ঘুরে আসুন বিশ্বের একমাত্র পাটের জাদুঘর - Textile Lab | Textile Learning Blog
বিশ্বের একমাত্র পাটের জাদুঘর ভ্রমণ

বিশ্বের একমাত্র পাটের জাদুঘর বাংলাদেশে না হয়ে ইউকেতে কেন হলো সেটা জানতে হইলে কয়েকশ বছর আগে ফিরে যাইতে হবে।

স্কটল্যান্ডের ডান্ডি কয়েকশ বছর আগে ছিল এক দরিদ্র অবহেলিত জনপদ। তবে এর তিনটা বিশেষত্ব ছিলো: ফ্ল্যাক্সের (লিনেন) কাপড় তৈরি করা, নিকটস্থ সাগরে তিমি শিকার এবং জাহাজ বানানো। তবে কেবল এই তিনটা বিশেষত্ব ডান্ডিকে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলোনা। সবকিছু বদলে গেলো একটা আকষ্মিক ঘটনার পর। ১৮ শতকের প্রথমদিকে তৎকালীন বৃটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গ থেকে একধরনের তন্তু আনা হয়। খুবই সস্তা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই তন্তুটা অনমনীয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহারের অনুপোগী। কিন্তু এই তন্তুর উপর ঘটনাক্রমে তিমি মাছের কিছু তেল পড়ার পর দেখা গেলো সেটা বেশ নরম হয়ে উঠেছে। বাকিটা ইতিহাস। "In 1820 the first twenty bales of jute were unloaded at Dundee docks. It was to change the city’s destiny forever", ভবনটির এক প্রদর্শনী কক্ষে এটা লেখা ছিলো। এই ভবনটি একসময় পাটকল ছিলো। কিন্তু এখন পাটের জাদুঘর। নাম- ভারডন্ট ওয়ার্কস। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির উদ্বোধন করেন।




পাট থেকে তৈরি হলো দড়ি, ঘরের দরকারি আসবাবপত্র। কলোনি যুগে যখন হঠাৎ করে বৈশ্বিক ব্যবসা বেড়ে গেলো তখন চা, কফি, মসলা, ইত্যাদি দ্রব্য পরিবহন করার জন্য প্রচুর থলের দরকার পড়লো। পাটজাত পণ্যের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে উঠলো। জাহাজের পাল, তাবু ইত্যাদি বানানোর জন্য পাটের প্রয়োজন হলো।

একজন বৃদ্ধা আমাকে জানালেন, উনি যখন শৈশবে ট্রেনে করে স্কুলে যেতেন তখন পথের দুইপাশে শয়ে শয়ে চিমনি দিয়ে ধোয়া উঠতে দেখতেন৷সবগুলোই ছিল পাটকল। এই সময় ডান্ডির প্রায় শতভাগ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাটের উপর নির্ভর করতো।


মিউজিয়ামটিতে আপনি শতবর্ষ আগের পাটকলের ভেতর দিয়ে হাঁটতে পারবেন। যন্ত্রপাতি আগের মত বসিয়ে পাটকলের আসল রূপ ধরে রাখার চেষ্টা যেমন আছে, অন্যদিকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার জন্য প্রামাণ্যচিত্র, প্রদর্শনীর ব্যবস্হা রয়েছে। পুরো মিউজিয়াম যেন হারানো অতীত নিয়ে হাহাকার করছে। 

এই শহরের মানুষ তাদের পাটের ইতিহাস নিয়ে গর্বিত। কিন্তু পরিপাটি সুন্দর শহরের মানুষ হয়তো জানেইনা, শহরটির সমৃদ্ধির পেছনে সুদূর বাংলাদেশ কিভাবে অবদান রেখেছে।


কিভাবে যাবেন:
লণ্ডন, গ্লাসগো বা এডিনবরা থেকে ডাণ্ডি সিটি সেন্টারে ন্যাশনাল এক্সপ্রেস, সিটি লিঙ্ক এই বাসগুলো যায়। সিটি স্কয়ার থেকে ১০-১২ মিনিট হাঁটার দূরত্ব। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে সহজেই চলে যেতে পারবেন।


টিকেট: মূল্য একটু বেশি। ১১.২৫ পাউন্ড; বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২ শত টাকা। এতগুলা পাউন্ড খরচ করে যেতে আমার কষ্টই হয়েছিলো। তবে ভেতরে যেয়ে মনে হলো খরচ করাটা সার্থক।

ডান্ডি শহরকে আপনার আরেকটা আপন  শহর মনে হবে। তাই বলে ঢাকার মতই যত্রতত্র ময়লা ফেলবেননা 

Collected

ঘুরে আসুন বিশ্বের একমাত্র পাটের জাদুঘর

বিশ্বের একমাত্র পাটের জাদুঘর ভ্রমণ

বিশ্বের একমাত্র পাটের জাদুঘর বাংলাদেশে না হয়ে ইউকেতে কেন হলো সেটা জানতে হইলে কয়েকশ বছর আগে ফিরে যাইতে হবে।

স্কটল্যান্ডের ডান্ডি কয়েকশ বছর আগে ছিল এক দরিদ্র অবহেলিত জনপদ। তবে এর তিনটা বিশেষত্ব ছিলো: ফ্ল্যাক্সের (লিনেন) কাপড় তৈরি করা, নিকটস্থ সাগরে তিমি শিকার এবং জাহাজ বানানো। তবে কেবল এই তিনটা বিশেষত্ব ডান্ডিকে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলোনা। সবকিছু বদলে গেলো একটা আকষ্মিক ঘটনার পর। ১৮ শতকের প্রথমদিকে তৎকালীন বৃটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গ থেকে একধরনের তন্তু আনা হয়। খুবই সস্তা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই তন্তুটা অনমনীয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহারের অনুপোগী। কিন্তু এই তন্তুর উপর ঘটনাক্রমে তিমি মাছের কিছু তেল পড়ার পর দেখা গেলো সেটা বেশ নরম হয়ে উঠেছে। বাকিটা ইতিহাস। "In 1820 the first twenty bales of jute were unloaded at Dundee docks. It was to change the city’s destiny forever", ভবনটির এক প্রদর্শনী কক্ষে এটা লেখা ছিলো। এই ভবনটি একসময় পাটকল ছিলো। কিন্তু এখন পাটের জাদুঘর। নাম- ভারডন্ট ওয়ার্কস। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির উদ্বোধন করেন।




পাট থেকে তৈরি হলো দড়ি, ঘরের দরকারি আসবাবপত্র। কলোনি যুগে যখন হঠাৎ করে বৈশ্বিক ব্যবসা বেড়ে গেলো তখন চা, কফি, মসলা, ইত্যাদি দ্রব্য পরিবহন করার জন্য প্রচুর থলের দরকার পড়লো। পাটজাত পণ্যের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে উঠলো। জাহাজের পাল, তাবু ইত্যাদি বানানোর জন্য পাটের প্রয়োজন হলো।

একজন বৃদ্ধা আমাকে জানালেন, উনি যখন শৈশবে ট্রেনে করে স্কুলে যেতেন তখন পথের দুইপাশে শয়ে শয়ে চিমনি দিয়ে ধোয়া উঠতে দেখতেন৷সবগুলোই ছিল পাটকল। এই সময় ডান্ডির প্রায় শতভাগ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাটের উপর নির্ভর করতো।


মিউজিয়ামটিতে আপনি শতবর্ষ আগের পাটকলের ভেতর দিয়ে হাঁটতে পারবেন। যন্ত্রপাতি আগের মত বসিয়ে পাটকলের আসল রূপ ধরে রাখার চেষ্টা যেমন আছে, অন্যদিকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার জন্য প্রামাণ্যচিত্র, প্রদর্শনীর ব্যবস্হা রয়েছে। পুরো মিউজিয়াম যেন হারানো অতীত নিয়ে হাহাকার করছে। 

এই শহরের মানুষ তাদের পাটের ইতিহাস নিয়ে গর্বিত। কিন্তু পরিপাটি সুন্দর শহরের মানুষ হয়তো জানেইনা, শহরটির সমৃদ্ধির পেছনে সুদূর বাংলাদেশ কিভাবে অবদান রেখেছে।


কিভাবে যাবেন:
লণ্ডন, গ্লাসগো বা এডিনবরা থেকে ডাণ্ডি সিটি সেন্টারে ন্যাশনাল এক্সপ্রেস, সিটি লিঙ্ক এই বাসগুলো যায়। সিটি স্কয়ার থেকে ১০-১২ মিনিট হাঁটার দূরত্ব। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে সহজেই চলে যেতে পারবেন।


টিকেট: মূল্য একটু বেশি। ১১.২৫ পাউন্ড; বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২ শত টাকা। এতগুলা পাউন্ড খরচ করে যেতে আমার কষ্টই হয়েছিলো। তবে ভেতরে যেয়ে মনে হলো খরচ করাটা সার্থক।

ডান্ডি শহরকে আপনার আরেকটা আপন  শহর মনে হবে। তাই বলে ঢাকার মতই যত্রতত্র ময়লা ফেলবেননা 

Collected

কোন মন্তব্য নেই: