ক্রেতারা কি আমাদের কাছ থেকে পন্য কিনতে বাধ্য ?
গত ৫ বছরে অগনিত সভা-সেমিনারে বিদেশি পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বড় কর্তাদের কাছ থেকে শুনতে পেরেছি বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো পৃথিবী সেরা। ঢোলটা তো উনারাই পিটাচ্ছিলেন। তাহলে হঠাৎ কেন এমন হচ্ছে? আমরা কি ওভার কনফিডেন্ট হয়ে পড়েছিলাম? আমরা কি নিজেদের অটোমেটিক চয়েস ভেবে ফেলেছিলাম? এ জন্যই কি বায়াররাও মার্কেট ঝালাই করে নিচ্ছে? এ জন্যই কি পাকিস্তানের মত অকার্যকর দেশেও বায়ারদের দৌড় ঝাপ বেড়ে গেছে? ভাবতে হবে আরো। আমাদের কিন্তু শ্রমিক ছাড়া নিজেদের কিছুই নাই।
অভার দ্য টেবিল বা আন্ডার দ্য টেবিলের খরচ, পোর্ট এ মাল পরে থাকার বাড়তি খরচ বা মিসেলেনিয়াস জাতীয় সকল খরচ হিসাব করে মুল্য নির্ধারণ করতে কিন্তু বায়াররা বাধ্য নন।
সভা-সেমিনার বা ট্রেনিং, যেখানেই কারখানা মালিকদের সাথে কথা হয় সেখানেই শুনতে পাই বায়ার টাকা বাড়াবেনা। কিন্তু সব করতে বলে। কথা সত্য। শতভাগ সত্য। কিন্তু বায়ার আসলে কি করতে বলে? বায়ারের চাই কোয়ালিটি, প্রাইস ও কম্পলায়েন্স। কোয়ালিটি নিয়ে কাউকে বিষোধগার করতে দেখিনাই বা শুনি নাই। শুধু প্রাইস আর কম্পলায়েন্স এর সমন্নয়হীনতা নিয়ে কথা বলতে শুনি। কিন্তু কম্পলায়েন্স তো বায়ার তার দেশের মানুষের জন্য বলেনা। যাদের জন্য বলে তারা তো আমাদের দেশের মানুষ। এটা বায়ারকে কেন বলতে হচ্ছে?
আর প্রাইস....হা, কথা সত্যি। দিন যত গড়াচ্ছে প্রাইস কমাচ্ছে বায়ার। মনে প্রশ্ন জাগে, বাজারে গিয়ে একই জিনিস পাশাপাশি দুটি দোকানে জিজ্ঞেস করে দেখে শুনে দামাদামি করে সঠিক মানের জিনিসটা কত কম দামে কেনা যায় সেই চেষ্টাই থাকে। তাহলে বায়ারদের দোষ কি?
আমাদের লিড টাইম বেশি, আমাদের ইমেজ সংকট, আমাদের রাস্তাঘাট ভালোনা, আমাদের এয়ারপোর্টে সমস্যা, সি পোর্টে সমস্যা, টেবিলের নিচে ওপরে খরচ, বিনিয়োগ পরিবেশে পিছিয়ে, রানা প্লাজা ধসে পড়ে হাজারো মানুষ মরে, তাজ্রিন ফেশনে পুড়ে মরলো শত শত মানুষ, পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস, হরতাল, স্ট্রাইক, জাঞ্জট, বিদেশিদের বিণোদন নাই, হলি আর্টিজান হামলা ইত্যাদি সকল কিছুর পরও নিশ্চই বায়াররা আমাদের প্রেমে পাগল হয়ে আমাদের সাথে বিজনেস করেনা। আমাদের তুলা নাই, কাপড়ও বেশিরভাগ বিদেশ থেকেই আসে, এক্সেসরিজ বা তার কাচামালো প্রায় বিদেশ থেকেই। তাহলে আমাদের কি আছে যে বায়াররা আমাদের কাছে আসে। আমাদের আছে সস্তা শ্রমিক। তারা সস্তায় শ্রম কিনতেই আসে। সেই জিনিস যদি কেউ আমাদের চেয়ে সস্তা দেয় তাহলে অপশন থাকলে নিশ্চিতভাবেই তারা সস্তা অপশনটা বেছে নিবে। আপনি আমি হলেও তো তাই করতাম। বায়ারের সাথে চুক্তি করে কি আমি কারখানা করেছি? বায়ার কি আমাকে কারখানা করিয়েছে। বাসার পাশে দোকান দিয়েছে বলেই কি আমাকে সেই দোকান থেকেই আমাকে পন্য ক্রয় করতে হবে? আমাকে আকৃষ্ট করতে পারলে আমি অবশ্যই বাসার পাশের দোকান থেকেই কিনবো, তবে বেশি টাকা দিয়ে নয়।
তাহলে সুযোগ পেলেই তাদের গালাগালি কেন করি? যখন বেতন ৯৫০ টাকা ছিল, তখন তো আমরাও সুযোগ নিয়েছি, এখনকার চেয়েও বেশি সিএম এ কাজ করেছি। দিন বদলেছে, বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের কোথায় গ্যাপ আছে সেটা খুজে বের করে, নিজদের যোগ্যতা দিয়েই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। আশপাশের দেশের ষড়যন্ত্র ফরমুলা নিয়ে সময় নষ্ট না করে নিজেদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অনিয়ম, সিস্টেম সস খুজে বের করে আমাদের কম্পিটিটিভ হতে হবে।
ক্রেতার চাহিদা পুরন করেই আমাদের ব্যবসায় টিকে থাকতে হবে। তবে দরকষাকষি তো করতেই হবে। দর কষাকষিতে জিতেই আমাদের সার্থ রক্ষা করতে হবে।
আব্দুল আলিম
সোশ্যাল একাউন্টিবিলিটি প্রফেশনাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন