কেমিক্যাল ম্যানেজমেন্ট পলিসি
X টেক্সটাইলস্ লিঃ তার সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং আইনগত ও পরিবেশগত নিয়ম-নিতির প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। প্রসজ্ঞগতই, টেক্সটাইল প্রক্রিয়াজাতকরণে বিভিন্ন ধরণের ডাইস ও কেমিক্যালের ব্যবহার অপরিহার্য। ডাইস ও কেমিক্যালের নিরাপদ মজুদ,ব্যবহার ও পরিবহণের নিমিত্তে এবং আইন মেনে সুন্দর পরিবেশ,স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে X টেক্সটাইল লিঃ একটি কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করেছে। এই ব্যাবস্থাপনা নীতি অনুসারে-
১) সকল আইনগত নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হবে।
২) নিরাপাদ ও বিকল্প কেমিক্যাল মূল্যায়ণ এবং ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৩) কেমিক্যাল সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যাদি যেমন- এমএসডিএস, টিডিএস, লেবেল, হ্যাজার্ড সিম্বল এবং সার্টিফিকেটসমূহ (আরএসএল ডিক্লারেশন লেটার, এপিও-ফ্রি সার্টিফিকেট ইত্যাদি) প্রস্তুতকারী অথবা সরবরাহকারীর নিকট থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
৪) কর্মীদের সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনার কর্মচারীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের (যেমন- কেমিক্যালের নিরাপদ ব্যবহার ও পরিচালন পদ্ধতি, ব্যক্তিগত সূরক্ষাকারী উপকরণ, মজুদকরণ, পূর্বসতর্কতানূলক ব্যবস্থা ইত্যাদি) উপর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধমে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং তাদের সচেতনতার বিকাশ ঘটাতে হবে।
৫) যে সকল কর্মী ডাইস ও কেমিক্যাল নিয়ে সরাসরি কাজ করে তাদেরকে পিপিই, এমএসডিএস, কেমিক্যালের নিরাপদ ব্যবহার ও পরিচালন ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তাদের মনোভাব প্রকাশের সু্যোগ দিতে হবে।
৬) আইন অনুসারে কেমিক্যাল বর্জ্যের যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৭) হ্রাসকৃত-ব্যবহার, পুনঃব্যাবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের সু্যোগ থাকলে তা কাজে লাগাতে হবে।
উপরোল্লেখিত নিয়ম-নীতি অনূসরণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের পরিবরতনের সাথে সঙ্গতি রেখে এ সকল নিয়ম-কানুনের পরিবরতন ও সংশোধন করা যেতে পারে।
ভূমিকা:
X টেক্সটাইলস্ লিঃ, এখানে সুতা থেকে কাঁচা/অপ্রক্রিয়াজাত বস্ত্র তৈরী করা হয়। অতঃপর এসব অপরিপক্ব বস্ত্রকে রং এবং আকার দেয়ার জন্য বিভিন্ন ডাইস ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। টেক্সটাইল কারখানা এমন এক শিল্প যেখানে ডাইস ও কেমিক্যালের ব্যবহারকে অগ্রাহ্য বা অস্বীকার করা যায় না। কেমিক্যালের ব্যবহার টেক্সটাইল শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত বস্ত্রের মান এর সাথে সরাসরি জড়িত। অতএব মানুষ ও পরিবেশের কল্যাণের দিক বিবেচনা করে ডাইস ও কেমিক্যালের সুব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন একটি সুন্দর ও সুপরিকল্পিত কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া। X টেক্সটাইলস লিঃ তার অভ্যন্তরীণ ডাইস ও কেমিক্যাল সংশ্লিষ্ট সুচারুরুপে কাজ সম্পন্ন করতে একটি বাস্তবসম্মত, পথনির্দেশিকাসহ,কর্মপ্রক্রিয়া সমন্বিত ও নিয়ম-নীতি সমৃদ্ধ কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রনয়ণ করেছে এবং অনুসরণ করে আসছে।
X টেক্সটাইলস্ লিঃ এর কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উদ্দেশ্যসমূহ (Objectives of the Chemical Management System):
বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য X টেক্সটাইলস লিঃ কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে। যেমন
১। নিরাপদ বা ঝুঁকিমুক্ত ডাইস বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে নিরাপদ পণ্য উৎপাদন করা।
২। ডাইস বা কেমিক্যালের উপযুক্ত ও যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩। নিরাপদ ও বিকল্প নিরাপদ ডাইস বা কেমিক্যালের মূল্যায়ন এবং সুযোগমত ব্যবহার করা।
৪। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৃত্তিগত ঝুঁকি হ্রাস করা এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৫। কেমিক্যাল বর্জ্যের শোধন ও সঠিকভাবে অপসারণের ব্যবস্থা করা।
৬। হ্রাসকৃত-ব্যবহার, পুনঃব্যাবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সম্পদের সংরক্ষন করা।
৭। দেশের আইনের সাথে সাথে কারখানার নিজস্ব নিয়ম-নীতির অনুসরণ করা।
উপোরোক্ত উদ্দেশ্যাবলী শুধুমাত্র যথাযথ ও বাস্তব কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।
X টেক্সটাইলস্ লিঃ এর কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া (Chemical Management Procedure):
কেমিক্যালের যথাযথ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে X টেক্সটাইলস লিঃ যথেষ্ট সচেতন। ডাইস ও কেমিক্যাল সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এখানে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ও কার্যকরী ব্যবস্থাপনা পর্ষদ রয়েছে। কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা প্রত্যেক টেক্সটাইল কারখানার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিবেচনার বিষয় যেহেতু উৎপাদিত পণ্যের মাণ ও নিয়োযিত কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি এর সাথে জড়িত। কেমিক্যাল/ডাইস সম্পর্কিত সকল সিদ্ধান্ত ও কর্ম-পরিকল্পনার বিষয় অত্র প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার এবং সিনিয়র প্রোডাকশন ম্যানেজার গুরুত্বের সাথে তদারকি করেন।
১। কেমিক্যাল সংগ্রহ বা প্রোক্রিউরমেন্ট (Chemical Procurement):
কোন কেমিক্যাল বা ডাইস নির্বাচনের পূর্বে, উক্ত কেমিক্যাল বা ডাইস পরিবেশে কতখানি প্রভাব ফেলবে তা বিবেচনা করা হয়, যেহেতু অত্র প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ কেমিক্যাল বা ডাইস ব্যবহারকারী কর্মীদের স্বাস্থ্য,নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যপারে সচেতন। যে সকল কেমিক্যালের কার্যকারীতা যথেষ্ট এবং পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব কম, সেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করে উৎপাদন ঠিক রাখাই অটো টেক্সটাইলস্ লিঃ এর কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে অত্র প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার্য্য প্রায় সকল কেমিক্যালই বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়। বিকল্প কিন্তু নিরাপদ কেমিক্যাল মূল্যায়ণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অত্র প্রতিষ্ঠান সজাগ থাকে এবং কেমিক্যাল প্রয়োগের ক্ষেত্রে নতুন কোন আবিষ্কার বা প্রবর্তনের সাথে নিজেকে হালনাগাদ রাখে। যেমন- এখনে Huntsman Chemical Effects নামক স্বনামধন্য কেমিক্যাল প্রস্তুতকারকের ডাইস্টাফ ‘Avitera SE’ ব্যবহার করা হয়, যা ‘সেভ দা আর্থ’(Save the Earth) শিরোনামে স্বয়ং প্রস্তুতকারক কর্তৃক বাজারজাত করা হয়।
কেমিক্যাল সংগ্রহ বা প্রোক্রিউরমেন্ট বলতে শুধুমাত্র কেমিক্যাল ক্রয় করাক বুঝায় না, বরং এর সাথে সাথে কেমিক্যাল সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যাদি যেমন- এমএসডিএস, টিডিএস, লেবেল, হ্যাজার্ড সিম্বল এবং সার্টিফিকেটসমূহ (আরএসএল ডিক্লারেশন লেটার, এপিও-ফ্রি সার্টিফিকেট ইত্যাদি) প্রস্তুতকারী অথবা সরবরাহকারীর নিকট থেকে সংগ্রহ করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এ সকল তথ্যাদি এবং সার্টিফিকেটসমূহ আবার সময়ের সাথে সংগতি রেখে সরবরাহকারী/প্রস্তুতকারীর মাধ্যমে হালনাগাদ করা হয়।
২। কেমিক্যাল মজুদকরণ (Chemical Storage):
টেক্সটাইল কারখানার জন্য কেমিক্যাল একটি প্রত্যক্ষ কাঁচামাল। তাই প্রতিদিন প্রচুর ডাইস বা কেমিক্যালের প্রয়োজন হয়। অত্র প্রতিষ্ঠানের ভান্ডার বা স্টোর বিভাগ ডাইস বা কেমিক্যালের সরবরাহ ও চাহিদার মাঝে সঙ্গতি রাখে। ক্রয়কৃত ডাইস/কেমিক্যাল কারখানার অভ্যন্তরে নিজস্ব গুদামে সংগ্রহ করা হয়। অত্র প্রতিষ্ঠানের ডাইস/কেমিক্যাল গুদাম যথেষ্ট প্রশস্ত, সুগঠিত এবং বায়ুচলাচলযুক্ত। এই গুদামের সমস্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয় স্টোর বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের মধ্যে সম্বন্বয় সাধনের মাধ্যমে। অত্র প্রতিষ্ঠানের কেমিক্যাল মজুদকরণ প্রক্রিয়া নিম্নোক্তভাবে পরিচালিত হয়-
ক) কেমিক্যাল আনলোডিং (Chemical Unloading):
কেমিক্যালের নিরাপদ প্রয়োগ ও পরিচালনার নিমিত্তে এবং দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে কেমিক্যাল ক্রয় থেকে শুরু করে অপসারণ পর্যন্ত কেমিক্যাল সম্পর্কিত প্রত্যেকটি বিষয়ের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়। কেমিক্যালবাহী যানবাহণ কারখানায় প্রবেশের পূর্বেই স্টোর বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল ধরণের পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া হয়। স্টোর বিভাগের প্রশিক্ষিত লোডারগণ সর্বদা ব্যক্তিগত সূরক্ষাকারী উপকরণ ব্যবহার করে এবং আগত যানবাহণ থেকে ডাইস/কেমিক্যাল খালাস করে নেয়। স্টোর কিপার বা ভান্ডার রক্ষক ও সুপারভাইজারগণ এই খালাসকরণের সবকিছু তদারক করেন। এ সময় সব ধরণের পূর্বসতর্কতা অবলম্বন করা হয় যেহেতু লোডারগণ ভারী প্লস্টিক কেমিক্যাল কন্টেইনার, কেমিক্যাল কার্টন বা বস্তা নিয়ে কাজ করে এবং এই কাজে দুর্ঘটনার সুযোগ রয়েছে। সব ধরণের দূর্ঘটনা এড়াতে তারা যত্ন নিয়ে কাজ করে। যারা কেমিক্যাল পরিচালনার সাথে সরাসরি জড়িত, অত্র প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
খ) কেমিক্যাল বিন্ন্যাস ও বিন্যাস্তকরণ (Chemical Sorting & Storing):
অত্র প্রতিষ্ঠানে কেমিক্যাল স্টোর বা গুদামকে শুধুমাত্র ডাইস/কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। কর্মীরা ব্যবহারের উদ্দ্যেশ্যে কেমিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার বা বিতরণ কেন্দ্র থেকে ডাইস/কেমিক্যাল সংগ্রহ করে থাকে। কেমিক্যালের ধরণ ও গূণাগুন অনুসারে ডাইস/কেমিক্যালকে সাজিয়ে রাখা হয়। নিরাপদ কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য কেমিক্যাল কম্পাটিবিলিটি চার্ট অনুসরণের চেষ্টা করা হয়। বায়ু চলাচল ও পরবর্তী নিরাপত্তার জন্য ডাইস/কেমিক্যালকে নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত সাজানো হয়। অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে কেমিক্যাল স্টোরে জণসাধারণের প্রবেশ সংরক্ষিত। এখানে কোন কিছু খাওয়া বা পান করা নিষেধ। অগ্নিদূর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য স্টোরে পর্যাপ্ত স্মোক ডিটেক্টর, ফায়ার এক্সটিংগুইশার সহ যাবতীয় ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্টের ব্যবস্থা আছে। ইগজস্ট ফ্যানের মাধ্যমে স্টোরের আভ্যন্তরীণ বায়ু চলাচল ঠিক রাখা হয়। দূর্ঘটনা বা ছলকে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে কিছু স্থানে সেকেন্ডারী কন্টেইনমেন্ট ব্যবহার করা হয়। স্ব স্ব কেমিক্যাল কন্টেইনার বা বস্তায় এমএসডিএস লাগিয়ে রাখা হয়। কোন ডাইস/কেমিক্যাল কন্টেইনার বা বস্তার লেবেল বা নাম নষ্ট হলে আবার তা নতুন করে লাগিয়ে দেয়া হয়।
গ) কেমিক্যাল বিতরণ (Chemical Distribution):
কেমিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার বা বিতরণ কেন্দ্র থেকে ডাইস/কেমিক্যাল বিতরণ করা হয়। ডাইস/কেমিক্যালের সুন্দর বিতরণ ও প্রয়োগের জন্য এবং ঝুঁকি এড়াতে প্রত্যেক ডাইস/কেমিক্যালকে তার নিজস্ব কম্পার্টমেন্ট বা কোঠায় রাখা হয়। প্রত্যেক কম্পার্টমেন্ট বা কোঠাতে কেমিক্যালের নামসহ ঝুঁকিচিহ্ন লাগানো আছে। হঠাৎ ছলকে পড়া বা কোন জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য এই কম্পার্টমেন্ট গুলো সুন্দর প্রকৌশল দ্বারা গঠিত এবং অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজের মাধ্যমে ইটিপি’র সাথে সংযুক্ত। কর্মীরা ডাইস/কেমিক্যাল আনা-নেওয়া করার জন্য নির্দিষ্ট ডাইস/কেমিক্যাল পাত্র বা বালতি এবং ট্রলি ব্যবহার করে। কেমিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত স্টোর কিপার ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার দেখাশুনা করে এবং তার অধীনে কর্মরত কর্মীদেরকে পরিচালিত করে।
ঘ) জরুরী অবস্থার জন্য প্রস্তুতি (Emergency Preparedness):
যে কোন ধরণের বিরুপ অবস্থা বা দূর্ঘটনা, যেমন-অগ্নিদূর্ঘটনা,কেমিক্যাল ছলকে পড়া বা স্পিলেজ ইত্যাদি মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট পূর্বসতর্কতা বা পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা আছে। সম্পূর্ণ কারখানা এবং স্টোরের অভ্যন্তরে যে কোন ধরণের অগ্নিদূর্ঘটনা মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা, যেমন- ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার এলার্ম (হস্তচালিত ও স্বয়ংক্রিয়),অন্যান্য ফায়ার ফাইটিং যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা সহ কর্মীদেরকে কারখানার অভ্যন্তরে ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণ,অগ্নিদূর্ঘটনার মহড়া ও ব্যবস্থা করা হয়।
জরুরী মুহূর্তে ব্যবহারের জন্য কেমিক্যাল বিতরণ কেন্দ্রে ফার্স্ট এইড বক্স রাখা আছে। এখানে সেফটি শাওয়ার ও আইওয়াশের ব্যবস্থাও আছে যাতে কর্মীরা দরকার মত ব্যবহার করতে পারে।অপর দিকে, জরুরী চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য কারখানার অভ্যন্তরে একটি সুসজ্জিত মেডিক্যাল সেন্টার আছে যা একটি দক্ষ ও ফুলটাইম মেডিক্যাল টিম দ্বারা পরিচালিত।
ঙ) এমএসডিএস ব্যবস্থাপনা (MSDS Management):
ডাইস/কেমিক্যাল সম্বন্ধে কর্মদের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য কেমিক্যাল স্টোর ও বিতরণ কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থানে বা কেমিক্যাল কন্টেইনারে ‘দ্রব্যের নিরাপত্তা তথ্য বিবরণী চার্ট’ (এমএসডিএস) ও ‘সংক্ষিপ্ত/সহজকৃত নিরাপত্তা তথ্য বিবরণী চার্ট’ বা এ্যাবস্ট্র্যাক্ট এমএসডিএস সংযুক্ত করা হয়। ‘সংক্ষিপ্ত/সহজকৃত নিরাপত্তা তথ্য বিবরণী চার্ট’ বা এ্যাবস্ট্র্যাক্ট এমএসডিএসকে মাতৃভাষায় সংকলিত করা হয় যাতে শ্রমিকগণ এ্যাবস্ট্র্যাক্ট এমএসডিএস সহজে পড়তে পারে এবং তারা যেসব ডাইস/কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করে সেসব ডাইস/কেমিক্যাল সম্বন্ধে তাদের জ্ঞানকে বাড়াতে পারে। কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা পর্ষদ কেমিক্যাল প্রস্তুতকারক/সরবরাহকারী সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সকল এমএসডিএস কে হালনাগাদ রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে।
চ) ব্যক্তিগত সুরক্ষাকারী উপকরণ (Personal Protective Equipment):
ডাইস/কেমিক্যাল নিয়ে যখন কোন কাজ করা হয়, কারখানার নিয়মানুযায়ী প্রত্যক কর্মীর জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিগত সূরক্ষাকারী উপকরণ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সূরক্ষাকারী উপকরণ সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট বাক্স রাখা আছে যাতে কর্মীরা সহজে দরকার অনুযায়ী সূরক্ষাকারী উপকরণ ব্যবহার করতে পারে। স্টোর ডিপার্টমেন্টে নিয়োজিত স্টোর কিপার ও সুপারভাইজারগণ যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের অধীনে কর্মরতদেরকে তারা দক্ষতার সাথে পরিচালিত করতে পারে। কেমিক্যাল স্টোর বা বিতরণ কেদ্রে সুষ্ঠু ডাইস/কেমিক্যাল পরিচালনার সাথে তারা সরাসরি জড়িত থাকে। মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের কর্মকর্তাগণ কারখানার অভ্যন্তরীণ কর্মপরিবেশ পরিদর্শন করে সবকিছুর তদারক করেন। অতঃপর তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নতুন ও সংশোধনীমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ।
ছ) খালি ড্রাম বা কন্টেইনার ব্যবস্থাপনা (Empty Drum/Container Management):
ডাইস/কেমিক্যাল ব্যবহার করার কারণে প্রতিনিয়ত খালি ড্রামের সংখা বাড়তে থাকে। স্টোর বিভাগ এসকল খালি ড্রামের যথাযথ ব্যবস্থা করে থাকে। ডাইস/কেমিক্যাল ব্যবহারের পর খালি ড্রাম/কন্টেইনারকে ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর ধোয়া হয়। এদেরকে পরিষ্কার বা ধোয়ার পূর্বে ড্রাম/কন্টেইনারের লেবেল তুলে ফেলা হয়। এরপর এসব ড্রাম/কন্টেইনার গুলোকে প্রত্যক্ষ সূর্যের আলো/রোদ থেকে দূরে রাখতে দেশের আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ছাউনির নিচে রাখা হয়। অতঃপর এসকল ড্রাম বা কন্টেইনার নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হয়।
৩। ডাইস/কেমিক্যালের যথাযথ প্রয়োগ (Proper Applicatio of Dyes & Chemicals):
ডাইং ফ্লোরে কর্মরত শ্রমিক বা ডাইং/ফিনিশিং মেশিন চালক শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করে- বিধায় তারা ডাইস বা কেমিক্যালের নিবিঢ় সংস্পর্শে আসে। ডাইং/ফিনিশিং রিকুইজিশন অনুযায়ী তারা কেমিক্যাল বিতরণ কেন্দ্র থেকে ডাইস/কেমিক্যাল সংগ্রহ করে এবং মেশিনে প্রয়োগ করে। যখনই তারা কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করবে (যেমন-ডাইস/কেমিক্যাল সংগ্রহ করা,আনানেওয়া করা, মেশিনে প্রয়োগ করা ইত্যাদি) তখনই ব্যক্তিগত সূরক্ষাকারী উপকরণ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। কেমিক্যাল গ্রহণ ও প্রয়োগের সময় ডাইস/কেমিক্যালের পাত্র বা বালতিতে ডাইস/কেমিক্যাল অনুসারে লেবেল বা ট্যাগ ব্যবহার করতে হয়, যাতে ডাইস/কেমিক্যালের লেবেল বা নাম না থাকার কারণে ভুল প্রয়োগ ও দূর্ঘটনার সুযোগ না থাকে।
শ্রমিক/কর্মীদের যাতে জ্ঞানের বৃ্দ্ধি হয় এবং তারা নিরাপদে ডাইস/কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে প্রত্যেক তিন মাসে কমপক্ষে একবার বিশেষ কিছু বিষয়ের (যেমন-নিরাপদে ডাইস/কেমিক্যাল ব্যবহার, যথাযথ ব্যক্তিগত সূরক্ষাকারী উপকরণের ব্যবহার, নিয়াপত্তার প্রস্তুতি, সহজ/সংক্ষিপ্ত এমএসডিএস ইত্যাদি) উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মনোভাব প্রকাশের সুযগ দেয়া হয় এবং উপযুক্ত মাধ্যমে উক্ত মনোভাবের বিকাশ ঘটানোর সুযোগ দেয়া হয় যাতে নিরাপদ কেমিক্যাল পরিচালনা ও প্রয়োগের বাস্তবায়ন সহজ হয়। কারখানার বাহিরেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশ নেয়া হয় এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত নিয়ম-কানুনের সাথে নিজেদেরকে চলমান রাখার চেষ্টা করা হয়।
ডাইং/ফিনিশিং ফ্লোরে খাওয়া বা পান করা সকলের জন্য নিষেধ। এই নিয়ম শ্রমিকদের মঙ্গলের জন্য করা হয়েছে। কারখানার পক্ষ থেকে খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়। তাই ফ্লোরে খাবার পানির খালি বোতল এবং কেমিক্যালের কোন বালতি বা পাত্র লেবেল ছাড়া রাখা নিষেধ। এর দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়ানো সম্ভব।
৪। কেমিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Chemical Waste Management):
টেক্সটাইল প্রসেসিং একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া যেখানে বিভিন্ন ধরণের ডাইস-কেমিক্যালের সাথে সাথে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। বস্ত্র প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য পানির বিকল্প নেই এবং তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে প্রচুর ডাইস/কেমিক্যাল ব্যবহারের সাথে সাথে প্রচুর দূষিত পানির উৎপন্ন হয় যা অগ্রাহ্য করার উপায় নেই।দূষিত পানিকে শোধন করার জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানে একটি কার্যকরী ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন করা হয়েছে যা সর্বক্ষণ দুষিত পানিকে শোধন করছে। ইটিপিতে আগত এবং ইটিপি হতে শোধনকৃত নির্গত পানির সমস্ত রেকর্ড রাখা হয় পরবর্তী প্রয়োজনের জন্য। দূষিত পানি শোধনের ফলে অনেক স্লাজের সৃষ্টি হ্য়। আইনগত পন্থায় এ স্লাজের ব্যবস্থা করা হয়। দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ছয় মাস সংরক্ষণ করার পর অত্র প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ল্যান্ড ফিলিং সাইট বা মাটি ভরাটের জায়গায় অপসারণ করা হয়।
উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে প্রতিনিয়ত অনেক বর্জ্য, যেমন-কার্টন,পলিথিন,টুকরো কাপড়,ফ্যাব্রিক ডাস্ট ইত্যাদির উদ্ভব হয়। এ সকল বর্জ্যেরও যথাযথ ব্যবস্থা নয়া হয়। কারখানার অভ্যন্তরকে পরিষ্কার ও পরিপাটি রাখার নিমিত্তে একটি পরিচ্ছন্ন-কর্মীর দল বা ক্লিনার গ্রুপ রয়েছে যারা সর্বক্ষণ কাজ করে থাকে। যথার্থ ভাবে পরিষ্কির ও ময়লা ফেলার বিষয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় যেন তারা তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারে। তারা ময়লা/বর্জ্য সংগ্রহ করার পর ময়লাগুলোকে ধরণ অনুযায়ী আলাদা করে পুনঃরায় কাজে লাগবে এমন ময়লা স্টোর সেকশনে পাঠিয়ে দেয় এবং অবশিষ্টাংশ ফেলে দেয়।
অত্র প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ কমপ্লায়েন্স বিভাগের কর্মকর্তা দ্বারা বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শিত হয়। স্টোরসহ অন্যান্য বিভাগের শ্রমিক বা কর্মচারীগণ বর্জ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করছে কিনা তা কমপ্লায়েন্স বিভাগ কর্তৃক পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৫।আমাদের ভালো চর্চা ও উদ্দ্যোগ সমূহ (Our Good Practices & Initiatives):
কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার চর্চায় অগ্রপথিক হওয়ার জন্য অত্র প্রতিষ্ঠান সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব উপায়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াই এর মূল লক্ষ্য। বাস্তব কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োগের জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়া হয়েছে এবং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন-
(ক) প্রযুক্তির মূল্যায়ণ (Technolodgy Assessment):
নতুন প্রযুক্তির মূল্যায়ণ ও ব্যবহারের মাধ্যমেই সময়,অর্থ ও সম্পদের সুব্যবহার ও সংরক্ষণ করা সম্ভব। চলমান মেশিনগুলোকে আরও কম লিকার রেশিওতে চালানো যায় কি না তা প্রকৌশলী ও ডাইও এক্সপার্ট দ্বারা মেশিনগুলোর কার্যক্ষমতা যাচাই করা হয়। লিকার রেশিও টেক্সটাইল কারখানার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিকার রেশিও কমাতে পারলেই ডাইস ও কেমিক্যালের ব্যবহার কমিয়ে কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব। এমন ডাইস/কেমিক্যাল,ডাইস অক্সিলিয়ারিজ যা ব্যবহার করলে লিকার রেশিও কম লাগে বা ওয়্যাশ সাইকেল বাদ দেয়া যায়-তার কোন আবির্ভাব বা প্রবর্তন ঘটলে অত্র প্রতিষ্ঠানের উচ্চ ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে যাচাই করে কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া হয়।
(খ) লিকার রেশিও সম্বন্বয় করা (Adjusting Liquor Ratio):
টেক্সটাইল প্রক্রিয়আজাতকরণে লিকার রেশিও কমানো বা এডজাস্ট করার মাধ্যমে ডাইস/কেমিক্যাল ও পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব। লিকার রেশিও কমানো বা এডজাস্ট করার মাধ্যমে তা করা যায়। তা না হলে বিকল্প কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যাতে লিকার রেশিও কম লাগে। প্রযুক্তি মূল্যায়ণের মাধ্যমে এখানে হান্টসম্যান কেমিক্যাল প্রস্তুতকারকের Avitera SE- নামক ডাইস্টাফ ব্যবহার করা হচ্ছে-যা স্বয়ং হান্টসম্যান কর্তৃক “সেভ দা আর্থ” শিরোনামে বাজারজাত করা হয়। আবার তৃতীয় প্রজন্মের ওয়াশ অফ, যেমন-ডেকল আরএসএ (“রিসোর্স সেভিং এজেন্ট”) ও ক্রসকালার বিসিএসার ব্যবহার করা হচ্ছে যা পানি সম্পদ সংরক্ষণে সহায়তা করে। বিদ্যমান ডাইস্টাফের চেয়ে ভালো কোন আবিষ্কার থাকলে তা ব্যবহারের যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়।
(গ)পুনঃপ্রকৌশলের প্রয়োগ (Chemical Reengineering):
টেক্সটাইল বা বস্ত্র প্রক্রিয়াজাত করা একটি চলমান পুনঃপ্রক্রিয়া যার জন্য বিভিন্ন ধরণের ডাইস/কেমিক্যালের প্রয়োজন হয়। ফ্যাব্রিক রেসিপিতে সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রচুর ডাইস/কেমিক্যাল ও পানি সম্পদ বাঁচানো সম্ভব। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রোডাকশন টিম ট্রায়াল ও ইরোর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডাইস/কেমিক্যালের ডোজকে অপ্টিমাইজ করার চেষ্টা চালিয়ে থাকে। যেমন- ১গ্রাম/লিটার হিসেবে কোন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে এই ডিটারজেন্টের হারকে ১০%(0.১গ্রাম) কমিয়ে ০.৯গ্রাম/লিটার দ্বারা কয়েকটি ট্রায়াল ব্যাচ করা হয়। উক্ত ব্যাচগুলোর রিপোর্ট রিভিউ করে প্রসেস ডিজাইনকে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়। কাজের মানকে ঠিক রেখে প্রত্যেক কেমিক্যালের ডোজ অপ্টিমাইজেশন এভাবে করা হয়। আবার বিদ্যমান প্রসেস ডিজাইনকে পুনঃমূল্যায়ন করা হয় যদি প্রসেসের কোন অংশকে বাদ দিয়ে নতুন প্রসেস ডিজাইন তৈরী করা যায়। যেমন- কোন প্রসেস ডিজাইনে ৫মিনিটের অভারফ্লো রিঞ্জিং আছে। এখন প্রোডাকশন টিম এই পুনঃপ্রক্রিয়া ও পুনঃপ্রকৌশলের মাধ্যমে এই রিঞ্জিং সাইকেলকেলের পরিবর্তে সিঙ্গেল ফিল ওয়াশের ড্রেন সাইকেলের মাধ্যমে অপ্টিমাইজড করা যায় কিনা তার চেষ্টা করে থাকে। শক্তি ও সম্পদের সংরক্ষণে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। অত্র প্রতিষ্ঠানের ডাইং ও প্রোডাকশন টিম সর্বদা উক্ত বিষয় সম্পর্কে নতুন প্রবর্তনের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে।
(ঘ) সঠিক তথ্য সংরক্ষণ (Proper Record Keeping & Metering):
পানি ও কেমিক্যালের ব্যবহারের পরিমাণ যাচাই করাই কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার কার্যকারীতা মূল্যায়নের একমাত্র পরিমাপক। অত্র প্রতিষ্ঠানে পানি ও কেমিক্যালের ব্যবহারের পরিমাণ সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। তথ্য সংরক্ষণ ব্যতীত পানি বা কেমিক্যালের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা অসম্ভব। কেমিক্যালের মোট ব্যবহার স্টোর ডিপার্টমেন্ট থেকে এবং পানির মোট ব্যবহার ও অপসারনের পরিমাণ মিটার স্থাপনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়। আবার প্রত্যেক সেকশন বা বিভাগের কেমিক্যাল ও পানি বাবহারের আলাদা আলাদা হিসেব রাখা হয় যাতে পরবর্তী কোন বিশ্লেষণে কাজে লাগে।
(ঙ)সচেতনতা বৃদ্ধি (Awareness Building up):
ডাইস/কেমিক্যালের সঠিক ব্যবহার ও নিরাপদ কেমিক্যাল পরচালনা সম্পর্কে কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদানের করে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডাইস-কেমিক্যালসহ পানি ও শক্তি সম্পদের অপচয় ও অপব্যভার হ্রাস করা মম্ভব। অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ চলাকালে শ্রমিক-কর্মীদের সাথে মত আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা প্রদান করা হয়। অল্প সচেতনতাই বড় ক্ষতি ও দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারে। অত্র প্রতিষ্ঠানের ডাইং ও ফিনিশিং ফ্লোরে- যেখানে ডাইস/কেমিক্যাল সরাসরি ব্যবহার করা হয়, সেখানে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত সচেতনতামূলক পোস্টার লাগানো আছে। এছাড়া ডাইস/কেমিক্যালের সঠিক ব্যবহার ও নিরাপদ কেমিক্যাল পরচালনা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নিয়মিত ভাবেই প্রদান করা হয়।
৬। রিভিউ/চেকিং (Review/Checking):
টেক্সটাইল প্রক্রিয়াজাতকরণে অত্র প্রতিষ্ঠানই শীর্ষে না। আরও টেক্সটাইল কারখানা আছে যারা এর চেয়ে ভাল। যারা শীর্ষে আছে অত্র প্রতিষ্ঠান তাদেরকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। অত্র প্রতিষ্ঠান এমন একটি কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রবর্তন ও অনুসরণ করতে যাচ্ছে, যা হবে কার্যকর, নিরাপদ ও যথার্থ। কেমিক্যাল সম্পর্কিত যেকোন বিষয় নিবিড় ভাবে প্রর্যবেক্ষণ করা হয় যাতে সমস্যা ও দূর্বলতা সহজ সমাধান করে আরও সামনে অগ্রসর হতে পারে। কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত যেকোন বিষয় নিয়োজিত ব্যবস্থাপনা পর্ষদের মাঝে খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করা হয় যাতে এ সম্পর্কিত সবাই মত প্রকাশের সুযোগ পায় এবং কার্যকরণ অংশ থেকেই সংশোধন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। অত্র প্রতিষ্ঠান সর্বদা কেমিক্যাল ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং পরিবেশের অনূকূলতার দিক মাথায় রেখে সব ধরণের বাস্তব ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
৭। সংশোধনীমূলক পদক্ষেপ (Corrective Action Plan):
কোন কাজ বা সিদ্ধান্তের একটি অংশ হল ত্রুটি । X টেক্সটাইলস লিঃ এর কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে পূর্বেকার ভুল বা দূর্বলতা সংশোধণের জন্য সব ধরণের সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। কেননা, কার্যকরণ অংশে একটি ছোট ভুল সমস্ত উন্নয়নের পদক্ষেপকে পালটে দিতে পারে। এ কারনে সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও তার নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। অত্র প্রতিষ্ঠানের কর্মস্থল বা ওয়ার্কপ্লেস প্রত্যকদিন পরিদর্শন করে যেসকল স্থানে ডাইস/ কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এমন স্থানে বিদ্যমান সমস্যা বা উদ্ভুত অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। অবস্থার কোন পরিবর্তন পেলে সংগে সংগে সংশ্লিষ্ট মাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করে তার সংশোধন মূলক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়। এমন কি সরাসরি কর্মীদের নিকট থেকেও মতামত গ্রহণ করা হয় যাতে কোন সমস্যার সমাধান রুট লেভেল থাকে করা যায়।
আমাদের অর্জন (Our Achievement):
আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ পানি, গ্যাসসহ ডাইস ও কেমিক্যালের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য একটি দক্ষ কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা পর্ষদের মাধ্যমে X টেক্সটাইলস লিঃ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এনভায়রণমেন্ট কণজার্ভেশণ রুলস’৯৭ অনুসারে টেক্সটাইল কারখানার জন্য পানি ব্যবহারের মানদন্ড হচ্ছে-১০০লিটার/কেজি। ২০১১সালে X টেক্সটাইলস লিঃ এ পানি ব্যবহারের হার ছিল ২২০লিটার/কেজি, ২০১২ সালে ছিল ১৬৭লিটার/কেজি। বর্তমানে এই হার ১৩৫লিটার/কেজি। পানি ব্যবাহের এই প্রবনতা X টেক্সটাইলস লিঃ এর কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার সাফল্যের সূচনাকে নির্দেশ করে।
বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতার সাথে তৈরী পোশাক শিল্প বা টেক্সটাইল প্রসেসিং ব্যবসায়ে টিকে থাকা খুবই কষ্টসাধ্য। দিন দিন বায়ার বা কাস্টমারদের পক্ষ্য থেকে আরোপিত শর্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এমতাবস্থায় কাস্টমার ও শ্রমিকদের সন্তুষ্টি অর্জন দুষ্কর। সকল প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে X টেক্সটাইলস লিঃ সাফল্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে- এটা এক বিশাল পাওয়া। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বায়ার ‘H&M’ এর নাম উল্লেখযোগ্য। গত ২০নভেম্বর ২০১৩ইং তারিখে ‘H&M’এর একটি অঘোষিত অডিট হয়ে যায়-যা নিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পর্ষদসহ সকলে শংকিত ছিল। কোন প্রকার পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই সফলভাবে অডিট সম্পন্ন হয় এবং X টেক্সটাইলস লিঃ ভালভাবে অডিট পাশ করে। অডিটে ICOC (Code of Conduct Index) নম্বর ছিল ৮৩%, যা অত্র প্রতিষ্ঠানের কষ্টার্জিত সফলতার সূচক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন