তাঁতি থেকে টয়োটার মালিক
অধ্যবসায়, পরিশ্রম এবং সৃজনশীলতা এই তিনকে একবিন্দুতে মিলিত করতে পারলে যে কোনো অবস্থান থেকেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। এই মূলমন্ত্র ধারণ করেই পৃথিবীতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাকিচি তয়োদা। চারদিকে যখন অর্থনৈতিক মন্দা ঠিক তখন অন্যদের মতো হতাশ না হয়ে নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সামান্য তাঁতি থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন টয়োটা কোম্পানির মালিক হিসেবে। এখন টয়োটা বিশ্বের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত একটি গাড়ি নির্মাণ ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান।
টয়োটার ইতিহাস
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা মোটর করপোরেশন। টয়োটা শব্দটি এসেছে কোম্পানি মালিকদের উদ্ভাবকদের রাজা খ্যাত সাকিচি তয়োদার নাম থেকে। সাকিচি তয়োদা জন্মগ্রহণ করেন ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৭ সালে। সাকিচি গরিব তাঁতির ঘরে জন্মেছিলেন বটে, কিন্তু কঠিন বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ করে সফল হয়েছেন। তৎকালীন জাপানের নাগোয়ার দক্ষিণ-পূর্বে মধ্য-দক্ষিণ হনসু অঞ্চলে কোরোমো নামের একটি শহর ছিল। শহরের বাসিন্দাদের হাতে চালানো তাঁতে খুবই ধীরগতিতে রেশম গুটি থেকে তৈরি হতো রেশমি কাপড়। একদিকে কম কাপড় বুনন অপরদিকে দেশ-বিদেশে কাপড়ের চাহিদা কমায় বাসিন্দাদের আর্থিক অসঙ্গতিতে ফেলে দেয়। এমন সময় ওই শহরের বাসিন্দা সাকিচি তয়োদা চুপচাপ বসে আর্থিক অবনতির পরিস্থিতি দেখতে নারাজ। তখন তিনি মনোনিবেশ করেন যন্ত্রচালিত তাঁত উদ্ভাবনের দিকে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে তিনি সফল হলেন। আধুনিক এ যন্ত্রের ব্যবহার করলেন নিজের কাজে। মেশিনের সাহায্যে আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে কাজ হতে লাগল। কাপড়ও বেশি বুনন হলো। এ কাজে দুটো পয়সার মুখ দেখতে শুরু করলেন তিনি। তখন নিজেদের অভাব ঘোচাতে যন্ত্রচালিত তাঁত যেন আশার আলো জুগিয়েছিল। কাজের সফলতায় নতুন কিছু উদ্ভাবনে তিনি আরও বেশি উৎসাহী হলেন। এ উৎসাহ আরও বেড়ে যায় তার তয়োদা অটোমেটিক লুম কোম্পানি উদ্ভাবিত একটি মেশিনের প্যাটেন্ট ১০ লাখ ইয়েনে বিক্রি করার সুযোগ পেয়ে। মেশিনটির উপযোগিতা বিবেচনা করে ক্রয় করেছিল ব্রিটেনের প্ল্যাট ব্রাদার্স। সে সময়ে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণের ওই অর্থ সাকিচি তয়োদা বিনিয়োগ করেন গাড়ির ইঞ্জিন বানানোর কাজে। নতুন উদ্ভাবনী কাজের দায়িত্ব দেন নিজের ছেলে কিচিরো তয়োদাকে। ১৯৩৫ সালে প্রথমবারের মতো জে-ওয়ান মডেলের গাড়ির ইঞ্জিন উদ্ভাবনে সক্ষম হন কিচিরো তয়োদা। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তয়োদা পরিবারকে। আনুষ্ঠানিকভাবে তয়োদা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৮ আগস্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উচ্চারণ সুবিধার বিবেচনায় তয়োদা শব্দটিকে পাল্টে করা হয় টয়োটা। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা মোটর করপোরেশনের সদর দফতর জাপানের টয়োটা সিটিতে। পরবর্তীতে সাকিচি তয়োদাকে ‘কিং অব জাপানিজ ইনভেনটর’-এর খ্যাতি প্রদান করা হয়। ১৯৫৯ সালে সাকিচির শহরের নাম পাল্টে রাখা হয় টয়োটা সিটি।
সাকিচি তয়োদার মূলমন্ত্র
♦ সব সময় নিজ দায়িত্ব এবং কোম্পানির প্রতি অবদান রাখতে বিশ্বস্ত হতে হবে
♦ অধ্যবসায়, সৃজনশীলতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে
♦ বাস্তবমুখী চিন্তা করার পাশাপাশি অস্থিরতা পরিত্যাগ করতে হবে
♦ কর্মক্ষেত্রে ঘরোয়া পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে
♦ সর্বদা সৃষ্টির রহস্যে বিশ্বাস স্থাপন করে আনুগত্য স্বীকার করতে হবে
বর্তমানে টয়োটা গ্রুপ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম গ্রুপ অব কোম্পানিজ। টয়োটা কোম্পানি সিডান, এসইউভি, হালকা ট্রাক প্রভৃতি শ্রেণির গাড়ি নির্মাণ করে আসছে। কোম্পানির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানিটি ২০০ মিলিয়ন যানবাহন প্রস্তুত করেছে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে টয়োটার কারখানা। এই টয়োটা কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়েছিল সাকিচি তয়োদার হাত ধরে। যিনি এক সামান্য তাঁতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও নিজ মেধা আর সৃজনশীলতার ফলে টয়োটা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সাকিচি তয়োদা ছিলেন কসাই-সিজুওকা দরিদ্র তাঁতি পরিবারের সন্তান। তার প্রথম যন্ত্রচালিত তাঁতের আবিষ্কারের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠা পায় টয়োটা গ্রুপ। জাপানের মেশিন ইন্ডাস্ট্রির বড় ধরনের উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে অগ্রগামী ভূমিকা রাখে। ১৮৯০ সালে সাকিচি তয়োদা কাঠের হস্তচালিত তাঁতের আবিষ্কার করেন। এর ছয় বছর পর কাঠ ও লোহা দিয়ে তৈরি করেন পাওয়ার লুম। ১৮৯৭ সালে পাওয়ার লুম দিয়ে সুতি কাপড় তৈরিতে সফল হন। ১৯০২ সালে পাওয়ার লুম দিয়ে কাপড় তৈরি একটি লাভজনক পর্যায়ে আসে। ১৯১০ সালে তার আবিষ্কৃত মেশিন আমেরিকা ও ইউরোপের নজর কাড়ে। সেসব দেশে এই পাওয়ার লুমের চাহিদা তৈরি হয়। অসামান্য এই আবিষ্কারের সফলতা হিসেবে ১৯১২ সালে জাপানি সরকারের পক্ষ থেকে ব্লু রিবনের সম্মানী মেডেল দেওয়া হয় সাকিচি তয়োদাকে। পাওয়ার লুমের কার্যকারিতা ও অবদানের গুরুত্ব বিচারে ১৯২৪ সালে আবারও একই পুরস্কার পান। এরই মধ্যে সাকিচির অর্জিত অর্থের পরিমাণও আসে একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে। নিজের অর্থ থেকে তিনি ১৯২৫ সালে ‘ইমপেরিয়াল অব ইনভেনশান অ্যান্ড ইনোভেশান’কে ১ কোটি ইয়েন দান করেন। ১৯২৬ সালে এখান থেকে তাকে একটি স্মারক দেওয়া হয়। ১৯২৯ সালে যুক্তরাজ্যের ব্রাদার্স অ্যান্ড কোং-এর কাছে ১০ লাখ ডলারে অটোমেটিক লুমের প্যাটেন্ট হস্তান্তর করেন। ১৯৩০ সালে মারা যাওয়ার পর তিনি জুনিয়র গ্রেড অব দ্য ফিফথ মরণোত্তর পুরস্কার পান। জাপানি সরকারের পক্ষ থেকে তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৩৩ সালে তয়োদা অটোমেটিক লুম ওয়ার্কসের একটি বিভাগ হিসেবে টয়োটা অটোমোবাইল যাত্রা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সাকিচির ছেলে কিচিরো টয়োডা জি-১ মডেলের কার আবিষ্কার করেন ১৯৩৫ সালে। ১৯৩৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাবলিক কোম্পানি হিসেবে নতুন লোগো ধারণ করে যাত্রা শুরু করে। এ সময় তাদের ২৭ হাজার শেয়ারহোল্ডার ছিল। তারপর টয়োটা মটোর কোং স্বায়ত্তশাসিত কোম্পানিতে পরিণত হয় ১৯৩৭ সালে।
সেরা হওয়ার গল্প
নিজ দেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টয়োটার কারখানা রয়েছে। ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো বিদেশে গাড়ি বিক্রি শুরু করে এ কোম্পানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টয়োটা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে। ২০০৮ সালে পৃথিবীর গাড়ি বাজারের ৩২ শতাংশ টয়োটা গাড়ি দখল করতে সক্ষম হয়। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো জাপানের বাইরে ব্রাজিলে গাড়ির কারখানা স্থাপন করে। এরপর তারা পর্যায়ক্রমে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে জাপানে টয়োটা মোটর করপোরেশনের নিজস্ব ১২টি কারখানা, ১১টি সাবসিডিয়ারি অ্যাফিলিয়েট কারখানা ছাড়াও বিশ্বের ২৬টি দেশে মোট ৫১টি কারখানা রয়েছে। এগুলোতে গড়ে প্রতি বছর ৫৫ লাখ গাড়ি তৈরি হয়। অর্থাৎ প্রতি ৬ সেকেন্ডে তৈরি হয় একটি করে টয়োটা গাড়ি। অবাক করার মতো হলেও সত্যি যে বিশ্বের প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি করে টয়োটা গাড়ি বিক্রিও হচ্ছে। কোম্পানিটির জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত মোট তিন কোটি ৭৫ লাখেরও বেশি গাড়ি বিক্রি করেছে। ৪০ বছর ধরে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি করে গাড়ি বিক্রি করে আসছে কোম্পানিটি। টয়োটা গাড়ির জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় এই গাড়ির এত বেশি জনপ্রিয়তা। এ ছাড়াও টয়োটা গাড়ির কাঠামোগত এবং সৌন্দর্যগত দিক। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে তৈরি হয় টয়োটা। যেমন— জাপান, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ইত্যাদি। টয়োটা গাড়ির জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর টয়োটার উন্নত চার সিলিন্ডারের ইঞ্জিন সংযোজন টয়োটা গাড়িতে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ইঞ্জিনই টয়োটাকে আজকের শীর্ষ অবস্থান এনে দিয়েছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত শুধু জাপানেই টয়োটা কোম্পানিতে চাকরি করছে ৭০ হাজার লোক। সারা বিশ্বে উৎপাদন ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৭৭ জন। ২০১১ সালে জেনারেল মোটরস এবং ভক্সওয়াগন গ্রুপকে পেছনে ফেলে উৎপাদনের দিক দিয়ে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক হয়ে গড়ে উঠেছে। উপার্জনের দিক দিয়ে বর্তমানে টয়োটা পৃথিবীর এগারতম বৃহত্তম কোম্পানি। ১৯৬৪ সাল নাগাদ প্রতি বছর টয়োটার বার্ষিক গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ লাখ ৬৪ হাজার। ২০১৫ সালে টয়োটা সারা বিশ্বে প্রায় সাড়ে ১০ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রি করে। বর্তমানে কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ ৬৩৫ বিলিয়ন ইয়েন। এর আগে ফোর্ডের এফ সিরিজের ট্রাক ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বিক্রিত গাড়ি। কিন্তু একে পেছনে ফেলে সর্বকালের সেরা বিক্রিত গাড়ির তালিকায় উঠে এসেছে টয়োটা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যানবাহনের নিরাপত্তাকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। এগুলোর একটি হচ্ছে সক্রিয় নিরাপত্তা। এটি নজর দেয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধের দিকে। অন্যটি হচ্ছে পরোক্ষ নিরাপত্তা যা সংঘর্ষকালে গাড়ির আরোহীদের রক্ষা করে। এ দুটি ক্ষেত্রেই টয়োটা আধুনিক প্রযুক্তির রেকর্ডধারী। যেমন— গাড়ির স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ বা ভেহিক্যাল স্ট্যাবিলিটি কন্ট্রোল চাকার এদিক-ওদিকে ফসকে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া সাসটেইনেবল রেসট্রেইন্ট সিস্টেম তাত্ক্ষণিকভাবে বেলুনের মতো ফুলে মাথাকে রক্ষা করে। এসব বিষয় ছাড়াও টয়োটা ইঞ্জিন, ব্রেক, স্টিয়ারিং এবং অন্যসব নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে সমন্বিত করে তৈরি করেছে ভেহিক্যাল ডায়নামিক ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এর মাধ্যমে সামর্থ্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত গাড়িকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। টয়োটা সংঘর্ষ পূর্ববর্তী নিরাপত্তা নামে এক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করবে ক্যামেরা ও রাডার প্রযুক্তি। এটি সম্ভাব্য দুর্ঘটনার পূর্বাভাস দেবে। সম্ভাব্য পরিণতি ঠেকাতে অথবা সংঘর্ষের সময় চালককে কৌশলী করে তুলবে। কোম্পানির নতুন প্রেসিডেন্ট কাতসুয়াকি ওয়াতানাবির চিন্তাভাবনা অনুযায়ী ভবিষ্যতে গাড়িতে হয়তো তন্দ্রা প্রতিরোধক সিস্টেমও উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। এর ফলে দীর্ঘ ভ্রমণকালে আরোহীর তন্দ্রা ভাব কাটানো যাবে। এমনকি মদপান করে গাড়ি চালানো প্রতিরোধের পন্থার কথাও ভাবা হচ্ছে। এতে মাদকাসক্ত কোনো ব্যক্তি গাড়ি চালকের আসনে বসলে গাড়ি চলবে না অথবা নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। তয়োদা গাড়ি নিয়ে ওয়াতানাবির ভবিষ্যৎ ভাবনা এখানেই থেমে নেই। তার স্বপ্ন এমন একটি আদর্শ গাড়ি তৈরি, যা প্রতিবারই চালানোর সময় বায়ু পরিশোধন করবে। আরও উৎসাহী হয়ে তিনি বলেন, ‘এমন একটি গাড়ি যা দুর্ঘটনা ও আঘাতকে একই সঙ্গে প্রতিরোধ করার মধ্য দিয়ে মানসিক চাপ কমাবে।’
বৈচিত্র্যময় টয়োটা গাড়ি
বৈচিত্র্যতার দিক দিয়ে টয়োটা গাড়ির কদর বিশ্বজুড়ে। আট দরজার সাত হাজার ৯৬৩ পাউন্ডের এক দৈত্যাকার পিকআপ রয়েছে টয়োটা কোম্পানির। টয়োটা টুন্ড্রা ১৭৯৪ এডিশন ৪৪ ক্রিউম্যাক্সের পিকআপটি লম্বায় ২৬ ফুট এবং ভিতরে যাত্রী সিট রয়েছে নয়টি। তাই টয়োটা একে ডাকছে ‘টুন্ড্রাজিন’ যার অর্থ দাঁড়ায় টুন্ড্রা ও লিমুজিনের সংমিশ্রণ। এ রকম অদ্ভূত লিমুজিন এর আগে দেখা যায়নি। উচ্চতা ও প্রশস্ততা সাধারণ হলেও গাড়ির টায়ারগুলো বিশাল, যা প্রায় ৯০ দশমিক ২ ইঞ্চি করে। গাড়িটিতে আছে ৫ দশমিক ৭ লিটার ভিএইট ইঞ্জিন এবং তৈরি হয়েছে টেক্সাসের স্যান অ্যান্তোনিয়োতে। এদিকে পৃথিবীতে বৈচিত্র্যময় বিলাসবহুল দামি গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ঈর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে টয়োটা মোটরসের লেক্সাস সিরিজের গাড়িগুলো। এর মধ্যে এনএক্স মডেলের ছোট এসইউভি গাড়িটি বাজারে বর্তমানে বেশি জনপ্রিয়। গাড়িটির মূল্য ৩৫ হাজার ৪০৫ ডলার। ২০০০-২০১০ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে লাক্সারি অটো ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে এক নম্বরে ছিল লেক্সাস। বর্তমানেও গোটা বিশ্বে রয়েছে এই লেক্সাসের ব্যাপক চাহিদা। তবে টয়োটার রয়েছে খুবই উচ্চমূল্যের কিছু গাড়ি। তার মধ্যে ১৯৯৮ সালের জিটি ওয়ান রোড ভার্শনের গাড়িটি অন্যতম। ৯২০ কেজি ওজনের গাড়িটি খুবই দৃষ্টিনন্দন ও চিত্তাকর্ষক। জিটি ওয়ান রোড ভার্শনের বাজার মূল্য ১৩ লাখ ডলার। টয়োটা কোম্পানির ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার মূল্যের আরও একটি দামি বিলাসবহুল গাড়ি হচ্ছে টয়োটা ২০০০ জিটি। গাড়িটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। টয়োটা সেঞ্চুরি হচ্ছে টয়োটা কোম্পানির আরও একটি দামি মডেলের গাড়ি। ১ হাজার ৯৯০ কেজি ওজনের এই গাড়িটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার। টয়োটার যেমন রয়েছে বিলাসবহুল দামি গাড়ি তেমনি রয়েছে তুলনামূলক সস্তা মডেলের গাড়ি। এগুলোও কম জনপ্রিয় নয়। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত গাড়ির আন্তর্জাতিক বাজার দাপিয়ে বেড়িয়েছে টয়োটা স্টারলেট। পরবর্তীতে টয়োটা স্টারলেটের পরিবর্তে বাজারে আসে টয়োটা ইয়ারিস। দামে সস্তা গাড়ি হচ্ছে টয়োটা ইয়ারিস। ১৯৯৯ সালে প্রথম বাজারে আসে গাড়িটি। চার সিলিন্ডারবিশিষ্ট গাড়িটি ১০৬ হর্সপাওয়ার জেনারেট করতে পারে। এর মূল্য মাত্র ১৪ হাজার ৮৯৫ ডলার। দামে সস্তা হলেও গাড়িটিতে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। যেমন— এয়ার ব্যাগস সুবিধা, এয়ার কন্ডিশন সুবিধা, পাউয়ার উইন্ডোজ সুবিধা ইত্যাদি। ২০১৭ সালে টয়োটা ইয়ারিসের পাঁচটি মডেল আছে। এগুলো হচ্ছে— থ্রি-ডোর এল, থ্রি-ডোর এলই, ফাইভ-ডোর এল, ফাইভ-ডোর এলই, ফাইভ ডোর এসই। টয়োটা করোলা এই কোম্পানির আরও একটি সস্তা মডেলের গাড়ি। এই গাড়ির মূল্য মাত্র ১৭ হাজার ৩০০ ডলার।
বাংলাদেশে টয়োটা প্রীতি
স্বাধীনতার পর ঢাকার রাস্তায় অধিকাংশ ছিল টয়োটা (পাবলিকা), ডাইহাটসু, কিছু ছিল ভক্সওয়াগন আর নিশান। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশের প্রাইভেট গাড়ির বাজার প্রায় একচেটিয়াভাবে দখল করে নেয় টয়োটা। এত বেশি টয়োটাপ্রীতির কারণ টয়োটার স্পেয়ার পার্টসের দাম কম ও সহজলভ্যতা। আর দেশের যে কোনো জায়গায় মেরামতের সুবিধা পাওয়া যায়। তবে জনপ্রিয়তার আরও একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো টয়োটা গাড়ির রিসেল ভ্যালু। এ ছাড়া বাংলাদেশে সব সুবিধাসম্পন্ন একটি সেডান কিনতে গেলে ক্রেতার প্রথম পছন্দ থাকে টয়োটা মডেলের সেডান। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সেডানগুলোর তালিকায় রয়েছে টয়োটা প্রিমিও, টয়োটা অ্যালিওন এবং টয়োটা অ্যাক্সিও। টয়োটা অ্যালিওন এবং টয়োটা প্রিমিও প্রথম বাজারে আসে ২০০১ সালে। তবে ১৯৭০ থেকে টয়োটা অ্যালিওন বাজারে আসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন