বস্ত্রশিক্ষার সমস্যা
বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ বস্ত্র ও বস্ত্র সংশ্লিষ্ট খাত থেকে এসে থাকে। কিন্তু দেশে বস্ত্র খাতে দক্ষ জনশক্তির যথেষ্ট অভাব রয়েছে । যদিও দেশে ডিগ্রি পর্যায়ে সরকারি ৭টি প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং ডিপ্লোমা পর্যায়ে ৬টি সরকারিসহ প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী পাস করে বের হলেও চাকরি ক্ষেত্রে গিয়ে তারা উপযুক্ত সেবা দিতে পারছে না। তার বিপরীতে আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করতে হচ্ছে।
দক্ষ জনশক্তির অভাবে আমাদের বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আর্ন্তজাতিক মানের সেবা দিতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের বস্ত্রশিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের দেশে একজন মধ্যম মানের বস্ত্র প্রকৌশলীকে বস্ত্রখাতের সকল বিষয় অধ্যয়ন করতে হয়। অর্থাৎ টোটাল টেক্সটাইল। অপর দিকে ভারতসহ অন্যান্য দেশে বস্ত্র শিল্পের যে কোন একটি উপখাতকে টেকনোলজি হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ফলে তারা যে বিষয় পড়াশোনা করে, সে বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ হয়। অপরদিকে আমরা সব বিষয় অর্থাৎ টোটাল টেক্সটাইল সম্পর্কে অবগত হই বিধায় কোন উপখাতেই ভালভাবে দক্ষ হতে পারি না। তাই চাকরির বাজারে আমরা উপযুক্ত সেবা দিতে পারছি না। সরকারকে মধ্যম মানের বস্ত্র প্রকৌশলদের চাকরির বাজারের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন উপখাতের ভিত্তিতে টেকনোলজি চালু করতে হবে ।
এছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কারিকুলাম বন্ধ করে টেক্সটাইল বিষয়ক সকল টেকনোলজিকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কারিকুলামের সাথে যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্ রাখতে হবে সকল টেকনোলজির পূর্বে টেক্সটাইল শব্দটি যেন বসানো হয়। অর্থাৎ সকল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের টেকনোলজি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক কাঠামোতে রাখলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, টেক্সটাইল বিষয়ের গার্মেন্টস খাতের এ্যাপারাল ম্যানুফাকচারিং টেকনোলজির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (টেক্সটাইল এ্যাপারাল ম্যানুফাকচারিং টেকনোলজি) লিখতে হবে। টেক্সটাইল বিষয়ের বিভিন্ন উপখাতের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তাবিত টেকনোলজিগুলো হলো ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (টেক্সটাইল এ্যাপারাল ম্যানুফাকচারিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল নিটওয়্যার ম্যানুফাকচারিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল গার্মেন্টস অ্যান্ড ডিজাইন টেকনোলজি/ টেক্সটাইল অ্যান্ড জুট টেকনোলজি/ টেক্সটাইল সিল্ক টেকনোলজি /টেক্সটাইল সেরিকালচার টেকনোলজি / টেক্সটাইল ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্রাকচার টেকনোলজি/ টেক্সটাইল ডিজাইন অ্যান্ড প্রিন্টিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল নিটিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল উইভিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল ওয়েট প্রসেসিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল কটন স্পিনিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল মার্কেটিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি/ টেক্সটাইল মেশিনারীজ টেকনোলজি/ টেক্সটাইল টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল টেকনোলজি/ টেক্সটাইল উল টেকনোলজি/ টেক্সটাইল পলিমার টেকনোলজি/টেক্সটাইল সিনথেটিক ইর্য়ান টেকনোলজি) ইত্যাদি ।
উল্লেখিত উপখাতের আলোকে টেক্সটাইল শিক্ষাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টেকনোলজিতে ভাগ করলে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (টেক্সটাইল এ্যাপারাল ম্যানুফাকচারিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল নিটওয়্যার ম্যানুফাকচারিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল গার্মেন্টস অ্যান্ড ডিজাইন টেকনোলজি/ টেক্সটাইল ডিজাইন অ্যান্ড প্রিন্টিং টেকনোলজি/ টেক্সটাইল মার্কেটিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি/ টেক্সটাইল টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্টোল টেকনোলজি) সমুহ সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক সমুহেও চালু করা সম্ভব হবে। ফলে দেশে দক্ষ মধ্যম মানের বস্ত্র প্রকৌশলীর অভাব পুরণ করতে সক্ষম হবে।
এছাড়া বস্ত্রখাতের দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য এসএসসি ও এইচএসসি ভোকেশনাল পর্যায়ে পেশাওয়ারি এনটিভিকিউএফ-এর আলোকে নতুন নতুন ট্রেড চালু করতে হবে, ট্রেডগুলো হবেঃ ড্রেসমেকিং (জেনারেল গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচার), সার্কুলার নিটিং মেসিন অপারেশন, এ্যাপারাল স্ক্রীন প্রিন্ট, ব্লক ও বাটিক, সুইং মেশিন অপারেশন, এম্ব্রয়ডারি, কারচুপি, নিটওয়্যার মেকিং, সোয়েটার মেকিং, প্যাটার্ন মেকিং অ্যান্ড কাটিং, উইভিং, গার্মেন্টস ফিনিসিং, টেক্সটাইল ডাইং, ফেব্রিক ফিনিসিং, গার্মেন্টস ফিনিসিং, অ্যাপারেল মার্চেনডাইজিং, আরও অন্যান্য ইত্যাদি। ফলে বস্ত্র খাতে দক্ষ জনশক্তির অভাব দুর হবে।
লেখক :
প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস
দৈনিক শিক্ষা | মার্চ ২০, ২০১৮
ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন