চলমান গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষের কারণ ও সমাধান - Textile Lab | Textile Learning Blog
চলমান গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষের কারণ ও সমাধান-১

উন্নত বিশ্বের বেশ কিছু দেশে কেউ চাইলেই যেকোন ব্যবসা শুরু করতে পারে না। কেউ ব্যবসা শুরু করতে চাইলে যথাযথ কতৃপক্ষ তাকে যাচাই করে দেখে সেই লোক ব্যবসা করার যোগ্যতা রাখে কিনা। লোকটার লেখাপড়া, চাকরির অভিজ্ঞতা, ব্যবসার অভিজ্ঞতা সেই লাইনে আছে কিনা, ব্যবসার যথেষ্ট পূজি আছে কিনা, সেই ব্যবসা সেই দেশে আর কত জনে করে, সেইম ব্যবসা নতুন কেউ শুরু করতে চাইলে সোশ্যাল ইম্প্যাক্ট কী হবে? আগের ব্যবসায়ীদের উপর কোন প্রভাব পড়বে কিনা, বাজারে কোন ইফেক্ট পড়বে কিনা, শ্রমিক এভেইলেবল কিনা সব বিবেচনা করা হয়।

এছাড়া কোন লোকেশনে ফ্যাক্টরি করবে তাও কতৃপক্ষ ঠিক করে দেয়। কেউ চাইলেই যেকোন স্থানে ফ্যাক্টরি করতে পারবে না। এই কথাগুলো শুনেছি ফিনল্যান্ডের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।

উনি একটা ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন৷ ওনাকে প্রথমে পাঠানো হলো একাউন্টিং ফার্মে! বলেছে, সেখান থেকে আগে আইডিয়া নিয়ে আসেন। এই কথা বাঙালি হলে কী উত্তর দিত? বলত "আমার টেকা আমার জমি আমার যা খুশি তা করুম। একাউন্টস ফার্ম কী করবে?"

অথচ ফিনল্যান্ডে চাইলেই তা করতে পারবে না। একাউন্টিং ফার্ম আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আপনাকে কস্টিং দিবেন। আপনি যদি এই কস্টিং মেনে ব্যবসা করতে পারেন তাহলে আপনাকে ব্যবসা করতে দিবে। না মানতে পারলে আপনি ব্যবসা করতে পারবেন না। ব্যপার টা অদ্ভুত না! অদ্ভুত হলেও এটাই সবার জন্য অনেক উত্তম। বাংলাদেশে যদি এই নিয়ম চালু হত তাহলে যত্র তত্র গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু হত না আর গার্মেন্টস সেক্টরে ধ্বসও নামত না। যারা গার্মেন্টস সেক্টরে সিনিয়র লেভেলে আছেন ও যারা মালিক তারা জানেন গার্মেন্টস সেক্টর বাংলাদেশে এখন হুমকির মুখে। বিজিএমইএর কাছে ৭০০ এর অধিক মালিক 'সেইফ এক্সিট' এর আবেদন করেছে! অর্থাৎ সরকার সুযোগ দিলে ৭০০ এর অধিক ফ্যাক্টরি এখনই বন্ধ হয়ে যাবে। মালিকরা ব্যাংক ক্রাফট হয়ে যাবেন বলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে পারছেন না। গড়ে ৫০০ শ্রমিক যদি এই ৭০০ ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে তাহলে সরাসরি সাড়ে ৩ লাখ শ্রমিক একদিনে বেকার হয়ে যাবে! সাড়ে ৩ হাজার ফ্যামিলিতে গড়ে ৪ জন মেম্বার হলেও ১৪ লক্ষ লোকের অবস্থা রোহিঙ্গাদের মত হয়ে যাবে।
এই ৭০০ মালিক ছাড়াও আরো ৭০০ মালিক যেকোন মুহুর্তে ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রস্তুতি হিসেবে তারা কানাডার নাগরিকত্ব বা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম বাগিয়ে নিয়েছেন। প্রতি বছরই অনেক ফ্যাক্টরি মালিক এভাবে পালিয়ে যান। ভবিষ্যৎ এ এই সংখ্যা অনেক বাড়বে।

আমি কমপক্ষে ২০ টা বড় বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চিনি যারা তাদের স্টাফদেরকে ৩/৪ মাস বেতন দিতে পারছে না। এর মধ্যে ৮ হাজার শ্রমিকের ফ্যাক্টরি (গাজীপুর ধান গবেষণার সামনে) ও ১৬ হাজার শ্রমিকের (রাজেন্দ্রপুর) এর দুটি ফ্যাক্টরিতে আমার খুব কাছের লোকজন চাকরি করেন।  আমি নিজেও ৮ হাজার শ্রমিক সমৃদ্ধ ফ্যাক্টরিটার জিএম ছিলাম, তাই ভেতরের খবর অনেক জানি। 

উপরের উদাহরন গুলো দিলাম গার্মেন্টস সেক্টর কতটা করুণ অবস্থায় আছে তা বোঝানোর জন্য।
এই করুণ অবস্থার মধ্যে গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত সরকার শ্রমিকদের দাবী অনুযায়ী নতুন পে স্কেল চাপিয়ে দিল। আবার শ্রমিকদের যা চাহিদা তাও দেয়া হলো না। দুই পক্ষ পড়েছে বিপদে। কারণ যে বেতন দিতে বলা হয়েছে সেই বেতন দিতে গেলে মালিক পক্ষের বারোটা বাজবে, আয়ের চেয়ে ব্যায় বাড়বে। ফলে অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। আল্টিমেটলি অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। আবার শ্রমিকদের জন্য যে নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তাতেও শ্রমিকদের কোন লাভ হবে না, পুরোটাই শুভনকরের ফাঁকি!
উপরে মালিকদের করুণ অবস্থার কথা বললাম। এখন বলি শ্রমিকদের করুন অবস্থার কথা।

জানুয়ারী মাস খরচের মাস। এই মাসে ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে ভর্তি হয়, বই কিনতে হয়, নতুন স্কুল ড্রেস লাগে। বাবা মায়ের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। অথচ এই জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের অনেক ফ্যাক্টরির শ্রমিক বেতন পাবে না! এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসেও বেতন পাবে না! কারণ ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের বেশিরভাগ সোয়েটার ফ্যাক্টরি বন্ধ  থাকে আর এই বন্ধের সময় শ্রমিকরা বেতন পায় না। চিন্তা করে দেখুন একবার, আপনার বাচ্চার স্কুলের ভর্তির টাকা আপনি দিতে পারছেন না, বই কিনতে পারছেন না। ঘর ভাড়া দিতে পারছেন না, বাজার করতে পারছেন না! চিন্তা করতেই কেমন লাগে ব্যপারটা। অথচ শ্রম আইন অনুযায়ী ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা বেতন পাবে, কিছু না হলেও বেসিক স্যালারি পাবে। আর মালিক যদি মনে করেন শ্রমিকদের বিদায় করে দিবেন তাহলে তাকে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী ১১২ দিনের বেতন দিয়ে বিদায় করে দিবেন যাকে বলে টার্মিনেশন বেনিফিট। এটা মালিক পক্ষ দিতে বাধ্য হলেও ইপিজেড ছাড়া বাইরের কোন ফ্যাক্টরি ঠেকায় না পড়লে কেউ দিতে চায় না, দেয়ার রেকর্ড ও নেই। বরং শ্রমিকরা চাকরি হারানোর পর সেই মাসের বেতন ই পেতে বারোটা বেজে যায়। আমি নিজেও বৈধভাবে রিজাইন দেয়ার পরে ৬ মাস ধরে কিস্তিতে বেতন পেয়েছিলাম। তাও জিএম পদ থেকে! জিএমদের অবস্থা এমন হলে শ্রমিকদের কী অবস্থা বোঝেন এবার!‌


এবার আসি ফিনল্যান্ডের উদাহরণ এ। বাংলাদেশে যারা ফ্যাক্টরি দিতে চায় তাদেরকে যদি ফিনল্যান্ডের মত যদি ব্যবসা শুরুর আগেই বলা হত "আপনি ব্যবসা করতে চাইলে মিনিমাম ওয়েজ বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন শ্রমিককে ছাটাই করতে হলে তাকে ১১২ দিনের বেতন দিয়ে বিদায় করতে হবে। ওভারটাইমের নিয়ম মানতে হবে (৯০% ফ্যাক্টরি এক্ষেত্রে শ্রমিকদের ঠকায়)। বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ ছুটি দিতে হবে, বোনাস দিতে হবে, বায়ারদের বেধে দেয়া কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আর এইসব নিশ্চিত করতে গেলে আপনার মাসে এত টাকা লাগবে। এখন আপনি যদি মনে করেন এই টাকা ইনভেস্ট করে আপনার পোষাবে তাহলে ব্যবসা করেন অথবা করবেন না।"

আমার ধারনা উপরের সবক পেলে বাংলাদেশের ৫০% ফ্যাক্টরি মালিক ব্যবসা করতেন না। তারা হয়তো অন্য প্রফেশনে যেতেন। কারণ এখন পণ্যের যে দাম পাওয়া যায় তাতে শ্রমিককে ছাটাই করলে ১১২ দিনের অগ্রীম বেতন দেয়া তো দূরের কথা রানিং মাসের স্যালারিও দেয়া যায় না। এক মাসে বেতন দিলেও তা মালিকের পকেট থেকে দিতে হবে। এমতবস্থায় তারা জেনেশুনে এই ব্যবসায় নামতেন না।

লেখাটা বড় হয়ে যাবে বিধায় এটা আরো একটা পর্বে শেষ করব আশা করছি।


চলমান গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষের কারণ ও সমাধান-২

দিনাজপুর থেকে গাজীপুরে গার্মেন্টেসে চাকরি করতে আসা গফুর মিয়ার ছেলে ইব্রাহীম যখন ২০ টাকা দিয়ে ফুলকপি কিনছে ঠিক সেই সময় গফুর মিয়া দিনাজপুরে ওনার ক্ষেতের ফুলকপি গরু ছাগলকে খেতে দিচ্ছেন। আর এই কয়দিন একটানা ফুলকপি খেতে খেতে গরুরও রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। গরুও এখন ফুলকপির দিকে তাকাচ্ছে না।ছাগল আর কত খাবে। বেশিরভাগই নস্ট হচ্ছে। মোখলেস যখন তার চাষের মূলা ফেলে দিচ্ছে ঠিক তখন তার মেয়ে নারায়ণগঞ্জের বাজার থেকে ২০ টাকা কেজি দরে মূলা কিনে খাচ্ছে। তার মেয়ে নাহিদা নারায়ণগঞ্জের এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থির অবস্থা তৈরি হবার এটা একটা অন্যতম কারণ। যেসব এলাকায় শ্রমিকরা থাকে সেসব এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া আবার যেসব এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন হয় সেসব এলাকায় এগুলো খাওয়ার লোক নেই। আর চাল ডালের মত কাচা শাক সবজি উত্তরবংগ থেকে ঢাকায় এনে পোষায় না। তাই শ্রমিকরা বাড়ি থেকে অনেকে চাল ডাল আনলেও শাক সবজি কিনে খেতে বাধ্য হয়।

আমি যখন এক সময় নীলফামারীর সৈয়দপুরে যেতাম তখন দেখতাম আলু চাষীরা তাদের আলু প্রতি বছর নস্ট করে ফেলে। কারণ এসব আলু কেনার মত লোক নেই।

উপরের উদাহরন গুলো দিলাম কারণ এইসব প্রত্যন্ত এলাকায় যদি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গড়ে উঠত তাহলে সম্পদের একটা সুষম বন্টন হত। গরিব কৃষক তার উতপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য পেতেন আর গরিব গার্মেন্টস শ্রমিকরা কম দামে খেতে পারত। তখন কেউ বেতন বাড়ানোর জন্য দাবী করত না।
আমরা দেশের ৪টি জেলাকেই টার্গেট করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছি। এই ৪ টি জেলা হল ঢাকা নারায়ণগঞ্জ গাজীপুর ও চট্টগ্রাম। এখন ময়মনসিংহের ভালুকায় অনেক ফ্যাক্টরি হচ্ছে। সরকার যদি সব ফ্যাক্টরি এক কেন্দ্রীক না গড়ে সারা দেশ ব্যাপি বিভিন্ন স্থানে গড়ার জন্য সুযোগ দেয় তাহলে একই এলাকার উপর চাপ কমে। এতে বাসা ভাড়া পয়নিষ্কাষন পানি ও খাদ্য দ্রব্যের সুষম বন্টন হয়। শ্রমিকরা কম মজুরিতেই সন্তুষ্ট থাকবে। মালিকদের উপরেও চাপ সৃষ্টি হবে না।

Written By:
Saiful Islam Romen
Collected from his Timeline 

চলমান গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষের কারণ ও সমাধান

চলমান গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষের কারণ ও সমাধান-১

উন্নত বিশ্বের বেশ কিছু দেশে কেউ চাইলেই যেকোন ব্যবসা শুরু করতে পারে না। কেউ ব্যবসা শুরু করতে চাইলে যথাযথ কতৃপক্ষ তাকে যাচাই করে দেখে সেই লোক ব্যবসা করার যোগ্যতা রাখে কিনা। লোকটার লেখাপড়া, চাকরির অভিজ্ঞতা, ব্যবসার অভিজ্ঞতা সেই লাইনে আছে কিনা, ব্যবসার যথেষ্ট পূজি আছে কিনা, সেই ব্যবসা সেই দেশে আর কত জনে করে, সেইম ব্যবসা নতুন কেউ শুরু করতে চাইলে সোশ্যাল ইম্প্যাক্ট কী হবে? আগের ব্যবসায়ীদের উপর কোন প্রভাব পড়বে কিনা, বাজারে কোন ইফেক্ট পড়বে কিনা, শ্রমিক এভেইলেবল কিনা সব বিবেচনা করা হয়।

এছাড়া কোন লোকেশনে ফ্যাক্টরি করবে তাও কতৃপক্ষ ঠিক করে দেয়। কেউ চাইলেই যেকোন স্থানে ফ্যাক্টরি করতে পারবে না। এই কথাগুলো শুনেছি ফিনল্যান্ডের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।

উনি একটা ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন৷ ওনাকে প্রথমে পাঠানো হলো একাউন্টিং ফার্মে! বলেছে, সেখান থেকে আগে আইডিয়া নিয়ে আসেন। এই কথা বাঙালি হলে কী উত্তর দিত? বলত "আমার টেকা আমার জমি আমার যা খুশি তা করুম। একাউন্টস ফার্ম কী করবে?"

অথচ ফিনল্যান্ডে চাইলেই তা করতে পারবে না। একাউন্টিং ফার্ম আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আপনাকে কস্টিং দিবেন। আপনি যদি এই কস্টিং মেনে ব্যবসা করতে পারেন তাহলে আপনাকে ব্যবসা করতে দিবে। না মানতে পারলে আপনি ব্যবসা করতে পারবেন না। ব্যপার টা অদ্ভুত না! অদ্ভুত হলেও এটাই সবার জন্য অনেক উত্তম। বাংলাদেশে যদি এই নিয়ম চালু হত তাহলে যত্র তত্র গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু হত না আর গার্মেন্টস সেক্টরে ধ্বসও নামত না। যারা গার্মেন্টস সেক্টরে সিনিয়র লেভেলে আছেন ও যারা মালিক তারা জানেন গার্মেন্টস সেক্টর বাংলাদেশে এখন হুমকির মুখে। বিজিএমইএর কাছে ৭০০ এর অধিক মালিক 'সেইফ এক্সিট' এর আবেদন করেছে! অর্থাৎ সরকার সুযোগ দিলে ৭০০ এর অধিক ফ্যাক্টরি এখনই বন্ধ হয়ে যাবে। মালিকরা ব্যাংক ক্রাফট হয়ে যাবেন বলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে পারছেন না। গড়ে ৫০০ শ্রমিক যদি এই ৭০০ ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে তাহলে সরাসরি সাড়ে ৩ লাখ শ্রমিক একদিনে বেকার হয়ে যাবে! সাড়ে ৩ হাজার ফ্যামিলিতে গড়ে ৪ জন মেম্বার হলেও ১৪ লক্ষ লোকের অবস্থা রোহিঙ্গাদের মত হয়ে যাবে।
এই ৭০০ মালিক ছাড়াও আরো ৭০০ মালিক যেকোন মুহুর্তে ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রস্তুতি হিসেবে তারা কানাডার নাগরিকত্ব বা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম বাগিয়ে নিয়েছেন। প্রতি বছরই অনেক ফ্যাক্টরি মালিক এভাবে পালিয়ে যান। ভবিষ্যৎ এ এই সংখ্যা অনেক বাড়বে।

আমি কমপক্ষে ২০ টা বড় বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চিনি যারা তাদের স্টাফদেরকে ৩/৪ মাস বেতন দিতে পারছে না। এর মধ্যে ৮ হাজার শ্রমিকের ফ্যাক্টরি (গাজীপুর ধান গবেষণার সামনে) ও ১৬ হাজার শ্রমিকের (রাজেন্দ্রপুর) এর দুটি ফ্যাক্টরিতে আমার খুব কাছের লোকজন চাকরি করেন।  আমি নিজেও ৮ হাজার শ্রমিক সমৃদ্ধ ফ্যাক্টরিটার জিএম ছিলাম, তাই ভেতরের খবর অনেক জানি। 

উপরের উদাহরন গুলো দিলাম গার্মেন্টস সেক্টর কতটা করুণ অবস্থায় আছে তা বোঝানোর জন্য।
এই করুণ অবস্থার মধ্যে গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত সরকার শ্রমিকদের দাবী অনুযায়ী নতুন পে স্কেল চাপিয়ে দিল। আবার শ্রমিকদের যা চাহিদা তাও দেয়া হলো না। দুই পক্ষ পড়েছে বিপদে। কারণ যে বেতন দিতে বলা হয়েছে সেই বেতন দিতে গেলে মালিক পক্ষের বারোটা বাজবে, আয়ের চেয়ে ব্যায় বাড়বে। ফলে অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। আল্টিমেটলি অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। আবার শ্রমিকদের জন্য যে নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তাতেও শ্রমিকদের কোন লাভ হবে না, পুরোটাই শুভনকরের ফাঁকি!
উপরে মালিকদের করুণ অবস্থার কথা বললাম। এখন বলি শ্রমিকদের করুন অবস্থার কথা।

জানুয়ারী মাস খরচের মাস। এই মাসে ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে ভর্তি হয়, বই কিনতে হয়, নতুন স্কুল ড্রেস লাগে। বাবা মায়ের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। অথচ এই জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের অনেক ফ্যাক্টরির শ্রমিক বেতন পাবে না! এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসেও বেতন পাবে না! কারণ ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের বেশিরভাগ সোয়েটার ফ্যাক্টরি বন্ধ  থাকে আর এই বন্ধের সময় শ্রমিকরা বেতন পায় না। চিন্তা করে দেখুন একবার, আপনার বাচ্চার স্কুলের ভর্তির টাকা আপনি দিতে পারছেন না, বই কিনতে পারছেন না। ঘর ভাড়া দিতে পারছেন না, বাজার করতে পারছেন না! চিন্তা করতেই কেমন লাগে ব্যপারটা। অথচ শ্রম আইন অনুযায়ী ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা বেতন পাবে, কিছু না হলেও বেসিক স্যালারি পাবে। আর মালিক যদি মনে করেন শ্রমিকদের বিদায় করে দিবেন তাহলে তাকে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী ১১২ দিনের বেতন দিয়ে বিদায় করে দিবেন যাকে বলে টার্মিনেশন বেনিফিট। এটা মালিক পক্ষ দিতে বাধ্য হলেও ইপিজেড ছাড়া বাইরের কোন ফ্যাক্টরি ঠেকায় না পড়লে কেউ দিতে চায় না, দেয়ার রেকর্ড ও নেই। বরং শ্রমিকরা চাকরি হারানোর পর সেই মাসের বেতন ই পেতে বারোটা বেজে যায়। আমি নিজেও বৈধভাবে রিজাইন দেয়ার পরে ৬ মাস ধরে কিস্তিতে বেতন পেয়েছিলাম। তাও জিএম পদ থেকে! জিএমদের অবস্থা এমন হলে শ্রমিকদের কী অবস্থা বোঝেন এবার!‌


এবার আসি ফিনল্যান্ডের উদাহরণ এ। বাংলাদেশে যারা ফ্যাক্টরি দিতে চায় তাদেরকে যদি ফিনল্যান্ডের মত যদি ব্যবসা শুরুর আগেই বলা হত "আপনি ব্যবসা করতে চাইলে মিনিমাম ওয়েজ বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন শ্রমিককে ছাটাই করতে হলে তাকে ১১২ দিনের বেতন দিয়ে বিদায় করতে হবে। ওভারটাইমের নিয়ম মানতে হবে (৯০% ফ্যাক্টরি এক্ষেত্রে শ্রমিকদের ঠকায়)। বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ ছুটি দিতে হবে, বোনাস দিতে হবে, বায়ারদের বেধে দেয়া কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আর এইসব নিশ্চিত করতে গেলে আপনার মাসে এত টাকা লাগবে। এখন আপনি যদি মনে করেন এই টাকা ইনভেস্ট করে আপনার পোষাবে তাহলে ব্যবসা করেন অথবা করবেন না।"

আমার ধারনা উপরের সবক পেলে বাংলাদেশের ৫০% ফ্যাক্টরি মালিক ব্যবসা করতেন না। তারা হয়তো অন্য প্রফেশনে যেতেন। কারণ এখন পণ্যের যে দাম পাওয়া যায় তাতে শ্রমিককে ছাটাই করলে ১১২ দিনের অগ্রীম বেতন দেয়া তো দূরের কথা রানিং মাসের স্যালারিও দেয়া যায় না। এক মাসে বেতন দিলেও তা মালিকের পকেট থেকে দিতে হবে। এমতবস্থায় তারা জেনেশুনে এই ব্যবসায় নামতেন না।

লেখাটা বড় হয়ে যাবে বিধায় এটা আরো একটা পর্বে শেষ করব আশা করছি।


চলমান গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষের কারণ ও সমাধান-২

দিনাজপুর থেকে গাজীপুরে গার্মেন্টেসে চাকরি করতে আসা গফুর মিয়ার ছেলে ইব্রাহীম যখন ২০ টাকা দিয়ে ফুলকপি কিনছে ঠিক সেই সময় গফুর মিয়া দিনাজপুরে ওনার ক্ষেতের ফুলকপি গরু ছাগলকে খেতে দিচ্ছেন। আর এই কয়দিন একটানা ফুলকপি খেতে খেতে গরুরও রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। গরুও এখন ফুলকপির দিকে তাকাচ্ছে না।ছাগল আর কত খাবে। বেশিরভাগই নস্ট হচ্ছে। মোখলেস যখন তার চাষের মূলা ফেলে দিচ্ছে ঠিক তখন তার মেয়ে নারায়ণগঞ্জের বাজার থেকে ২০ টাকা কেজি দরে মূলা কিনে খাচ্ছে। তার মেয়ে নাহিদা নারায়ণগঞ্জের এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থির অবস্থা তৈরি হবার এটা একটা অন্যতম কারণ। যেসব এলাকায় শ্রমিকরা থাকে সেসব এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া আবার যেসব এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন হয় সেসব এলাকায় এগুলো খাওয়ার লোক নেই। আর চাল ডালের মত কাচা শাক সবজি উত্তরবংগ থেকে ঢাকায় এনে পোষায় না। তাই শ্রমিকরা বাড়ি থেকে অনেকে চাল ডাল আনলেও শাক সবজি কিনে খেতে বাধ্য হয়।

আমি যখন এক সময় নীলফামারীর সৈয়দপুরে যেতাম তখন দেখতাম আলু চাষীরা তাদের আলু প্রতি বছর নস্ট করে ফেলে। কারণ এসব আলু কেনার মত লোক নেই।

উপরের উদাহরন গুলো দিলাম কারণ এইসব প্রত্যন্ত এলাকায় যদি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গড়ে উঠত তাহলে সম্পদের একটা সুষম বন্টন হত। গরিব কৃষক তার উতপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য পেতেন আর গরিব গার্মেন্টস শ্রমিকরা কম দামে খেতে পারত। তখন কেউ বেতন বাড়ানোর জন্য দাবী করত না।
আমরা দেশের ৪টি জেলাকেই টার্গেট করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছি। এই ৪ টি জেলা হল ঢাকা নারায়ণগঞ্জ গাজীপুর ও চট্টগ্রাম। এখন ময়মনসিংহের ভালুকায় অনেক ফ্যাক্টরি হচ্ছে। সরকার যদি সব ফ্যাক্টরি এক কেন্দ্রীক না গড়ে সারা দেশ ব্যাপি বিভিন্ন স্থানে গড়ার জন্য সুযোগ দেয় তাহলে একই এলাকার উপর চাপ কমে। এতে বাসা ভাড়া পয়নিষ্কাষন পানি ও খাদ্য দ্রব্যের সুষম বন্টন হয়। শ্রমিকরা কম মজুরিতেই সন্তুষ্ট থাকবে। মালিকদের উপরেও চাপ সৃষ্টি হবে না।

Written By:
Saiful Islam Romen
Collected from his Timeline 

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

একবারেই পোস্ট করা হলে বেশি ভালো হত