ দিতে হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।


এ বিষয়ে ছবি সিকদার বলেন, ‘চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি গ্রিন ফ্যাক্টরি করার ইচ্ছা আছে আমার। এছাড়া সরাসরি বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে কাজ করারও ইচ্ছে রয়েছে। আমার স্বামী প্রতিষ্ঠানের কমার্সিয়াল সাইটটা দেখেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যেহেতু কর্মজীবী, তাই ভারতের কলকাতায় শাশুড়ির কাছে রেখে একমাত্র ছেলেকে পড়াচ্ছি। ছেলেই আমার ভবিষ্যত। সে-ই একদিন এ ব্যবসার হাল ধরবে।’

কর্মীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও কর্মী ছিলাম। তাই আমার কর্মীদের সন্তানের মতো দেখি। আমি জানি শ্রমিকদের কোথায় কী সমস্যা। তাদের খুশি রাখার চেষ্টা করি। প্রতিষ্ঠানের খরচ সামলে যা অবশিষ্ট থাকে তাতেই আমি খুশি। বেশি লাভ করতে চাই না। আমি তেমন লেখাপড়া করতে পারিনি। কিন্তু আমার মতো যারা নিরক্ষর শ্রমিক রয়েছে, তাদের জন্য ভবিষ্যতে এক ঘণ্টা করে লেখাপড়া করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে আমার।’


পোশাক কারখানার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এই নারী উদ্যোগতা বলেন, ‘এ সেক্টরের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা দরকার। কিন্তু আমরা ঋণ চাইতে গেলে ব্যাংক খোঁজে বড় অংকের মর্টগেজ। তাছাড়া এসএমই লোনে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। তাই সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সুবিধা দেয়া দরকার। একই সঙ্গে বিভিন্ন অর্থনৈতিক জোনগুলোতে আমাদের মতো নারী উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ দেয়া উচিত।’

কর্মী থেকে গার্মেন্টসের মালিক হলেন ছবি শিকদার

যেভাবে কর্মী থেকে গার্মেন্টসের মালিক হলেন ছবি



কঠিনকে জয় করা এক নারী উদ্যোগতার নাম হলো ছবি সিকদার। শ্রমিক থেকে আজ তিনি গার্মেন্টসের মালিক। যা অনেক বাংলা সিনেমার ছবির মতো। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও শুধুমাত্র প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হয়েছেন চট্টগ্রামের এই মেয়ে ছবি।

১৯৯৭ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে অভাবে দিনকাটা ছবি কাজ নেন একটি গার্মেন্টে। তখন বেতন পেতেন মাত্র ১৪০০ টাকা। ১৯ বছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন ক্লিপটন গ্রুপ, ফোরএইচ গ্রুপ এবং ইপিজেডের জেমিনাসের মতো প্রতিষ্ঠানে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’র এক বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় জীবন যোদ্ধা এই নারীকে।

কিন্তু পথটা এতো সহজ ছিলো না ছবির। বাবা মনোরঞ্জন সিকদারের মৃত্যুর পর অভাবের তাড়নায় কাজ নেন ক্লিফটন গ্রুপের একটি গার্মেন্টে। এর পরও পড়াশোন করার ইচ্ছা থেকে ২০০৪ সালে ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল শাখায়। তবে সংসারের টানাপোড়েন ও কাজের চাপে তা শেষ করতে পারেননি তিনি। ২০১৬ পর্যন্ত বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে হন এক্সিকিউটিভ। তখন বেতনও পেতেন ভালো।

কিন্তু নতুন কিছু করার ইচ্ছা থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৬ সালে পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ঘরের মধ্যে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন ছবি। এ সময় সঙ্গে নেন মাত্র ছয়জন কর্মী। এখান থেকেই তার নতুন জীবনের শুরু হয়। এরপর ২০১৮ সালে দুই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোরে গড়ে তোলেন ‘সেন্স ফ্যাশন লিমিটেড’ নামে একটি পোশাক কারখানা। এভাবেই গার্মেন্ট কর্মী থেকে হয়ে উঠেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।

বর্তমানে তার ওই গার্মেন্টসে ১১০ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। ব্যাংক থেকে ভালো ঋণ সুবিধা এবং জায়গা পেলে একটি গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন ছবি সিকদার।


চট্টগ্রাম নগরীর নতুন চাক্তাই এলাকার রাবেয়া টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় গড়ে তোলেন সেন্স ফ্যাশন। নিট ওয়্যার (আন্ডার গার্মেন্ট) এবং ওভেন (শার্ট ও টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) তৈরি করা এ প্রতিষ্ঠানে। এখানে উৎপাদিত পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকায়।

প্রথম দিকে স্টক লটের ফ্রেব্রিক্স দিয়ে বিভিন্ন লোকাল মার্কেটে পোশাক সরবরাহ করতেন। কিন্তু সময়মতো টাকা ফিরে না আসার কারণে পড়তে হয়েছে বিপাকে। পরে বড় বড় কারখানা থেকে সাব কন্ট্রাক্টের অর্ডার নিতে শুরু করলেন কাজ। প্রতিষ্ঠান বড় করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরলেও পাননি পর্যাপ্ত ঋণ। তারপরও ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পাঁচ হাজার বর্গফুটের বিশাল ফ্লোরে ৬০টি মেশিন দিয়ে শুরু করেন সেন্স ফ্যাশনের কাজ। বর্তমানে রয়েছে ৮৭টি মেশিন। আর সেখানে কাজ করছেন ১১০ জন নারী কর্মী।

এখন ছবির মোট বিনিয়োগ প্রায় এক কোটি টাকা। প্রতিমাসে কর্মীদের বেতন, ফ্লোর ভাড়া এবং অন্যান্য খরচসহ দিতে হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।


এ বিষয়ে ছবি সিকদার বলেন, ‘চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি গ্রিন ফ্যাক্টরি করার ইচ্ছা আছে আমার। এছাড়া সরাসরি বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে কাজ করারও ইচ্ছে রয়েছে। আমার স্বামী প্রতিষ্ঠানের কমার্সিয়াল সাইটটা দেখেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যেহেতু কর্মজীবী, তাই ভারতের কলকাতায় শাশুড়ির কাছে রেখে একমাত্র ছেলেকে পড়াচ্ছি। ছেলেই আমার ভবিষ্যত। সে-ই একদিন এ ব্যবসার হাল ধরবে।’

কর্মীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও কর্মী ছিলাম। তাই আমার কর্মীদের সন্তানের মতো দেখি। আমি জানি শ্রমিকদের কোথায় কী সমস্যা। তাদের খুশি রাখার চেষ্টা করি। প্রতিষ্ঠানের খরচ সামলে যা অবশিষ্ট থাকে তাতেই আমি খুশি। বেশি লাভ করতে চাই না। আমি তেমন লেখাপড়া করতে পারিনি। কিন্তু আমার মতো যারা নিরক্ষর শ্রমিক রয়েছে, তাদের জন্য ভবিষ্যতে এক ঘণ্টা করে লেখাপড়া করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে আমার।’


পোশাক কারখানার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এই নারী উদ্যোগতা বলেন, ‘এ সেক্টরের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা দরকার। কিন্তু আমরা ঋণ চাইতে গেলে ব্যাংক খোঁজে বড় অংকের মর্টগেজ। তাছাড়া এসএমই লোনে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। তাই সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সুবিধা দেয়া দরকার। একই সঙ্গে বিভিন্ন অর্থনৈতিক জোনগুলোতে আমাদের মতো নারী উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ দেয়া উচিত।’

কোন মন্তব্য নেই: