কাঁকড়ার ফাইবার - CHITOSAN Fibre - Textile Lab | Textile Learning Blog
কাঁকড়ার ফাইবার - CHITOSAN

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কোন ক্ষেত্রে ফাইবার নেই ? কিংবা ফাইবারের ব্যবহার নেই? বলতে পারবেন ? এরকম কোন ক্ষেত্র আছে বলে আমার মনে হয়না।







জীবিত দৈহিক-পেশী থেকে শুরু করে মেডিক্যাল ব্যান্ডেজ, অটোমোবাইল টায়ার থেকে নদীর বাঁধ...সর্বত্র ফাইবার! পরিধানের জন্য কিংবা হোম ডেকোরেশন ছাড়াও অনেক কাজে ফাইবার দরকার হয়। বর্তমানে মেডিক্যাল সাইন্সে এরকম ফাইবারের প্রয়োজন পড়ে যেগুলো কিনা বায়ো-ডিগ্রেডেবল, পরিবেশ বান্ধব এবং বায়ো-কম্পিটেবল ও। অনেক সময়ই দেখা যায় প্রচলিত সিন্থেটিক ফাইবারগুলো এসব গুণাবলি প্রদর্শন করে না।


একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে, আমাদের দেশেই রয়েছে এধরণের গুণাবলী সমৃদ্ধ মূল্যবান টেক্সটাইল র-ম্যাটেরিয়ালসের উৎস। যেমন- কাঁকড়া, চিংড়ি সহ অন্যান্য সামুদ্রিক ক্রাস্টাশীয়ানগুলো !


ফিশারি ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে কাঁকড়া-চিংড়ির বাইরের শক্ত যে খোলসটা পাওয়া যায়, তার প্রধান উপাদান হল কাইটিন(chitin).এর থেকে প্রাপ্ত কাঁচামালকে তাই বলা হয়ে থাকে chitosan. সেলুলোজের পরে সর্বাধিক সহজলভ্য প্রাকৃতিক পলিমার এই chitosan. কটন-রেয়নের রাসায়নিক গঠনের সাথে এর মিল রয়েছে। ক্রাস্টাশীয়ান প্রাণীর বাহিরের শক্ত শেলে যে কাইটিন থাকে, ক্ষারীয় দ্রবণে তার de-acetylation এর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে chitosan উৎপাদন করা হয়ে থাকে।





chitosan ফাইবারের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে:

১. অত্যধিক অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল ইফেক্ট।

২. সম্পূর্ণরুপে বায়ো-ডিগ্রেডেবল।

৩. অ্যালার্জির উদ্রেক করে না।

৪. উচ্চমানের আর্দ্রতা শোষণ ক্ষমতা।

৫. সেন্সিটিভ স্কিনের মানুষদের জন্য কাইটোস্যান ফাইবারের পোশাক আরামদায়ক এবং নিরাপদ।

৬. রিঅ্যাক্টিভ আর ডিরেক্ট ডাই দিয়ে বেশ ভালো মানের ডায়িং করা সম্ভব।

৭. মেডিকেল ফিল্ডে কাইটোস্যান ফাইবার অনন্য ভূমিকা রেখে থাকে।

৮. সিল্ক, ফ্লাক্স, রেয়ন, সেলুলোজ ইয়ার্ন/ফাইবারের সাথে কাইটস্যান ব্লেন্ড করে এগুলোর রঞ্জক ধারণ ক্ষমতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

৯. এই ফাইবারের ডি-সাইজিং না করলেও চলে।

১০. সাইজিং এজেন্ট হিসেবে ভালো কাজ করে।










তাছাড়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক সিন্থেটিক ফাইবার (যেমন-পিভিএ, পলি-অ্যাক্রাইলেট ইত্যাদি) গুলোকে কাইটোস্যান ফাইবার দিয়ে রিপ্লেস করে দেয়া গেলে খারাপ হয়না।
chitosan যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে-





স্পোর্টস-ক্লথ, মোজা, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, বেবি-ক্লথ, হাউজ ইন্টেরিয়র, বেডিং, টাওয়েল, আন্ডার গার্মেন্টস, নন-উভেন ফেব্রিক সহ আরো অনেক টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস তৈরিতে এখন উল্লেখযোগ্য ভাবে কাইটোস্যান ব্যবহার করা হচ্ছে।








আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান টেক্সটাইল সেক্টরের। তবে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অপ্রাচুর্যের কারণে আমরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি। প্রায় ৯৯% কাঁচামালই আমাদেরকে বাইরের দেশগুলো থেকে আমদানি করতে হয়। কাঁচামালের সহজলভ্যতা বাড়াতে পারলে আমাদের টেক্সটাইল সেক্টরকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব কিছুনা। আমাদের সমুদ্রে যেহেতু কাঁকড়া-চিংড়ি এগুলো সুলভ তাই কাইটোস্যান ফাইবারের দিকে একটু নজর দিলে আমাদের দেশ হতে পারে বিশ্বের সব থেকে বড় কাইটোস্যান ম্যানুফ্যাকচারার কান্ট্রি।


আমাদের সুন্দরবনে প্রপ্ত কাকড়া  
আমরা কাকড়া মুলত সুস্বাদু খাবার হিসেবে খেয়া থাকিঃ 




লিখেছেনঃ
তনিমা রহমান,
৩৯তম ব্যাচ,
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
BUTex Learner Page

কাঁকড়ার ফাইবার - CHITOSAN Fibre

কাঁকড়ার ফাইবার - CHITOSAN

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কোন ক্ষেত্রে ফাইবার নেই ? কিংবা ফাইবারের ব্যবহার নেই? বলতে পারবেন ? এরকম কোন ক্ষেত্র আছে বলে আমার মনে হয়না।







জীবিত দৈহিক-পেশী থেকে শুরু করে মেডিক্যাল ব্যান্ডেজ, অটোমোবাইল টায়ার থেকে নদীর বাঁধ...সর্বত্র ফাইবার! পরিধানের জন্য কিংবা হোম ডেকোরেশন ছাড়াও অনেক কাজে ফাইবার দরকার হয়। বর্তমানে মেডিক্যাল সাইন্সে এরকম ফাইবারের প্রয়োজন পড়ে যেগুলো কিনা বায়ো-ডিগ্রেডেবল, পরিবেশ বান্ধব এবং বায়ো-কম্পিটেবল ও। অনেক সময়ই দেখা যায় প্রচলিত সিন্থেটিক ফাইবারগুলো এসব গুণাবলি প্রদর্শন করে না।


একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে, আমাদের দেশেই রয়েছে এধরণের গুণাবলী সমৃদ্ধ মূল্যবান টেক্সটাইল র-ম্যাটেরিয়ালসের উৎস। যেমন- কাঁকড়া, চিংড়ি সহ অন্যান্য সামুদ্রিক ক্রাস্টাশীয়ানগুলো !


ফিশারি ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে কাঁকড়া-চিংড়ির বাইরের শক্ত যে খোলসটা পাওয়া যায়, তার প্রধান উপাদান হল কাইটিন(chitin).এর থেকে প্রাপ্ত কাঁচামালকে তাই বলা হয়ে থাকে chitosan. সেলুলোজের পরে সর্বাধিক সহজলভ্য প্রাকৃতিক পলিমার এই chitosan. কটন-রেয়নের রাসায়নিক গঠনের সাথে এর মিল রয়েছে। ক্রাস্টাশীয়ান প্রাণীর বাহিরের শক্ত শেলে যে কাইটিন থাকে, ক্ষারীয় দ্রবণে তার de-acetylation এর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে chitosan উৎপাদন করা হয়ে থাকে।





chitosan ফাইবারের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে:

১. অত্যধিক অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল ইফেক্ট।

২. সম্পূর্ণরুপে বায়ো-ডিগ্রেডেবল।

৩. অ্যালার্জির উদ্রেক করে না।

৪. উচ্চমানের আর্দ্রতা শোষণ ক্ষমতা।

৫. সেন্সিটিভ স্কিনের মানুষদের জন্য কাইটোস্যান ফাইবারের পোশাক আরামদায়ক এবং নিরাপদ।

৬. রিঅ্যাক্টিভ আর ডিরেক্ট ডাই দিয়ে বেশ ভালো মানের ডায়িং করা সম্ভব।

৭. মেডিকেল ফিল্ডে কাইটোস্যান ফাইবার অনন্য ভূমিকা রেখে থাকে।

৮. সিল্ক, ফ্লাক্স, রেয়ন, সেলুলোজ ইয়ার্ন/ফাইবারের সাথে কাইটস্যান ব্লেন্ড করে এগুলোর রঞ্জক ধারণ ক্ষমতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

৯. এই ফাইবারের ডি-সাইজিং না করলেও চলে।

১০. সাইজিং এজেন্ট হিসেবে ভালো কাজ করে।










তাছাড়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক সিন্থেটিক ফাইবার (যেমন-পিভিএ, পলি-অ্যাক্রাইলেট ইত্যাদি) গুলোকে কাইটোস্যান ফাইবার দিয়ে রিপ্লেস করে দেয়া গেলে খারাপ হয়না।
chitosan যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে-





স্পোর্টস-ক্লথ, মোজা, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, বেবি-ক্লথ, হাউজ ইন্টেরিয়র, বেডিং, টাওয়েল, আন্ডার গার্মেন্টস, নন-উভেন ফেব্রিক সহ আরো অনেক টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস তৈরিতে এখন উল্লেখযোগ্য ভাবে কাইটোস্যান ব্যবহার করা হচ্ছে।








আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান টেক্সটাইল সেক্টরের। তবে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অপ্রাচুর্যের কারণে আমরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি। প্রায় ৯৯% কাঁচামালই আমাদেরকে বাইরের দেশগুলো থেকে আমদানি করতে হয়। কাঁচামালের সহজলভ্যতা বাড়াতে পারলে আমাদের টেক্সটাইল সেক্টরকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব কিছুনা। আমাদের সমুদ্রে যেহেতু কাঁকড়া-চিংড়ি এগুলো সুলভ তাই কাইটোস্যান ফাইবারের দিকে একটু নজর দিলে আমাদের দেশ হতে পারে বিশ্বের সব থেকে বড় কাইটোস্যান ম্যানুফ্যাকচারার কান্ট্রি।


আমাদের সুন্দরবনে প্রপ্ত কাকড়া  
আমরা কাকড়া মুলত সুস্বাদু খাবার হিসেবে খেয়া থাকিঃ 




লিখেছেনঃ
তনিমা রহমান,
৩৯তম ব্যাচ,
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
BUTex Learner Page

1 টি মন্তব্য:

FArid বলেছেন...

Very important article.
Thanks you.