সবুজ কারখানা | গ্রীন ফেক্টরি | গ্রীন প্রজেক্ট
প্রাচীন ঐতিহ্যের মসলিন আর অধুনা প্রায় হারাতে যাওয়া জামদানির সুখস্মৃতিকে সঙ্গী করে বর্তমান বাংলাদেশের শ্রমঘন পোশাক শিল্পের সূচনা, বিকাশ ও ক্রমোন্নয়ন। আবহমান জনপদের সরল নারীদের মমতা আর নিপুণ হাতের সেলাইকর্ম এখন নকশি কাঁথার শীতল অঙ্গনকে পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে, প্রযুক্তি আর যন্ত্রের সহজলভ্যতাকে পুঁজি করে বিশ্বায়নের এ যুগে একটি আকর্ষণীয় ব্র্যান্ড হিসেবে উন্নত দেশগুলোতে পরিচিতি তৈরি করেছে। পর্যাপ্ত জনশক্তি, দক্ষ ও সুলভ শ্রমবাজার ও সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় উন্নত বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকের শেষদিকে হাতে গোনা কয়েকটি কারখানা নিয়ে পোশাক শিল্পের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয়। ২০১৫ সালে কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজারের অধিক। বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে আমাদের শ্রমে গড়া পণ্য গ্রাহকের মন জয় করে চলছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এই দুটি খাতেই পোশাক শিল্প অবদান রাখছে সমানভাবে।
অপার সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হওয়া পোশাক শিল্পে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাও কম নয়। তাজরীন ফ্যাশনসের আগুনে ১১৭ জন এবং পরের বছর সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১৩০ জন নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের বিষয়টি সামনে চলে আসে। সামগ্রিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, পোশাক শিল্পের এ সম্ভাবনাময় যাত্রাপথের পেছনের কাজ করতে আমরা প্রায়ই ব্যর্থ হয়েছি। বিশেষত দ্রুতবর্ধনশীল শিল্পের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে একেবারেই অপরিকল্পিত। পোশাক শিল্পে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ ভবনগুলোর ৯০ শতাংশই কাঠামোগত বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ এবং কাজের পরিবেশ বিবেচনায় সন্তোষজনক নয়। রূঢ় বাস্তবতা হলো, অনেক বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ পোশাক কারখানা ভবনগুলো চাইলেই এখন আর পরিবেশ ও নিরাপত্তাগত দিক দিয়ে খুব বেশি ভালো অবস্থানে নেয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনের তাগিদে এখন নতুন করে প্রচুর কারখানা ভবন তৈরি করতে হচ্ছে এবং এখনই সময় পরিবেশ ইস্যুতে সচেতন হওয়ার।
পরিবেশবান্ধব কেন হতে হবে
আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়ে আমাদের পরিবেশ। বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউজ ইফেক্ট, কার্বন নিঃসরণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দূষণ ইত্যাদির মাধ্যমে বাসযোগ্য পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে পৃথিবীর, যার অন্যতম কারণ শিল্প-কারখানার উৎপাদিত বর্জ্য। তা সত্ত্বেও শিল্প-কারখানাকে বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই, কারণ কারখানা মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম মাধ্যম। শিল্প বিপ্লব-উত্তর আধুনিক পৃথিবীতে কারখানা ছাড়া একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি কোনোভাবেই কল্পনা করা যায় না। বিশ্বের সচেতন মানুষের তাই একটিই লক্ষ্য, শিল্প-কারখানাকে যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব করা। স্থূল দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা করার কারণে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরিতে একধরনের নেতিবাচক মনোবৃত্তি রয়েছে কারখানার মালিকদের। অবকাঠামো নির্মাণ খরচ বেড়ে যাবে, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, বিভিন্ন নিয়মকানুন মানতে হবে ইত্যাদি ভেবে অনাগ্রহী হয় অনেকেই অথচ পরিবেশবান্ধব কারখানার ভালো দিকগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
একটি পরিবেশবান্ধব কারখানা অপ্রয়োজনে সবুজকে ধ্বংস করবে না, বরং সবুজকে ব্যবহার করবে তার কর্মচারী ও শ্রমিকদের শারীরিক-মানসিক সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতার কাজে। সূর্যের রশ্মিকে অপরিকল্পিতভাবে আটকাবে না, বরং ব্যবহার করবে তার কারখানাকে আলোকিত করার জন্য এবং বিকল্প শক্তি উৎপাদনের কাজে। পরিকল্পনার অভাবে কারখানা বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক বাতাস থেকে বঞ্চিত হবে না, বরং মুক্ত বাতাসকে বইতে দেবে তার অভ্যন্তরে। পরিবেশবান্ধব কারখানা ক্ষতিকর বর্জ্য ও আবর্জনা দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করার পরিবর্তে নিজ দায়িত্বে পরিশোধন করে যতটা পারা যায় নিজের কাজে পুনরায় ব্যবহারের চেষ্টা করবে। প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাপ্ত পানিকে লোকালয়ে ঠেলে দেবে না, বরং সেই পানিকে আগলে রাখবে অল্প খরচে নিজের ব্যবহারের জন্য। পরিবেশবান্ধব কারখানা তাই শুরুতে খরচ বাড়ালেও দীর্ঘমেয়াদে অপচয়রোধী, সাশ্রয়ী, বেশি উৎপাদনশীল ও শ্রমিকবান্ধব কারখানা।
পরিবেশবান্ধব কারখানার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বকেও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ওয়ালমার্ট, ডিজনির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব সনদপ্রাপ্ত কারখানা ছাড়া কারো সঙ্গে উৎপাদন ও বিপণনসম্পর্কিত কোনো সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া কার্বন নিঃসরণ ইস্যুতে পরিবেশবাদী আন্দোলন ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হচ্ছে অর্থাৎ সব শিল্প-কারখানার জন্য কার্বন ফুটপ্রিন্ট প্রস্তুত করা একসময় বাধ্যতামূলক হয়ে পড়বে। এখনই যাদের প্রস্তুতি থাকবে না, তাদের হঠাৎ করেই বড় ধরনের ব্যবসায়িক ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে। সমাগত বাস্তবতা বলছে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে আজ হোক কাল হোক অবশ্যই পরিবেশবান্ধব শিল্পে রূপান্তরিত হতে হবে।
পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা
পরিবেশবান্ধব কারখানার জন্য পরিবেশবান্ধব কর্মকৌশল গুরুত্বপূর্ণ। ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও প্রচলনের প্রেক্ষাপটে এর ধরন একটু ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। তবে সব ক্ষেত্রেই মোটা দাগে কয়েকটি ধাপে এগোনোর চিন্তা করা যায়। প্রথমত স্থাপত্য ও ডিজাইন, দ্বিতীয়ত নির্মাণ কৌশল ও নির্মাণ উপকরণ এবং তৃতীয়ত এনার্জি ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ।
তবে স্থাপত্য ও ডিজাইন প্রক্রিয়া শুরুর আগে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ইস্যুতে যে নীতিনির্ধারণী চিন্তাকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে, তা হচ্ছে পোশাক কারখানার বিকেন্দ্রীকরণ। সাধারণভাবে যেকোনো উপকারী কারখানার ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্ব বহন করে। বর্তমান সময়ে টেকসই কারখানা পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট কারখানা আদি অবস্থানের কাছে গিয়ে করা যায় কিনা। অর্থাৎ শ্রমিকরা চাকরি করার জন্য স্থান পরিবর্তন করবে না, বরং কারখানা শ্রমিকদের কাছে চলে যাবে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় এটা সুস্পষ্ট যে যদি পোশাক কারখানাটি শ্রমিকদের মূল অবস্থানের কাছাকাছি হয়, সেক্ষেত্রে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে কমে যাবে এবং তারা তাদের বর্তমান মজুরিতে অনেক বেশি সচ্ছলতা ও সন্তুষ্টি নিয়ে পরিবারের সান্নিধ্যে প্রশান্তি সহকারে বাস করতে পারবে। বাসস্থান ও কর্মস্থল নিজেদের পরিচিত গণ্ডির মধ্যে হওয়ার যে সামাজিক সুবিধা ও পারিবারিক নিরাপত্তা তারা পাবেন, তার মূল্য অনেক বেশি। তাছাড়া পোশাক কারখানাগুলো গ্রামে হলে গ্রামের মানুষ ও গ্রামকেন্দ্রিক সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। কিংবা ঢাকার আশপাশের এলাকায় কারখানা ভবনগুলো স্থানান্তর করা হলে তাতে অন্তত শ্রমজীবী মানুষের ঢাকামুখী চাপকে অনেকাংশে কমানো যাবে। সেখানে বেশি জায়গা নিয়ে কম উচ্চতার অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো গ্রহণ করা যায়। কম উচ্চতার ও পরিবেশবান্ধব হওয়ার কারণে ভবনের বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জ্বালানি শক্তির চাহিদা তুলনামূলক কম হবে।
স্থাপত্য ও ডিজাইন
পরিবেশবান্ধব ধারণাকে সবুজ (গ্রিন), টেকসই (সাসটেইনেবল) এ রকম আরো কয়েকটি প্রতিশব্দ ধারা প্রায়ই প্রকাশ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রিন বিল্ডিং বা সবুজ স্থাপনা বর্তমান সময়ে খুবই পরিচিত। অনেক স্থপতি ও প্রকৌশলীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন গ্রিন বিল্ডিং কনসেপ্ট মানে নতুন স্থাপনা কিংবা যেকোনো স্থাপনায় গাছ লাগানো। প্রকৃতপক্ষে সবুজ ডিজাইন কতগুলো বিষয়কে সামনে রেখে করতে হয়, যা একটি স্থাপনাকে পরিবেশের প্রতি সহনীয় করে তোলে:
জায়গা নির্ধারণ:
যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে প্রথম যে বিষয়টি দেখা অত্যন্ত জরুরি সেটা হচ্ছে যে জায়গাটিতে স্থাপনাটি হবে তার ধরন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা। যে ভূমিতে প্রকল্পটি হচ্ছে সেটি যদি কোনো আবাদি জমি হয়ে থাকে তবে সেখান প্রকল্পটি সরিয়ে আনতে হবে। বাসস্ট্যান্ড, দোকান, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল ইত্যাদি সুবিধা কাছাকাছি থাকতে হবে; যেন খুব বেশি যানবাহন ব্যবহার না করতে হয়, বরং শ্রমিকরা হেঁটে চলাচলের চিন্তা করতে পারে। বাস আগে থেকে প্রস্তুত এমন জায়গা নির্ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে খেয়াল করতে হবে মূল্যবান বনভূমি, বৈচিত্র্যময় পাহাড়ি ঢাল, জলাশয়, দুর্লভ প্রাণী বা পতঙ্গের প্রজননক্ষেত্রকে কীভাবে অক্ষত রাখা যায়।
দিক নির্বাচন:
ভবন পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা হলে অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। উত্তর-দক্ষিণের বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগানো যায়, ভবন ঠান্ডা থাকে। পশ্চিমের রোদের ক্রিয়া কম হয়, তাপমাত্রা-সহনীয় কাজের পরিবেশ তৈরি করা যায়।
দিনের আলো ব্যবহার:
আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের জন্য যে পরিমাণ আলো দরকার তার থেকে অনেক গুণ বেশি আলো বাইরে বর্তমান। এ আলোকে কীভাবে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করানো যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাকৃতিক আলোর সংস্থান করতে গিয়ে অনেক সময় ভবনের আকৃতি, প্রস্থ, জানালার অবস্থান ও পরিমাণ, কার্নিশ, লাইট শেড ইত্যাদিতে দৃশ্যমান অনেক পরিবর্তন আসে।
জলাশয় সংরক্ষণ:
প্রকল্পের আশপাশে কোনো জলাশয় থাকলে তাকে ভরাট না করে ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে হবে। কারণ পানির সংস্পর্শে বাতাস যেমন ঠাণ্ডা হয় এবং সেই বাতাস যদি প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাহলে অভ্যন্তরীণ স্বস্তি তৈরি হবে। তাছাড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটি উপযুক্ত আধার হতে পারে এ প্রাকৃতিক জলাশয়। প্রকল্পের মধ্যে বয়ে যাওয়া যেকোনো নালা বা
পানির ধারাকে প্রবহমান রাখতে হবে। তাহলে জলাবদ্ধতা হওয়ার সুযোগ কমে যাবে।
উন্মুক্ত সবুজ কেন্দ্র:
প্রতিটি প্রকল্পে কিছু জায়গা বাধ্যতামূলক ছেড়ে দিতে হয়। একটি পরিবেশবান্ধব কারখানায় প্রয়োজনে আরো বেশি জায়গা উন্মুক্ত রেখে একটি সবুজ প্রাকৃতিক অঙ্গনের পরিকল্পনা করা হয়। পরিচ্ছন্ন সবুজ উদ্যান শ্রমিকদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের একটি পরোক্ষ উপাদান, যাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। অনেক সময় এই মুক্ত ভূমিতে গাছ রোপণ করে বাগান তৈরি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের চারপাশে যেসব স্থানীয় জাতের গাছপালা সেগুলোকে পছন্দের তালিকায় আনতে হবে। আমাদের জৈবচক্র এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য স্থানীয় জাতের উদ্ভিদ ও গুল্মের গুরুত্ব অপরিসীম।
সবুজ ছাদ:
সবুজ ছাদ বা গ্রিন রুফ বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়। প্রতিটি স্থাপনার একটি বিশাল উন্মুক্ত ছাদ থাকে। সারা দিনের সূর্যতাপে এটি প্রচুর তাপ শোষণ করে। ছাদকে ফেলে না রেখে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজায়ন করা যেতে পারে—সে ক্ষেত্রে একদিকে যেমন প্রকল্পটিতে তাপ শোষণ কম হবে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য বাড়বে। সবুজ ছাদের পাশাপাশি আরো কাজ করা যায় ‘সবুজ দেয়াল’ নিয়ে। বিশেষ করে আমাদের আবহাওয়ায় পশ্চিমের মুক্ত দেয়াল সবুজ আচ্ছাদিত করে রাখতে পারলে স্থাপনার অভ্যন্তরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
পরিবেশবান্ধব নির্মাণ কৌশল
যেকোনো নির্মাণকাজ একটি বহুমুখী ধরনের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়। যত পরিকল্পিতই হোক না কেন নির্মাণকাজে ভূমিবিন্যাস ও জীববৈচিত্র্যে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। তার ওপর অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ পরিবেশের মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায়। পরিবেশবান্ধব নির্মাণ কৌশল এমনভাবে প্রণীত হয় যেন এই পরিবর্তন ও বিঘ্নতাকে যতটা নিয়ন্ত্রিত এবং কম হয়। কাজের শুরুতে এবং চলাকালে কতগুলো প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ নিতে হয়। স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার এবং অপচয় কমিয়ে পুনর্ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে পারলে নির্মাণকাজ পরিবেশবান্ধব হিসেবে পূর্ণতা পাবে।
পৃষ্ঠ মাটি সংরক্ষণ:
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ভূপৃষ্ঠের মাটির একদম উপরের পাতলা স্তর প্রাকৃতিক নিয়মে উর্বর, পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ অণুজীবের উপকারী বাসস্থান হয়ে ওঠে। নির্মাণকাজের জন্য মাটি খনন করতে গেলে প্রথমেই একে ফেলে দেয়া হয় অথচ এটিই গাছপালা, সবুজ ঘাস এবং পরিবেশের জন্য সবচেয়ে উপকারী মাটির স্তর। নির্মাণকাজ করতে গিয়ে এই টপ সয়েল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য আলাদা জায়গায় একত্র করে ঢেকে রাখা হয়। অতঃপর কাজ শেষ হলে পুনরায় মাটিতে স্তরে স্তরে সাজিয়ে দিতে হয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যে আবর্জনা তৈরি হয়, সেগুলো দিয়ে অনেক সময় মাটি ভরাট করা হয়, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাটির উর্বরতাশক্তিকে নষ্ট করে দিতে পারে। এ কারণে ওই আবর্জনা কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে এবং পুনরায় ব্যবহার করার কোনো সুযোগ আছে কিনা, সেটা বিবেচনা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রকল্পের উপকরণ ও পুনর্ব্যবহার: ‘সবুজ ভবন’ নির্মাণকল্পে বর্তমানে সারা বিশ্বে যে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা হলো পুরনো উপকরণগুলোর যথেষ্ট ব্যবহার বা পুনর্ব্যবহার। উপকরণের পুনর্ব্যবহার একাধারে যেমন সাশ্রয়ী তেমনি পরিবেশবান্ধবও বটে। এজন্য প্রাপ্ত উপকরণগুলোকে ব্যবহার অনুযায়ী গ্রুপে ভাগ করে নির্মাণ সাইটে নির্দিষ্ট জায়গা করে সুশৃঙ্খলভাবে রাখা যেতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত উপকরণ অন্যত্র বিক্রি বা অন্য কোনো প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারে। কোনো উপকরণ নতুনভাবে কেনার সময় বিক্রেতা কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রি-ইউজ বা রিসাইকেলের কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা, বিষয়টির দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এনার্জি ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ
শিল্প সেক্টরে পানি ও বিদ্যুৎ দুটি অতীব প্রয়োজনীয় এনার্জি। পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ এনার্জির পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উৎস ও জ্বালানিবিহীন বিকল্প উৎসকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়।
একটি কারখানার বিদ্যুতের ব্যবহার প্রধানত দুটো কারণে প্রথমত মেশিন ও যন্ত্র ব্যবহার এবং দ্বিতীয়ত সাধারণ বৈদ্যুতিক সামগ্রী যেমন ফ্যান, লাইট ইত্যাদির ব্যবহার। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী যন্ত্র ও সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো যায়। এছাড়া সমগ্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিকল্পনা এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। ইউএসজিবিসির হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানার মোট ব্যবহারের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব, যা কারখানার বৈদ্যুতিক খরচকে বহুলাংশে কমিয়ে দেবে। এজন্য যথাযথ সুইচ কন্ট্রোলিং ও সেন্সরের ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
প্রচলিত নিয়মে বিদ্যুৎ উপাদন করতে প্রচুর পরিমাণে তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যয় হয়। এতে পরিবেশের বেশ ক্ষতি হয়ে থাকে। বিকল্প উৎস যেমন সূর্যরশ্মি (সোলার), বায়ু (উইন্ড), পানি (হাইড্রো) ইত্যাদি ব্যবহার করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ লাভজনক। সৌরবিদ্যুতের সূচনা খরচ বেশি বিধায় অনেকেই অনাগ্রহী থাকেন, তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে মানসম্পন্ন সোলার প্যানেল ব্যবহার করলে দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হিসেবে পরিগণিত হয়।
বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা পানি ব্যবহার করে থাকি। পরিবেশবান্ধব হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে এ বিষয়ে সব ব্যবহারকারীর মধ্যে পরিমিতিবোধ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে সাশ্রয়ী সনদপ্রাপ্ত টয়লেট ফিক্সার এবং ফিটিংস ব্যবহার করা হয়, যাতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি পানি বের না হয়। তাছাড়া টয়লেট ফিটিংস ও ফিক্সারে সেন্সর ব্যবহার করে পানির আরো বেশি নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করা যায়।
আবাসন ও শিল্প খাতে যে পরিমাণ পানি প্রতিদিন খরচ করা হয় তার ৪০ শতাংশ রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। রিসাইকেলড পানি ফ্লোর ওয়াশ, ক্লথ ক্লিনিং, ইয়ার্ড ক্লিনিং, গাড়ি ধোয়া, বাগানে পানি দেয়া এবং টয়লেট ফ্লাশে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
বৃষ্টিপ্রধান বাংলাদেশে প্রতিটি স্থাপনায় বৃষ্টির পানিকে ধরে রাখার সুব্যবস্থা করা হলে পরিবেশের দিক থেকে সেটা হবে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। দালানকোঠা, রাস্তাঘাট নির্মাণে খালি জায়গা কমে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে প্রবেশ ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। তাই বৃষ্টির পানি ভবনের ছাদে অথবা মাটির নিচে আলাদা আধার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বৃষ্টির পানি নিরাপদ। কেননা এটি আর্সেনিক ও রোগ-জীবাণুমুক্ত। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বছরের অন্তত চার মাস বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে খুব সহজেই সাধারণ শ্রমিকদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহূত পানির ৫০ শতাংশ চাহিদা মেটানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে পাম্পিং খরচটাও কমে যাচ্ছে এবং রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
তিনটি ধাপের পরও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ থেকে যায় সেটা হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ। পরিবেশবান্ধব কারখানার দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর সুফল পেতে হলে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকতে হয়। অপচয় রোধ করার জন্য সবাইকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও তদারকির ব্যবস্থা থাকতে হয়।
পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি
একটি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা তার জীবনচক্রের কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত প্রতিটি অধ্যায়ে পরিবেশের ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি স্পর্শকাতর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। একদম পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নকশা তৈরি, ভবন নির্মাণ, পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং এমনকি ভেঙে ফেলা কোনো কিছুই এর বাইরে নয়। সবুজ স্থাপনা সবসময়ই পরিবেশ ও কার্যকলাপের মধ্যে একধরনের ভারসাম্য বজায় রেখে কাজ করে। একটি স্থাপনা কতটুকু পরিবেশবান্ধব তা নির্ণয়ের জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্যারামিটার ঠিক করে দেয়া হয়। পরিবেশ ইস্যু খুব পুরনো না হলেও উন্নত দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির ব্যবস্থা ছিল। যেমন কানাডায় গ্রিন স্টার, যুক্তরাজ্যে ব্রিয়াম, মধ্যপ্রাচ্যে এস্ট্রোডার্মা, ভারতে গৃহ, জার্মানিতে ডিজিএনবি, জাপানে ক্যাসবি ইত্যাদি বিভিন্ন নামে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রিন রেটিং পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
বর্তমানে ওয়ার্ল্ড গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে সবুজ ভবনের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। তারা এজ (এক্সেলেন্স ইন ডিজাইন ফর গ্রেটার ইফিসিয়েন্সিজ) নামে একটি রেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত ইউ এস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল প্রবর্তিত লিড (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) সার্টিফিকেশন সিস্টেমটি পৃথিবীব্যাপী বেশি জনপ্রিয় ও সমাদৃত। আমাদের দেশের পোশাক শিল্প মূলত ইউএসজিবিসি থেকে লিড সনদ নিয়ে থাকে। LEED বা Leadership in Energy and Environmental Design হলো বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত ও গ্রহণযোগ্য গ্রিন বিল্ডিং রেটিং সিস্টেম, যা কোনো স্থাপনা বা ভবনের পরিবেশগত কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে ব্যবহূত হয়। ১৯৯৯ সালে এই লিড সার্টিফিকেশন পদ্ধতিটি চালু হয়। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যসম্পর্কিত পাঁচটি ক্ষেত্রে কোনো ভবনের টেকসই কার্যকারিতার পর্যালোচনা করে পয়েন্ট রেটিংয়ের মাধ্যমে লিড সার্টিফিকেট দেয়া হয়। এই পাঁচটি ক্ষেত্র হলো টেকসই সাইট, পানি সাশ্রয়, শক্তি সাশ্রয়, নির্মাণসামগ্রী নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশ।
ভিন্ন ভিন্ন ভবনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন লিড সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। লিড সার্টিফিকেশনের চারটি মাত্রা রয়েছে। এগুলো হলো সার্টিফায়েড, সিলভার, গোল্ড ও প্লাটিনাম। লিড সনদ পেতে একটি কারখানাকে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত পরিবেশগত মান রক্ষা করতে হয়। নির্মাণ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপের জন্য আলাদা আলাদা মূল্যায়ন করা হয়।
বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা
কারখানা মানেই শব্দ, ধুলো, এলোমেলো, আবর্জনা আর যতসব বিরক্তির উন্মেষ। তবে সময় বদলেছে, মানুষের মানসিকতা বদলেছে এবং বদলেছে সৌন্দর্যচিন্তার লেভেল। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নানা ধরনের ঝামেলা পেরিয়ে উৎকর্ষতা আর অনন্যতায় এখন সামনে এগিয়ে চলছে। রানা প্লাজা ধ্বংসের নেতিবাচক প্রতিচ্ছবি পাশ কাটিয়ে সবুজ কারখানার উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন প্রথম সারির একটি নাম।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা বাস্তবায়ন খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। বিশেষ করে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের গাইডলাইন অনুসরণ করে পোশাক কারখানা নির্মাণ কেবলই উদ্যোগের ব্যাপারমাত্র। আমাদের দেশের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ের। খুব অল্প কিছু সময় ব্যতীত আমাদের পর্যাপ্ত সূর্যলোক আছে, আমাদের দেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর, অল্প পরিশ্রমে সবুজের সমারোহে ছেয়ে যায় চারদিক। পানি একটি সুলভ ও সহজপ্রাপ্য উপাদান। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের কোনো অভাব নেই। প্রয়োজন শুধু এ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের এই বৈচিত্র্যকে ধরে রাখা।
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহ ও উদ্যোগ তৈরি হয়েছে। ২০১২ সালে ঈশ্বরদী ইপিজেডে ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের পরিবেশবান্ধব সর্বোচ্চ লিড প্লাটিনাম সনদ অর্জন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। পোশাক শিল্প অঙ্গনে ভিনটেজ ডেনিম একটি উদাহরণ তৈরি করে। আরো বেশকিছু রুচিশীল পোশাক ব্যবসায়ী এগিয়ে আসেন পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা নির্মাণে। পরিবেশবান্ধব কারখানা নিয়ে এখন প্রদর্শনী হচ্ছে, প্রশিক্ষণ হচ্ছে। স্থপতি, প্রকৌশলী, মালিক, নির্মাতা সবার মধ্যেই তৈরি হচ্ছে সচেতনতা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবেশবান্ধব কারখানার অগ্রযাত্রা আরো বিকশিত হবে।
বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয় একটি বহুল আলোচিত বিষয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যে হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পৃথিবী নামক গ্রহটি দ্রুতই হুমকির সম্মুখীন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই এ ধরণীকে রক্ষার জন্য চলছে নানা আয়োজন। অনুষ্ঠিত হচ্ছে পরিবেশ সম্মেলন এবং গঠিত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ড। জলবায়ু পরিবর্তন কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না। ভৌগোলিক সাম্যাবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষম বণ্টন এবং মানুষের কর্মকাণ্ডের ওপর জলবায়ু পরিবর্তন অনেকাংশে নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে প্রকৌশলী ও স্থপতিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দিন দিন বিভিন্ন চাহিদাকে মাথায় রেখে ভূপৃষ্ঠে যে হারে স্থাপনা গড়ে উঠছে, সেই একই হারে কমছে সবুজ বনভূমি, অগভীর জলাশয়, কাটা হচ্ছে পাহাড়, পরিবর্তন করা হচ্ছে নদ-নদীর গতিপথ। তাই প্রকৌশলী ও স্থপতিদের হতে হবে আরো দায়িত্ববান। পরিবেশ রক্ষার্থে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।
লেখা সত্বঃ
খালিদ মাহমুদ: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এম আর্ক গবেষক; প্রধান স্থপতি, আর্কিটেক্টস ওয়াল ডিজাইন স্টুডিও
বনিক বার্তা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন