এই শিল্পে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করে যেতে পারলে নিজেকে সার্থক মনে করবো
পোশাকশিল্পে আরো এগিয়ে যেতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির বিকল্প নেই:
এটিএম মাহবুবুল আলম চৌধুরী
এটিএম মাহবুবুল আলম চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী দেশ হওয়ার পেছনে যে সকল বড় বড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে তাদের মধ্যে মাস্কো গ্রুপ অন্যতম। নিট গার্মেন্টস রপ্তানিতে ২০০১ সাল থেকে মাস্কো গ্রুপ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত মেশিনারিজের সমন্বয়ে স্থাপিত মাস্কোর ভার্টিকেল সেটআপ নিট কম্পোজিট ফ্যাক্টরি বাংলাদেশের অহংকার। আর এই কারখানা পরিচালনার পেছনে রয়েছেন একদল গতিশীল, চৌকস, বুদ্ধিদীপ্ত ও দক্ষ করপোরেট মানুষ। যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এটিএম মাহবুবুল আলম চৌধুরী যিনি মাহবুব মিল্টন নামেও ব্যাপক পরিচিত। তিনি মাস্কো গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৭ সালে যখন তিনি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন তখন মাস্কো গ্রুপের বিজনেস টার্নওভার ছিল বছরে ১৭ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এর টার্নওভার ১৬০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এর আগে তিনি বেক্সিমকো এবং ইন্টারস্টফ-এ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি তিনি দ্যা অ্যাপারেল নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ, মানবসম্পদ পরিস্থিতি, সাসটেইনেবিলিটি, এই সেক্টরের চ্যালেঞ্জসমূহ, নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত তুলে ধরেছেন। পাঠকদের জন্য নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্যা অ্যাপারেল নিউজের নির্বাহী সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল জুয়েল।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী দেশ। এ দেশের পোশাক রপ্তানির যে সম্ভাবনা তা আগামী ২০ বছর পর্যন্ত কেমন থাকবে বলে আপনি মনে করেন?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: ধন্যবাদ। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন আশাবাদী মানুষ। দ্বিতীয়ত. বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে আমি প্রচুর সম্ভাবনা দেখি। সম্ভাবনা দেখি এ জন্য যে, অ্যাপারেল সেক্টরে আমরা এখন রপ্তানি করি প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিশ্বব্যাপী অ্যাপারেল মার্কেটের সাইজটা হলো ৫৬০ বিলিয়ন ডলারের। ২০২০ সালের মধ্যে এই সাইজটা চলে যাওয়ার কথা ৬৫০ বিলিয়ন ডলারে।
সুতরাং আমরা যদি ৩০ বিলিয়ন আর ৬৫০ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্যটা দেখি, তাহলে দেখবো এখানে ‘হিউজ গ্যাপ’ আছে। যেহেতু গ্যাপটা অনেক বেশি সেজন্য এখানে অপরচুনিটিও অনেক বেশি। অপরচুনিটিটা কেন বেশি? আমরা অ্যাপারেলের বিজনেসটা যদি দেখি তাহলে দেখবো- আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো চীন। কিন্তু চীনে যে পোশাকের ব্যবসাটা আছে এটাকে তারা এখন খুব একটা প্রধান শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে না। কারণ সেখানে ওয়ার্কারের মজুরিটা অনেক বেড়ে গেছে। সেই কারণে তাদের মার্কেট শেয়ারটা অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। তাই বাংলাদেশের এখানে একটা সুযোগ আছে। আমাদের সুযোগ আছে এই স্কোপটা গ্রহণ করার। পাশাপাশি আমাদের যে শিল্পপতিরা আছেন তারাও অনেক বেশি মরিয়া (ডেসপারেট) এই মার্কেটটা নেয়ার জন্য। এখন আজকে আমাদের যে ক্যাপাবিলিটি ডেভেলপ করেছে এটাকে যদি ম্যাটারিয়ালাইজ করতে পারি, তাহলে আমি মনে করি যে আগামী ২০ বছরে আমরা এই সেক্টরকে একটা ভালো লেভেলে নিয়ে যেতে পারবো।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: আপনি খুবই আশাবাদী কথাই বললেন। যেমনটা আমরাও দেখতে পাচ্ছি। তারপরও এই সেক্টরের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী দেখতে পাচ্ছেন?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: ওয়েল, এখানে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। আমরা যদি রিপোর্ট আকারে কথাগুলো বলি তাহলে বলবো আমেরিকার ম্যাকেনজি অ্যান্ড কোম্পানি একটি রিপোর্ট করেছে। সেখানে তারা বাংলাদেশের পোশাকখাতের চারটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছে। এগুলো হলো- ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার (অবকাঠামো), পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি (রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা), কর্মীদের দক্ষতা (স্কিল) এবং বন্দরের সক্ষমতা।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, বড় চ্যালেঞ্জের জায়গাটা হলো হিউম্যান রিসোর্স (মানবসম্পদ)। বিজিএমইএ থেকে যে লক্ষ্যমাত্রাটা নির্ধারণ করা হয়েছিল, ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করার, আমরা যদি ৪০ বিলিয়ন ডলারেও যেতে চাই তাহলে আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জের জায়গাটা হলো হিউম্যান রিসোর্সেস। বিভিন্ন লেভেলে আমাদের প্রচুর দক্ষ মানবসম্পদ দরকার। ওয়ার্কার থেকে শুরু করে কোম্পানির হেড পর্যন্ত প্রচুর স্কিলড ম্যানপাওয়ার দরকার। আমাদের এই জনশক্তির প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। দ্বিতীয়ত. অবকাঠামো খাতে আমাদের অনেক গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আমরা যদি অবকাঠামো (ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার) খাতে গুরুত্ব দিতে না পারি, তাহলে আজকে ক্রেতারা (বায়ার) আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো দিচ্ছে যেমন- শর্টার লিড টাইম। আমরা প্রোডাকশন থেকে একটা লেভেলে চেষ্টা করবো যে হিউম্যান রিসোর্স স্কিল বাড়িয়ে, ম্যানেজমেন্ট স্কিল বাড়িয়ে শর্টার লিডটাইম করার জন্য। কিন্তু পাশাপাশি যদি ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার আমাদের সাপোর্ট করে, তাহলে লিডটাইমটা আমরা অনেক বেশি কমাতে পারবো। বড় বড় কোম্পানিগুলো এখন কিন্তু ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের পণ্যগুলো ডেলিভারি করিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। অনেক কোম্পানি ডিজাইন থেকে শুরু করে সেলফিং পর্যন্ত মাত্র ১২ সপ্তাহের মধ্যে তাদের পণ্যগুলো নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সেই কারণে অবকাঠামো আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বন্দরের সক্ষমতাও অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি আবারো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবো মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: অনেক ক্যারিয়ার থাকতে আপনি কেন অ্যাপারেল সেক্টরকে বেছে নিলেন? যে সেক্টরটি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদ-। কার উৎসাহ ছিল এবং এখন কেমন উপভোগ করছেন?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: ওয়েল, আমি বলবো যে একটা ‘ফানি ওয়ে’তে আমি আমার পড়াশোনাকে সিলেক্ট করি। আমি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। আমার কখনো স্বপ্ন ছিল না যে, আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হবো। যখন টেক্সটাইলে চান্স পাই, আমি আমার চাচার সাথে দেখা করি যে, আমি আসলে কোন সেক্টরে পড়াশোনাটা করবো। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানেও ভর্তির সুযোগ পাই। আমার চাচা আমাকে পরামর্শ দিলেন, তুমি এমন একটা জায়গায় পড়াশোনা করো যেখানে তুমি লিড দিতে পারবে। অর্থাৎ ওনার কথাটা ছিল যেখানে তুমি প্রধান হতে পারবে, সেখানেই তুমি তোমার পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ার সিলেক্ট করবে। সেই হিসেবেই আমি আসলে টেক্সটাইলে আসি। তখন ভাবতে পারিনি যে, রপ্তানিতে এতো বড় কন্ট্রিবিউশন (৮৩%) এই সেক্টর থেকে হবে। আমার আগ্রহ ছিল অর্থনীতিবিদ হবো। যদিও বাবার ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হই। যাহোক শেষে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হলাম।
টেক্সটাইল সেক্টরে আসার পর দেখলাম এখানে প্রচুর চাকরির সুযোগ আছে এবং এই সেক্টরটা আস্তে আস্তে অগ্রসর হচ্ছে। টেক্সটাইলে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর আমার ক্যারিয়ারটা শুরু হয় মূলত বেক্সিমকো টেক্সটাইলে। সেখানে আমি অনেক বছর ছিলাম। এরপর আমি ‘ইন্টারস্টফ অ্যাপারেল লি.’-এ জেনারেল ম্যানেজার-প্রোডাকশন হিসেবে ছিলাম। এরপর বর্তমান কোম্পানি মাসকো গ্রুপের সাথে বিগত ১১ বছর ধরে আছি এই কোম্পানির হেড হিসেবে। যদি বলেন কেমন এনজয় করছি, তাহলে বলবো এতো বেশি ভালো লাগে যে প্রতিদিনই আমরা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ পাই। ‘ইট্স নট অ্যা মনোটোনাস সেক্টর’। একঘেঁয়েমি নেই। যেহেতু নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ পাই সেগুলো মোকাবেলা করে সামনের দিকে যাওয়ার যে অপরচুনিটিগুলো আছে সেটাকে খুব এনজয় করছি।
এই সেক্টরে অনেক বেশি সুযোগ আছে। অনেক মেধাবী ছেলেরা এই সেক্টরে অলরেডি আছে। আরো মেধাবীদের আসা দরকার। সেক্টরটাকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: রোবটিক্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রচলন সারা বিশ্বেই তৈরি পোশাকশিল্পে শুরু হয়েছে। এর ফলে কারখানাগুলোতে মানব কর্মীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটা (আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স) আসলে ওভাবে শুরু হয়নি বাংলাদেশে। যতো কাস্টমারের (বায়ার) সাথে আমরা কাজ করি অথবা বিশ্বে যতো কাস্টমার আছে তার ৭৫% কাস্টমার আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সে বিনিয়োগ করছে এটা ঠিক। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। শুধু চীনে দুয়েকটি প্রকল্প ডাইরেক্ট আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স দিয়ে শুরু করেছে। আমাদের এখানে শুরু হয়নি। তবে বাংলাদেশে ব্যাপক অটোমেশন হচ্ছে। এটা হচ্ছে মানুষের ওপর নির্ভরশীলতা যাতে কিছুটা কমে। এসব অটোমেশন হচ্ছে কস্ট ইফেক্টিভ করার জন্য, টিকে থাকার জন্য, কম্পিটিটিভ হওয়ার জন্য। কিন্তু এআই-এর ওই জায়গাটায় আমাদের এখনো শুরু হয়নি। তবে বায়াররা এই খাতে বিনিয়োগ করছে তাদের স্বার্থে। তাদের ম্যানপাওয়ারটা যাতে কমানো যায়, যেহেতু সেখানে কর্মীর মজুরি অনেক বেশি তাই তাদের লংটার্ম একটা গোল আছে।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: প্রসঙ্গক্রমে, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং অটোমেশনের মধ্যে পার্থক্যটা যদি বুঝিয়ে বলতেন।
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: এআই হলো আমরা যদি খুব সাদামাটাভাবে বলি, আমাদের দেশে কিছুদিন আগে সোফিয়া নামে একটি রোবট এসেছিল। সোফিয়াকে যে প্রশ্ন করা হয়েছে সে তার উত্তর দিয়েছে। সফটওয়্যারটা এমনভাবে ডেভেলপ করা হয়েছিল যে, এটি নিজ থেকেই কথা বলতে পারবে। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। আরেকটি উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন ধরুন, আপনি একটি দোকানে গেলেন। সেখানে কেনাকাটার ব্যাপারে, পণ্য পছন্দ করার বিষয়ে কারো সাথে কথা বলতে চান, তখন রোবট বা এআইয়ের সাথে আপনি ইন্টার-অ্যাকটিভ কথা বললেন। সেটাই হলো এআই। এছাড়া রোবট দিয়ে কিছু অপারেশন হচ্ছে, কোনো ম্যাটারিয়াল এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়া যাচ্ছে। এটা হলো রোবটিক্স পার্ট।
আর অটোমেশন হলো যে সমস্ত কাজে হিউম্যান এফোর্টকে কমানোর জন্য যে মেকানিক্যাল বা ইলেকট্রনিক সাহায্য নেয়া হয় সেটাই হলো অটোমেশন। সে ধরনের অটোমেশন আমাদের এখানে অনেক আছে। যেমন- আমরা এক সময় স্প্রেডিং করতাম ম্যানুয়ালি দশ থেকে বারোজন মানুষ দিয়ে। এখন আমরা মেশিন দিয়ে করছি যেখানে দুজন মানুষ দিয়েই করা যাচ্ছে। পৃথিবীটা হলো গতিশীল। এখানে টিকে থাকতে হলে আপনাকে এ ধরনের অটোমেশনে যেতেই হবে।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: বাংলাদেশের নিটিং সেক্টরের সম্ভাবনাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? প্রযুক্তি ও অটোমেশন যেভাবে এই সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে সে সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: ও.কে.। আমরা যদি অ্যাপারেল ও টেক্সটাইল সেক্টরে ওভারঅল গ্রোথ করতে চাই, তাহলে নিটিং সেক্টরে আমাদের গ্রোথ হতেই হবে। কিন্তু নিটিং সেক্টরটাকে যদি আমরা আলাদাভাবে বিবেচনা করি তাহলে বলবো, আমরা এখন পর্যন্ত নিটিং সেক্টরে শুধু বেসিক কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছি। আমাদের এখানে অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রোডাক্ট করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। আমরা পলিয়েস্টার বেইজড, পলিয়ামাইড বেইজড অথবা লুজনিট বেইজড স্ট্রাকচারের কাজ খুব কম করা হয়। অবশ্য এর জন্য র-ম্যাটারিয়ালের ক্রাইসিসও দায়ী। পাশাপাশি অবকাঠামোর সংকটও আছে। যেমন- আমরা একটি সেগমেন্টে টোটালি কোনো কাজ করিনি- জ্যাকার্ড ও সেমি-জ্যাকার্ডে। এখানে আমার আলাদা একটা পারসপেকটিভ আছে। সেটা হলো- আমাদের নিটিং সেক্টরের কালচারটা এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে কম্পোজিট কালচারটা আমাদের মাঝে তৈরি হয়েছে। এর ফলে যেটা হয়েছে আমি যদি নিটিংকে কমপ্লিটলি একটা বিজনেস হাউস হিসেবে চিন্তা করি তাহলে দেখবো সেখানে ৬৫% থেকে ৭০% এর বেশি এফিসিয়েন্টলি চালাতে পারি না। কারণ নিটিং মেশিনে বিভিন্ন ডায়ামিটারের কাপড় প্রয়োজন হয়; বিভিন্ন ধরনের গেজের দরকার হয়; অনেকগুলো সেটিং প্যারামিটার আছে। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে দেখা যায় যে সর্বোচ্চ ৭০% দক্ষতার সাথে (এফিসিয়েন্সি) আমরা চালাতে পারি। অন্যান্য দেশের কালচারগুলো কী? সেখানে হলো- তারা নিটিংয়ে ইনডিপেনডেন্ট কোম্পানি হিসেবে বসে। তারা স্পেসিফিক কিছু মেশিন নিয়ে বসে। অন্যরা তাদের ওখান থেকে কাজগুলো করিয়ে আনে। সে সমস্ত ফ্যাক্টরিগুলোতে এফিসিয়েন্সি লেভেল ৯০%-৯৫% অথবা আমি যদি এটাকে অন্যভাবে বলি যে ‘ইউটিলাইজেশন পারসেনটেজ অব দ্যা মেশিন ইজ ভেরি হাই দ্যান আওয়ার মেশিনস’। যার ফলে নিটিং খাতে যখন আমরা নতুন করে ইনভেস্ট করতে যাই আমরা দেখি যে, এটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং প্রফিটেবল ব্যবসা হয় না। সে কারণে নিটিং আমাদের নেসেসিটির জন্য কিছুটা গ্রোথ করছে। কিন্তু বিজনেসের কারণে অনেক বেশি গ্রোথ হয়নি। আজকে যদি জ্যাকার্ডের কথা বলি, সেমি-জ্যাকার্ডের কথা বলি, স্পেশাল নিটিং মেশিনের কথা বলি, আমরা যখন দেখবো যে এটা ১০% থেকে ২০% বা ৩০% এর বেশি চালাতে পারবো না, তখন এই মেশিনটাকে ফিজিবল করাটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আজকে যদি বাংলাদেশে এমন একটা ‘হাব’ তৈরি করা যায় যে, এখানে শুধু সেমি-জ্যাকার্ডের মেশিনগুলো পাওয়া যাবে। তারা শুধু সেমি-জ্যাকার্ড করবে বা জ্যাকার্ড করবে। তখন সব কাস্টমার ওখানে যাবে। তাহলে তার ‘ইউটিলাইজেশন অব দ্যা মেশিন’ অনেক বেশি হবে। সেক্ষেত্রে আমি বলবো যে, এটা একটা প্রফিটেবল ভেঞ্চার বা বিজনেস হতে পার। কিন্তু আমরা যারা কম্পোজিট বিজনেস করি তাদের জন্য ইনডিভিজুয়াল স্পেশাল মেশিনগুলো এনে এটাকে প্রফিটেবল করা খুবই কষ্টাসাধ্য হয়। তবে ওভারঅল প্রতি বছরই যেহেতু নিটের ব্যবসাটা আমাদের ৮%-৯% হারে বাড়ছে, সেই হিসাবে নিটিংটাও একইহারে বাড়বে বলে আমরা জেনারেলি এক্সপেক্ট করি। তবে আমি মনে করি, এটাকে আরো এক্সপান্ড করার জন্য একটি ‘হাব’ তৈরি করতে পারলে যেখানে স্পেশাল মেশিনগুলো থাকবে এবং তারা সবার জন্য কমন কাজটি করবে। এরকম করতে পারলে এর অপরচুনিটিটা অনেক বেশি হবে বলে আমি মনে করি।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: ওভেনের ভবিষ্যৎটা কী?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: তিনটি সেক্টর অর্থাৎ নিট, ডেনিম এবং ওভেনকে যদি আলাদা করি, তাহলে বলবো যে নিটে আমরা অলমোস্ট সেলফ সাফিসিয়েন্ট। ডেনিমের কথা বললে বলবো বাংলাদেশ এখন ডেনিমের জন্য সবচেয়ে ফোকাল কান্ট্রি হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কিন্তু ওভেনে স্পেশালাইজড ফেব্রিকের জন্য অন্যদেশের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা এখনো অনেক বেশি। এজন্য আমাদের অনেক বেশি ভার্টিক্যাল সেটআপ বিশেষ করে ফেব্রিক মিল স্থাপন করতে হবে। উইভিং অনেক বেশি দরকার। গার্মেন্টসে যেটা আছে সেটার গ্রোথ একটু একটু করে হচ্ছে। কিন্তু ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজটা অনেক বেশি শক্তিশালী না হওয়ার জন্য সেটা ওভাবে হচ্ছে না। তবে ওভেনে আমার যেটা মনে হয়, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের জায়গটা হলো- হিউম্যান রিসোর্স ক্রাইসিসটা অনেক বড়। সে কারণে অথবা প্রাইসে আমরা এখনো পর্যন্ত সে রকম কমপিটিটিভ হতে পরিনি এবং প্রত্যাশিত লেভেলে গ্রোথটাও হয়নি। তবে আমাদের ডেনিম এবং নিটের ভবিষ্যৎটা আমি বলবো যে, অনেক বেশি উজ্জ্বল ওভেনের তুলনায়। তবে অনেকেই ওভেনে নতুন ইনভেস্টমেন্টে যাচ্ছেন। এর ফলে এই খাতও হয়তো একসময় আরো সমৃদ্ধ হবে।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: আমরা বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারী দেশ। পোশাক তৈরির প্রধান উপাদান হলো বস্ত্র। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে বস্ত্রের যে চাহিদা আছে তার জোগান আমাদের বস্ত্রশিল্প দিতে পারছে কিনা? বস্ত্রশিল্পের যতোটুকু বিকশিত হওয়ার কথা ছিল ততোটা হতে পেরেছে কিনা?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: দেখুন, আমরা একটা টার্গেট সেট করেছি যে ২০২১ সালে তৈরি পোশাকখাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করবো। এটা বাংলাদেশের একটা স্বপ্ন। আমি এই স্বপ্নটাকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই এজন্য যে, মানুষের যদি স্বপ্ন না থাকে, লক্ষ্যমাত্রা না থাকে তাহলে তো সে অগ্রসর হতে পারবে না। আমাদের এই লক্ষ্যমাত্রার কতটুকু অর্জন হবে তা বলতে পারবো না। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল বলেই আজকে ৩০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে বলতে পারি যে, ২০ বিলিয়ন ডলারের গ্যাপ আছে। টার্গেট না থাকলে এটা বলতে পারতাম না। কিন্তু ৫০ বিলিয়ন ডলারের টার্গেটটা যখন আমরা নির্ধারণ করি, এটার পেছনে যে হোমওয়ার্কটা করা দরকার ছিল, যে সমস্ত অ্যাকশন নেয়ার দরকার ছিল সেটা আমরা পুরোপুরিভাবে নিতে পারিনি। যেমন- শিল্প পরিচালনার জন্য আমাদের গ্যাসের সংকট রয়েছে। যদিও ২০১৮ সালে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলএনজি আমদানির বিষয়টি আমাদের জন্য সুখবর হিসেবে এসেছে। সেটা চাইলেও হয়তো আমরা আগে করতে পারতাম না। এলএনজি আমদানির বিষয়টি যদি ২০১৮ সালে না হয়ে ২০১৫ সালে হতো তাহলে আজকে হয়তো রপ্তানি ৩০ থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে চলে যেতো। কারণ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজটা আমাদের যেভাবে হওয়ার কথা ছিল সেভাবে করতে পারিনি। এটা হলো প্রথমত। দ্বিতীয়ত. আমাদের অন্যান্য সেক্টরে গ্রোথ হচ্ছে। গত এক দশক ধরে আমাদের ৮ থেকে ৯ শতাংশ স্বাভাবিক গ্রোথ হচ্ছে। এ বছরেও আমাদের ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে গত বছর প্রবৃদ্ধি একটু মন্থর ছিল। এই বছর আমাদের ৮-৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করি।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: যে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম যে, বস্ত্রের উৎপাদনটা আমরা ওইভাবে করতে পারছি কিনা, স্থানীয় চহিদা মিটাতে পারছি কিনা?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: এই যেটা বললাম, আমি যদি নিট সেক্টরের কথা বলি তাহলে বলবো, এই খাতে ৯০-৯৫ শতাংশ কাপড়ের চাহিদা আমরা মিটাতে পারছি। ডেনিমের কথা যদি বলি, ডেনিম কাপড়ের বড় একটা সাপোর্ট বাংলাদেশ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ওভেনে আমরা অনেকটা পেছনে। ওভেন কাপড় উৎপাদনে যে পরিমাণ গ্রোথ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বাকি দুটি সেক্টরে কাপড়ের চাহিদার বড় একটা অংশ আমরা নিজস্ব সোর্স থেকে সাপ্লাই দিতে পারছি। পাশাপাশি ইয়ার্নের ৬০-৭০ শতাংশ বাংলাদেশের ভেতর থেকেই আমরা জোগান দিতে পারছি।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: কোম্পানির মালিক বা টপ ম্যানেজমেন্ট প্রায়ই বলে থাকেন যে, দক্ষ মানবসম্পদের একটি সংকট তারা মোকাবেলা করে চলেছেন। এটা কেন এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী বলে আপনি মনে করেন?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: আমি আপনার এ কথার সঙ্গে একমত। আমি একটু আগেই বলছিলাম যে, আমাদের যতো চ্যালেঞ্জ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্কিলড হিউম্যান রিসোর্সের ঘাটতি। এই সমস্যা শুধু ওয়ার্কার লেভেলে নয়, উপর থেকে শুরু করে সব লেভেলেই দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। শুধু আমাদের দেশে নয় সব দেশেই এই ধরনের সেক্টরের জন্য দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। তবে আমাদের দেশে সংকটটা একটু বেশি। এই সংকট থেকে উত্তরণের সবচেয়ে বড় পথ হলো- আজকে আমরা অনেক জায়গায় ইনভেস্ট করছি। আমাদের ১৭৫টি গ্রিন ফ্যাক্টরি হচ্ছে। পৃথিবীর ১১২টি গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ৭টির অবস্থান বাংলাদেশে। এ বিষয়গুলো আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই গর্বের। ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা আমাদেরকে এই সম্মানের অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন। তবে আমি আবেদন জানাবো, আজকে আমাদের প্রশিক্ষণের পেছনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার, মানুষ গড়ার জন্য যে অর্থের দরকার তার জন্য আমাদের অবশ্যই একটি বাজেট থাকতে হবে। যা আমরা দক্ষ কর্মী তৈরি করার পেছনে ব্যয় করবো। অনেক সময় একটি প্রশ্ন থাকে যে, ট্রেনিং পাওয়ার পর সে হয়তো অন্য কোথাও চলে যাবে। কিন্তু আমি একান্ত ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, চলে গেলেও তারা বাংলাদেশের মধ্যেই থাকবে। আজকে আমাদের সকল ফ্যাক্টরি মালিকদের দায়িত্ব হলো আমাদেরকে তৈরি করা। দক্ষ মানুষ তৈরির জন্য নির্দিষ্ট একটি বাজেট রাখা এবং এটাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া। কারণ আমাকে যদি প্রপার ট্রেনিং দেয়া যায় তাহলে আমার মেধাকে কাজে লাগিয়ে আমি একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবো। আমাদের ছেলেরা যখন অপারেটর হিসেবে অন্য দেশে যায় তখন তার সিস্টেমের সাথে খাপখাওয়াতে পারে। সে সেখানে হাইলি স্কিল্ড অপারেটর হিসেবে পরিগণিত হয়। এক্সিকিউটিভরাও সেরকম যোগ্যতার পরিচয় রাখতে পারেন। কিন্তু আমাদের এখানে পারেন না। কারণ আমরা দেখেছি বিদেশিরা হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের পেছনে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করে।
আমাদের এখানে বিষয়ভিত্তিক প্রচুর সুনির্দিষ্ট ট্রেনিংয়ের দরকার। মানুষের স্ট্রেন্থ এবং উইকনেসের এরিয়াগুলো খুঁজে বের করতে হবে। উইকনেসের এরিয়াগুলো শনাক্ত করে ওই এরিয়ার ওপর বছরে অনন্ত ৩-৪টি ট্রেনিং করানো যেতে পারে। যাতে করে তার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে দক্ষতার মাত্রাকে বাড়ানো যায়।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে আমরা যতোটা জানতে পেরেছি যে, বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরে মিড-লেভেল ম্যানেজমেন্টে বৈধ/অবৈধভাবে প্রচুর বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। অনেকে পর্যটন ভিসা নিয়ে এসে এখানে ফ্যাক্টরিগুলোতে কাজ করছেন। তাদের বেতন কঠামোও আমাদের স্থানীয় কর্মীর তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সিকিউটিভ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিইএ) নামে একটি সংগঠন আছে যারা বিদেশি কর্মী নিয়োগ না দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন।
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: আমার ধারণাটা অন্য। এখানে দেশি কিংবা বিদেশি, এভাবে আমি আলাদা করতে চাই না। একজন শিল্পপতি যখন তার শিল্প স্থাপন করেন তখন তাকে অনেক বিনিয়োগ করতে হয়। এই বিনিয়োগটা উঠানোর জন্য তিনি চান তার প্রতিষ্ঠানটি দক্ষতার সাথে চলুক। এই দক্ষতার সাথে যদি স্থানীয় জনগণ দিয়ে চালানো যায় তাহলে তাই চালাবেন। আর যদি লোকাল ম্যানপাওয়ার দিয়ে না চলে তাহলে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু আমরা যদি বিদেশিদের কাজের ক্ষেত্রটা ভাগ করে দেখি যে আমাদের কোন কোন এরিয়াতে তারা কাজ করে এবং কোন কোন এরিয়াতে কাজ করে না। আমাদের যে সমস্ত এরিয়াতে বিদেশিরা কাজ করে সেখানে আমাদের শিক্ষিত মানুষকে ট্রেনিং দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে রিপ্লেস করার সুযোগ আদৌ আছে কিনা সেটাও আমরা দেখবো। আজকে যদি মাসকো গ্রুপের কথা বলি তাহলে আমি গর্বের সাথে বলতে পারি আমরা (মাসকো) আজকে বাংলাদেশে তৃতীয় বৃহত্তম বা চতুর্থ বৃহত্তম নিট কম্পোজিট ফ্যাক্টরি। আমাদের কোম্পানিতে একজনও বিদেশি নেই। আমরা কখনো প্রয়োজন অনুভব করিনি যে আমাদের এখানে বিদেশি দরকার আছে। কারণ আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে বা আমাদের কর্মীদের তৈরি করতে যাতে আমরা প্রতিষ্ঠানকে মোটামুটি ভালোভাবে চালাতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, আমার মালিকরা এভাবে কখনো চিন্তা করেননি যে আমাদের এখানে বিদেশিদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু হ্যাঁ। আমরা যদি আজকে একটি ডিজাইন স্টুডিও করতে চাই, একটি নতুন ডিজাইন করতে চাই সেখানে তো আমি ম্যানপাওয়ার পাবো না। সেই ম্যানপাওয়ার আমি কোথা থেকে আনবো। যদি আমার টার্গেট থাকে যে আমি বিদেশি আনবো পাশাপাশি কিছু শিক্ষিত ছেলেকে নিয়ে একটা ব্যাকআপ তৈরি করার চেষ্টা করবো যাতে দুই বছর পর তাকে রিপ্লেস করতে পারে। কিছু কিছু এরিয়া আছে যেখানে আমাদের দেশের যে পরিমাণ শিক্ষিত ছেলেমেয়ের যাওয়ার দরকার ছিল সেই পরিমাণ যায়নি। কিছু কিছু এরিয়া আছে যেখানে আমাদের কমিউনিকেশন স্কিলটা অনেক দুর্বল, বিশেষ করে বায়িং অফিস, মার্চেন্ডাইজিং অফিসে। সেখানে বিদেশিরা কাজ করছে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্টে অনেক বিদেশি কাজ করছে। কারণ সেখানে বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি সংখ্যক প্রফেশনাল লোকজন যাননি। আমি প্রফেশনাল বলতে বুঝাচ্ছি যারা এ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তাদেরকে। যেমন- ওয়াশিং সেকশনে স্থানীয় শিক্ষিত লোকজন যায়নি। এ কারণে ওই সকল স্থানে বিদেশিরা বেশি কাজ করছে। কিন্তু আমি বলবো- যেখানেই বিদেশিরা কাজ করুক না কেন আমাদের যদি লং টার্ম প্ল্যান থাকে যে, আমরা আমাদের স্কিল ডেভেলপ করে ওই জায়গাটা দখল করবো, তাহলে এক সময় বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীলতা একেবারেই কমে যাবে। আবার অনেক সময় হয়তো ওই জিনিসটাও কাজ করে যে একজন বিদেশি আনতে পারলে একটা মনস্তাত্তিক বেনিফিট হয়তো পেতে পারেন- আমি ঠিক জানি না। তবে আমি মনে করি, আমরা যদি ওই সুযোগটা কাউকে না দিই তাহলে কোনো বিদেশি কোনোভাবেই আসতে পারবে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের সেই চিন্তা আছে যে আমরা সেভাবেই কাজ করবো যাতে বিদেশি নিয়োগের দরকার না পড়ে। তবে আমি ঢালাওভাবে সেটা বলবো না যে, বিদেশিরা অপ্রয়োজনীয়।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: আপনি মাস্কো গ্রুপের এক্সকিউটিভ ডিরেক্টর। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজনেস গ্রোথ ও লক্ষ্য সম্পর্কে যদি বলতেন।
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: মাস্কো গ্রুপের সাথে আমার সম্পৃক্ততা ২০০৭ সাল থেকে। আমি যখন এ প্রতিষ্ঠানে জয়েন করার চিন্তা করি আমার চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে ছোট একটা লক্ষ্যমাত্রা (গোল) দিয়েছিলেন। শুনতে ছোট শোনালেও স্বপ্নটা ছিল অনেক বড়। সেটা হলো- যে কোনোভাবে হোক না কেন আমরা বাংলাদেশের একটি এরিয়াতে হলেও প্রথম হতে চাই, নেতৃত্ব দিতে চাই। স্যারের স্বপ্নটা ছিল এ রকম। আমি আমার নিজের মধ্যেও স্বপ্নটা ধারণ করেছি যে আমরা বাংলাদেশে টেক্সটাইল সেক্টরে বিশেষ করে নিট সেক্টরে নেতৃত্ব দেবো। আমি যখন ২০০৭ সালে জয়েন করি তখন আমাদের বিজনেস ছিল ১৭ মিলিয়ন ডলারের। এখন আলহামদুলিল্লাহ্, সকলের সহযোগিতায়; বিশেষ করে ম্যানেজমেন্ট এবং ওয়ার্কার থেকে শুরু করে সব লেভেলের মানুষের সহযোগিতায় এবছর বিজনেস ১৬৩ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে প্রত্যাশা করছি। দীর্ঘমেয়াদে আমাদের স্বপ্ন হলো আমরা কোম্পানিটাকে একটি টেকসই (সাসটেইনেবল) পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। যে কোম্পানিটি সুনামের সাথে প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকবে। আমরা ক্রমাগত প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে নিট সেক্টরে যাতে নেতৃত্ব দিতে পারি সেটিই আমাদের স্বপ্ন।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: আপনার কোম্পানি মাস্কো গ্রুপ আজকে সাফল্যের এই যে শীর্ষ স্থানে পৌঁছেছে এর পেছনে কোন কোন ফ্যাক্টরগুলো কাজ করেছে?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: ফ্যাক্টরগুলো হলো- আপনাকে স্বপ্ন দেখতে হবে এবং স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করার জন্য একটি অ্যাগ্রেসিভ মনোবৃত্তি থাকতে হবে। আপনাকে কিছু টুলস্ ব্যবহার করতে হবে। আধুনিক পড়াশোনায় সেই টুলস্ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। আমরা যে কনসেপ্টের ওপর বিশ্বাস করে প্রতিষ্ঠানটি চালাই তাকে বলা হয় ‘কাইজেন কন্টিনিউয়াল ইমপ্রুভমেন্ট’। আমরা আমাদের কোম্পানিতে আরেকটি কাল্চার শুরু করেছি। সেটা হলো ‘কোম্পানি ওয়াইড অ্যাক্টিভিটিজ’। আমরা যদি এটি চালু রাখতে পারি, কন্টিনিউয়াল গ্রোথ টুলস্ অ্যাপ্লাই করতে পারি এবং এর মাধ্যমে একটি প্রো-অ্যাক্টিভ কাল্চার কোম্পানির মধ্যে গড়ে তোলা যায় তাহলে চমৎকার একটি টিম বিল্ডিং হবে। এই টিম-ই আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তো আমাদের সফলতার পেছনের সিক্রেট যদি বলি তাহলে দেখবেন, আমাদের কোম্পানির স্লোগানের মধ্যেই লেখা আছে ‘বিলিভস ইন সাসটেইনেবল কন্টিনিউয়াস ডেভেলপমেন্ট’। সুতরাং এটি আমাদের মূলমন্ত্র যা আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। এই স্লোগানকে আমরা মনেপ্রাণে ধারণ করি। এই কন্টিনিউয়াল ইমপ্রুভমেন্টের সমস্ত প্রিন্সিপাল আমাদের প্রতিটি বিজনেসের প্রতিটি অপারেশনের ক্ষেত্রে কাজে লাগাই। এটিই হয়তো আমাদেরকে এই পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: আপনি সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে কথা বলছিলেন। আরএমজি সেক্টরে সসটেইনেবিলিটির জন্য আপনার পক্ষ থেকে কী বলার আছে?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: আমি বলবো যে, সাসটেইনেবিলিটি বা টেকসই হওয়ার বিষয়টি দরকার আমাদের নিজেদের স্বার্থে। আমরা শুধু বিজনেস করি তা নয়। আমরা আমাদের সমাজের কাছে, দেশের কাছে, পৃথিবীর কাছে দায়বদ্ধ। এই দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে অনেক অ্যাপ্রোচ আমাদের নিজ উদ্যোগে অবশ্যই নেয়া উচিত। আমাদের কোম্পানি এবং আরো অনেক কোম্পানি তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে কাজ করছে। কারণ এটি নিয়ে কাজ করলে আপনার যেমন দক্ষতা বাড়বে, কাজের পরিবেশও ভালো হবে, খরচও কমে আসবে। তবে কিছু কিছু সাসটেইনেবিলিটি করার জন্য বড় রকমের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। এর ফলে প্রোডাক্টের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। আমরা আমাদের দায়বদ্ধতার জন্য সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে যেমন কাজ করবো তেমনি এর ফলে যে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে সেটা পুষিয়ে দিতে পণ্যের দাম বাড়ানোও একান্তভাবে উচিত বলে আমি মনে করি। অন্যথায় বিশ্বের কাছে, দেশের কাছে, সমাজের কাছে আমাদের যে অঙ্গীকার রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। এক্ষেত্রে পোশাকের দাম বাড়ানো একটি সমাধান হতে পারে। আমাদের কোম্পানিতে আমরা নিজের স্বার্থে, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সাসটেইনেবিলিটি অ্যাপ্রোচগুলো বাস্তবায়ন করি। তবে সাসটেইনেবিলিটির পেছনে বিনিয়োগ করে পণ্যের দাম বেশি না পেলে একসময় মানুষ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে।
দ্যা অ্যাপারেল নিউজ: সাসটেইনেবিলিটির সাথে এনভায়রনমেন্ট, কমপ্লায়েন্সের সম্পর্ক কী?
মাহবুবুল আলম চৌধুরী: আসলে সাসটেইনেবিলিটির কথা বলতে গিয়ে আমরা পরিবেশগত সাসটেইনেবিলিটি বা টেকসই পরিবেশের কথাই বলেছি। যেমন- আমাদের জেনারেটর থেকে কার্বন নির্গত হয়। আমরা ঠিক করেছি যে কার্বনের পরিমাণ কমাবো। এটি করতে চাইলে আমাদের অনেকগুলো অ্যাপ্রোচ থাকতে হবে- যেমন মেশিনারিজে কিছু সেটিং পরিবর্তন করতে হতে পারে, আধুনিকায়ন করতে হতে পারে। আমরা যেটা করেছি আমাদের যে অ্যাক্সস্ট আছে সেটাকে রিসাইকেল করে স্টিম প্রোডিউস করছি। এতে করে অ্যাক্সস্টটা আরেকটি পাওয়ারে কনভার্ট হয়ে যাচ্ছে অথবা আমরা চেষ্টা করছি পানি ব্যবহারটা অনেক কমাতে। কারণ আমাদের পানির স্তর আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাচ্ছে। আমরা এমন কিছু মেশিন এনেছি যেগুলোর বিদ্যুৎ ব্যবহার ৩৫ শতাংশ কম। কিছু কিছু এরিয়াতে আমরা বৃষ্টির পানি ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। কারণ ডায়িং হাউজগুলোতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। সেখানে ব্যবহারের জন্য বৃষ্টির পানিকে আমরা রিসাইকেল করি। আমাদের দুটি প্রিন্ট ফ্যাক্টরি আছে। এই ফ্যাক্টরি দুটির পানি রিসাইকেল করে আমরা ব্যবহার করি। এভাবে আমরা পরিবেশের জন্য সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে কাজ করছি।
© দ্যা অ্যাপারেল নিউজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন