শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নীতিমালা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আনন্দের সাথে তার কর্মরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের জন্য একটি শাস্থিমূলক নীতিমালা ঘোষনা করছে। একজন কর্মী যখনই কোম্পানীর সাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বা কোম্পানীর সাথে কাজে চুক্তিবদ্ধ হয়, তখন থেকে তাকে কোম্পানীর প্রতি এবং তার কাজের প্রতি হতে হবে অনুগত এবং কোম্পানীর লক্ষ পূরনে হতে হবে বদ্ধপরিকর। উদ্দেশ্য/লক্ষ্য কোন কর্মীকে শাস্তি প্রদানই এই নীতিমালার মুখ্য উদ্দেশ্য নয় বরং একজন কর্মীর কাজের উন্নয়ন বৃদ্ধি এবং সে মোতাবেক পেষনা দানই হচ্ছে এই নীতিমালার উদ্দেশ্য। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা একজন কর্মীর আচরনকে সংযত পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করে এবং সম্ভাব্য শিক্ষা প্রদান করে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিম্নলিখিত ধাপ সমূহ অনুসরন করবে। ছোট অপরাধ কোন কর্মীর কাজের মান যদি আশানুরূপ না হয়, তবে তার রিপোর্টিং উর্দ্ধতন কর্মকর্তা তার সাথে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন এবং স্বল্প সময়ে তার কাজের মান বৃদ্ধির তাগিদ এবং প্রেষনা দান করবেন। যদি এখানে প্রমাণ বা দলিল দস্তাবেজের প্রয়োজন পড়ে তবে তার উদ্ধর্তন কর্মকর্তা বিভাগীয় প্রধানের সাথে যোগাযোগ করে কর্মীর বিরুদ্ধে একটি পরামর্শপত্র ইস্যু করতে পারেন। উক্ত পরামর্শ পত্রে কর্মী কিভাবে তার কাজের মান সন্তোষজনক পর্যায়ে নিতে পারেন তা উল্লেখ থাকবে। ছোট অপরাধ দমনের প্রক্রিয়া অসদাচরন প্রমানিত হওয়ার পর তা যদি চাকুরীচ্যুতির পর্যায়ে না পড়ে, তাহলে নিম্নলিখিত শাস্তিমুলক ব্যবস্থা প্রদান করা হবে। একজন কর্মীর প্রথম অপরাধের জন্য তাকে একটি সতর্কীকরণ পত্র প্রদান করা হবে যেখানে অপরাধ উল্লেখ পূর্বক একটি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করার তাগিদ দেয়া হবে। যদি নিদিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও সে তার অপরাধ সংশোধন করতে ব্যর্থ হয় তবে তাকে একটি “চুড়ান্ত সতর্কীকরণ পত্র” প্রদান করা হবে। “চুড়ান্ত সতর্কীকরণ পত্র” গ্রহনের পর যদি অপরাধ পুনঃঘটিত হয় তবে তাকে নিয়ম অনুযায়ী চাকুরীচ্যুত করা যাবে। সাধারনতঃ সেকশন বা বিভাগীয় প্রধানই তার অধঃস্থনদের সতর্কীকরন পত্র প্রদান করতে পারেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান প্রয়োজনীয় প্রমান সাপেক্ষে এই পত্র ইস্যু করতে পারেন। কটি কর্মীই যে কোন সিদ্বান্ত মনঃপুত না হলে লিখিত আকারে তা জানানোর অধিকার আছে, তবে এ সিদ্বান্ত পত্র প্রাপ্তির নুন্যতম ০৩ (তিন) দিনের মধ্যে ইস্যু কারীর নিকট প্রদান করতে হবে। প্রত্যেক কর্মীর সতর্কীকরণ পত্র তার ব্যক্তিগত নথিতে সংরক্ষিত হবে এবং বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টের সময় এর নৈতিবাচক প্রভাব পড়বে। অসদাচরন ইচ্ছাকৃত ভাবে অবাধ্যতা, উর্দ্ধতনের সাথে অশালীন ব্যবহার। কোম্পানীর ব্যবসা এবং সম্পত্তি চুরি, অসৎভাবে আতœসাৎ এবং অসততা প্রদর্শন। কোন অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে ঘুষ গ্রহন বা প্রদান। অভ্যাসগত দেরীতে উপস্থিত এবং অনুনোমোদিত ছুটি। কোম্পানীর স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে ধ্বংশ করা। উর্দ্বতন কর্মকর্তা, সহকর্মী অথবা অধঃনস্থদের হুমকী প্রদান, গালিগালাজ এবং অপমান। কোম্পানীর কোন গোপনীয় তথ্য কোন অপরিচিত ব্যক্তির নিকট ফাঁস করা। কারখানার অভ্যন্তরে আর্থিক লেনদেন সংঘটন করা। কারখানার অভ্যন্তরে অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতি। কারখানার অভ্যন্তরে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন পুস্তিকা, পোষ্টার, ব্যানার ইত্যাদি প্রদর্র্শন বা প্রদানের ব্যবস্থা করা। কারখানার অভ্যন্তরে মদ্য পান করে মদ্যপ অবস্থায় অশালীন আচরণ করা। কারখানার অভ্যন্তরে এমন ধরনের মিছিল বা সমাবেশ ঘটানো যা উৎপাদন কার্যের ব্যাঘাত ঘটায়। কোম্পানীর আচরণ নীতিমালা লঙ্ঘন। আবেদন পত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে কোন ধরনের মিটিং করা। অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ। জুয়া খেলা এবং নিদ্রা যাওয়া। ছুটি ব্যতীত ১০ (দশ) দিনের অধিক অনুপস্থিত থাকা। অভ্যাসগত ভাবে ক্রমাগত কাজে ফাঁকি দেওয়া। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন আদেশ ও নির্দেশ ভঙ্গ করা। আদালত দ্বারা সাজা প্রাপ্ত হলে।
ধাপঃ শাস্তি উপরোক্ত তালিকা অনুযায়ী ক্ষমতাবলে মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রধান নিম্নলিখিত শাস্তি প্রদান করতে পারে। মৌখিক সতর্কীকরণ লিখিত সতর্কীকরণ অনুন্য ০৭ (সাত) দিনের জন্য সাময়িক কর্মচ্যুতি চাকুরীচ্যুতি অসদাচরনের জন্য শাস্তির ধাপ সমূহ অপরাধ প্রমানিত হলে অপরাধীকে চাকুরীচ্যুতি করা যেতে পারে। তবে নিম্নলিখিত ধাপ সমুহ অনুসরন করতে হবে। অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্যই লিখিত আকারে হতে হবে। তাকে ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নুন্যতম ০৩ (তিন) দিন প্রদান করতে হবে। ব্যাখ্যা বিবেচনা করা। তদন্ত নোটিশ তৈরী। যথাযথ আভ্যন্তরীন তদন্ত। তদন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য পত্র প্রেরণ। শাস্তি প্রদান। পুঙ্খানুপুঙ্খানুরুপে অনুসন্ধান করা ঘটনা / অসদাচারন সংঘঠিত হওয়ার সাথে সাথে তা লিখিত আকারে মানব সম্পদ প্রধানের নিকট জানাতে হবে এবং একটি কপি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট প্রেরণ করতে হবে। একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা প্রয়োজনে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করবেন। ব্যাখ্যা প্রদান প্রত্যেকটি কর্মীই উচিৎ কোম্পানীর নীতিমালা মোতাবেক তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য মেনে চলা। তারপরেও যদি কোন কর্মী কোন অসদাচারন করেন তবে মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান তাকে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করবেন। কারন দর্শানো নোটিশ উল্লেখ করা থাকবে “কেন আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না”। কারন দর্শানো নোটিশে অপরাধ, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় এবং কারন দর্শানোর সর্বশেষ সময় উল্লেখ থাকবে। তদন্তকালীন অপসারন অভিযুক্ত কর্মীকে সাময়িক কর্মচ্যুত করা যায় তবে তা সর্বোচ্চ ০২ (দুই) মাসের বেশী হবে না। তদন্তকালীন অপসারনের সময় কোন কর্মী পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত ঠিকানা পরিবর্তন করবেন না বা পরিবর্তন করলেও তা প্রশাসন বিভাগকে অবগত করবেন। তদন্তকালীন অপসারনের সময় একজন অভিযুক্ত কর্মী তার মাসিক মোট মজুরীর অর্ধেক প্রাপ্য হবেন। অপসারনের আদেশ পত্র প্রাপ্তির সাথে সাথে কার্যকর হবে। তদন্ত রিপোর্টে যদি অভিযুক্ত কর্মী নির্দোষ প্রমানিত হয় তবে পূর্বের জমাকৃত অর্ধেক অর্থ পুরো প্রদান করতে হবে। যদি অভিযোগ প্রমানিত হয় তাহলে যে শাস্তি প্রদান করা হবে তা লিখিত আকারে কর্মীকে প্রদান করা হবে। কার্য সম্পাদন যদি অভিযোগ প্রমানিত হয় তাহলে যে শাস্তি প্রদান করা হবে, তা লিখিত আকারে কর্মীকে জানাতে হবে।
যদি কোন অভিযুক্ত কর্মী নোটিশ, ব্যাখ্যা প্রদান পত্র, কারণ দর্শানো পত্র, সতর্কীকরণ পত্র ইত্যাদি গ্রহন করতে রাজী না হয় তবে উক্ত পত্র তার স্থায়ী ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে এবং নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে। আপিল প্রত্যেক কর্মী যার উপরে শাস্তি আরোপ করা হয়েছে, তার বিচার পূর্ন বিবেচনা করার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা হয়েছে। প্রত্যেকটি পূর্নঃ বিবেচনার আবেদন মানব সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে প্ররণ করতে হবে। একজন কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তির রায় ঘোষনার ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বিচার পূর্ন বিবেচনার জন্য প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। উপরোক্ত নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যখন ইচ্ছে করবেন, তখনই এই নীতিমালার পরিবর্তন করতে পারবেন। সকলকে উক্ত নীতিমালা অনুসরন করার জন্য বলা হলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন