প্যাটার্ন কাকে বলে, গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার ও কিভাবে তৈরি হয়।
প্যাটার্ন কাকে বলে, গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার, কিভাবে তৈরি করতে হয়- বিষয়গুলো নিয়েই আজাকের এই পোষ্ট। গার্মেন্টস পন্য বা পোশাক তৈরি করার সময় বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ধাপটি হল ফিটিং। অর্থাৎ তৈরি পোশাকটি গায়ে ঠিক মত লাগল কিনা নাকি ছোট-বড় হল, বা বেশী টাইট বা বেশী ঢিলা হয়ে গেল! এটিকেই আমরা ফিটিং হিসাবে জেনে থাকি।
শরিরের সাথে ফিট হওয়া- বিষয়টি এত গুরত্বপূর্ণ যে এর উপর নির্ভর করছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাচের উৎপাদিত সমস্ত পোশাক বায়ারের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না বাতিল হবে। যদি বাতিল হয়ে যায় তাহলে ব্যাচটির পুরো লটই বাতিল হয়ে গেল। অথচ লটের সমস্ত পোশাক তৈরিতে কি পরিমান মেহনত, শ্রমিকের মুজুরি ও গার্মেন্টস মালিকের অর্থ বিনিয়োগ জড়িত ছিল।
তাহলে, আমরা ধারণা পেলাম ফিটিং হল গার্মেন্টস পণ্যে অন্যতম গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা পোশাক তৈরির শুরুতেই ধাপটি সেরে নিতে হয়। তাহলে, ফিটিং এর বিষয়টি কিভাবে সেরে নিবেন?
শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে – পোশাক প্রস্তুতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরপর কয়েকটি অনুসরণ করতে হয়। প্রধান ধাপগুলি হল প্রথমে কাপড় কেটে নেওয়া, তারপর সেলাই করা এবং সবশেষে ফিনিশিং করে বাজারে ছেড়ে দেওয়া।
আমরা জানি গার্মেন্টসে এক একটি লটে হাজার হাজার পিস পোশাক থাকে। প্রশ্ন হল, এত শত-সহশ্র পোশাকের জন্য কাপড় কি হিসাবে কাটবেন? কোন মাপে কাটবেন?
এর উত্তর হল গার্মেন্টস প্যাটার্ন। এই প্যাটার্নের মাপ অনুযায়ি কাপড়গুলো কেটে নিতে হবে। তার মানে, পোশাক কাটার আগেই প্যাটার্ন তৈরি করতে হবে।
কোন তৈরি পোশাক শরিরে ফিট হওয়ার জন্য প্রথমেই টার্গেট কাস্টমারের শরীরের মাপ অনুযায়ি সঠিকভাবে প্যাটার্ন তৈরি করতে হবে যাতে পোশাকগুলির ফিটিং নিয়ে কোন ত্রুটি না থাকে বা লট বাতিলের সম্ভাবনা না থাকে।
তাহলে, উপরের আলোচনা থেকে আমরা জেনে গেলাম প্যাটার্ন কাকে বলে বা প্যাটার্নের গুরত্ব কতটুকু। আলোচ্য পোষ্টে আমরা গার্মেন্টস প্যাটার্ন বিষয়ে আরোও প্রয়োজনিয় কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব,- যেমন গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার, কিভাবে তৈরি হয়, প্যাটার্ন তৈরি করতে কি কি লাগে ইত্যাদি।
তাহলে, চলুন শুরু করা যাক।
✅ Table of Contents :
গার্মেন্টস প্যাটার্ন কাকে বলে?
প্যাটার্ন মেকিং কি?
প্যাটার্ন তৈরিতে কি কি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়?
গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার?
বর্তমান বিশ্বে কিভাবে প্যাটার্ন তৈরি করা হয়?
গার্মেন্টস প্যাটার্ন কাকে বলে ?
গার্মেন্টস প্যাটার্ন কাকে বলে- এর উত্তর দেওয়ার আগে চলুন প্রথমে জেনে নেই প্যাটার্ন কাকে বলে? প্যাটার্ন হল কোন জিনিসের ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিচিত্র বা টেমপ্লেট যা কোন কিছু সজ্জিতকরণের উদ্দেশ্যে তার প্রতিচ্ছবি বার বার ব্যবহার করা হয়।
আর গার্মেন্টস প্যাটার্ন হল কাগজের হার্ড কপি যার উপর গার্মেন্টস পণ্যের মাপ অনুযায়ি এর বিভিন্ন অংশের নকসা বা স্টাইল আঁকা হয়।
ফ্যাশন ডিজাইনের দৃষ্টিকোন থেকে আরোও পরিস্কারভাবে বলতে গেলে, প্যাটার্ন হল একটি আসল পোশাক যা থেকে একই স্টাইলে অন্যান্য পোশাক নকল করে তৈরি করা হয়, বা প্যাটার্ন হতে পারে কাগজের কোন টেমপ্লেট যেখান থেকে কাংখিত পোশাকের অংশগুলি কাপড়ের উপর অংকন করা হয়। তারপর তা কেটে সেলাই করে বাজারজাত করা হয়।
প্যাটার্ন মেকিং কি ?
প্যাটার্ন making হল আপনার গার্মেন্টস পোশাকের ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিচ্ছবি তৈরি করার পদ্ধতি। তৈরিকৃত প্যাটার্ন একটি টেমপ্লেট হিসাবে ব্যবহার করা হয় যাতে বায়ারের কাংখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ি সঠিকভাবে কাপড় কাটা যায়।
প্যাটার্ন মেকিং এক প্রকার আর্টস যার মাধ্যমে কাগজের উপর সমতল আকারের প্যাটার্ন দিয়ে এমনভাবে পোশাক তৈরি করা হয় যা পরিধানের পর শরিরের অসমতল বা বক্র অংশেও ফিটিং হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, প্যাটার্ন মেকিং হচ্ছে এমন এক কাজ যা পোশাকের কল্পিত ডিজাইন এবং বাস্তব উৎপাদনের মাঝে একটি সেতু বন্ধন তৈরি করে। যেখানে ডিজাইনের স্কেচটিকে পোশাকে পরিণত করা হয়।
এটি কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরের উপর নির্ভশীল, যেমন-
ফেব্রিক বা কাপড়ের ধরণ
যে পরিধান করবে তার শরিরের মাপ
পোশাক সাজানোর কাজে যে সব ট্রিমস ব্যবহৃত হয়
প্যাটার্ন যেহেতু হার্ড কপির মত মোটা কাগজে তৈরি করা হয় এর এটি দ্বি-মাত্রিক আকারের হয় যা ব্যবহার করে তৈরি পোশাকটি ত্রি-মাত্রিক শরিরে পরিধান করা হয়।
প্যাটার্ন তৈরির কতগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে আপনি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন সেটা মুল বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে, প্যাটার্ন তৈরির প্রক্রিয়া তখনই শুরু হয় যখন একজন ডিজাইনার সর্বপ্রথম পোশাকের ছবির কোন sketch বা নকসা তৈরি করে যার মত করে তারা বাস্তব কোন পোশাক তৈরি করবে। ডিজাইনার যখন তার মনের মাধুরি মিশিয়ে এমন কোন ডিজাইনের sketch তৈরি করে তারপর আরোও কয়েকটি ধাপ অতিক্রমের মাধ্যমে কল্পিত নকসাকে বাস্তব পোশাকে ফুটিয়ে তোলা যায়। যা পরিধানের জন্য মানুষের শরিরের সাথে মিলে যায় বা ফিট হয়ে যায়।
প্যাটার্ন তৈরিতে কি কি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়?
প্যাটার্ন তৈরির সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হল ড্রেপিং এবং ফ্লাট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিদ্বয়ে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ড্রেপিং সাধারণত: ম্যানুয়ালি বা হাতে-কলমে কাপড়কে dress form এর উপর জড়িয়ে করা হয় যাতে এর ডিজাইন আপনার পছন্দমত হয়।
যাহোক, এর জন্য নিচের যন্ত্র ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হবে-
Dress form
ফেব্রিক
পিন
প্যাটার্ন পেপার
French curve
একটি সোজ রুলার
প্রথমে কাপড় ড্রেস ফর্মে উপর আপনি যেভাবে চান সেভাবে জজিয়ে নিন। তারপর পিনের সাহায্যে আটকিয়ে মার্ক করুন। পরিশেষে ড্রেস ফর্ম থেকে কাপড়টি উঠিয়ে নিয়ে মার্ক অনুযায়ি কেটে নিয়ে কাপড়টির বিভিন্ন অংশের মাপ অনুযায়ি পেপার বোর্ডের উপর প্যাটার্ন তৈরি করুন। এই প্যাটার্নের সাথে seam allowance ও notches যোগ করে নিতে হবে।
অপরদিকে, ফ্লাট প্যাটার্ন তৈরি করা হয় সমতল ভূমির উপর। ফ্লাট প্যাটার্ন তৈরির জন্য নিম্নলিখিত সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হয়-
প্যাটার্ন পেপার
ফ্রেন্স কার্ভ
সোজা রুলার
পেন্সিল
ডিজিটাল ফ্লাট প্যাটার্ন CAD সফটওয়ার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।
প্যাটার্ন তৈরির সময় শরিরের মাপ কিভাবে নির্নয় করা হয় তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার?
বানিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য পেশাজীবিগন বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে প্যাটার্ন তৈরি করে থাকে। বাস্তবিক অর্থে বর্তমান সময়ে প্যাটার্ন তৈরির জন্য কম্পিউটার সফ্টওয়ারের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।
যাহোক, প্যাটার্ন তৈরির উপর ভিত্তি করে গার্মেন্টস প্যাটার্ন কত প্রকার হতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হল-
ড্রাফ্টিং বা drafting:
এই পদ্ধতিতে পোশাকের আকার বা সাইজ নির্ধারণের জন্য বিদ্যমান কোন পোশাক, body form বা মানুষের শরির থেকে মাপ নেওয়া হয়। শরিরের মাপ বলতে বক্ষদেশ, কোমর, উরু বা হিপ ইত্যাদি জায়গার মাপ নিতে হয়। তারপর পরিধানের পর যাতে সহজভাবে ব্যবহার করা যায় এর জন্য শরিরের মাপ থেকে কিছু পরিমান ঢোলা রেখে প্যাটার্ন কাগজের উপর লাইন টেনে মার্ক করা হয়। এভাবে এই ধরণের প্যাটার্ন তৈরি করা হয়।
ড্রেপিং বা draping:
আমরা জানি, যার দৈর্ঘ ও প্রস্থ থাকে তাকে বলা হয় দ্বি-মাত্রিক বা two dimensoal কোন বস্তু। অপরদিকে, যার দৈর্ঘ ও প্রস্থের সাথে উচ্চতাও থাকে তাকে বলা হয় ত্রি-মাত্রিক বস্তু। সে আলোকে কাপড় হল দ্বি-মাত্রিক এবং আমাদের শরির হল ত্রি-মাত্রিক।
এখন কাপড় দিয়ে পোশাক বানানোর সময় ত্রি-মাত্রিক শরিরের কথা বিবেচনায় রাখা হয়। পোশাকটি আমাদের শরিরের সাথে তখনই মিলে যাবে যখন তৈরি পোশাকটি ত্রি-মাত্রিক আকারের হবে।
এবার, প্যাটার্ন তৈরির ড্রেপিং পদ্ধতি হচ্ছে প্রথমে দ্বি-মাত্রিক কাপড়কে কোন শারিরিক আকারের সাথে মিল রেখে যথাযথভাবে মাপ নিয়ে কাপড়টি ত্রি-মাত্রিক আকার দিতে হয়। তারপর, কাপড়ের সেই আকৃতি কাগজের উপর রেখে তার মাপ অনুযায়ি কাগজটি অংকন করে এই প্যাটার্ন তৈরি করা হয়। পরিশেষে, এই প্যাটার্ন অনুযায়ি কাপড় কেটে সেলাই করে পোশাক প্রস্তুত করা হয়।
ড্রেপিং পদ্ধতি কিছুটা ব্যায় এবং সময় সাপেক্ষ হতে পারে।
ফ্লাট প্যাটার্ন
এই পদ্ধতি হল শরিরের সাথে ভালভাবে ফিট হয় এমন ধরণের এক বেসিক প্যাটার্ন যার মধ্যে comfort ease অন্তর্ভুক্ত থাকবে। Comfort ease যোগ করে পোশক তৈরি করলে এটি সহজে আরামদায়ক অনুভূতির সাথে পরিধান করা যায়। কারণ comfort ease হল পোশাক তৈরির সময় শরিরের exact মাপ এর চেয়ে কিছু পরিমান বেশি নেওয়া। যাতে কাপড়টি একেবারে আটশাঁট হয়ে শরিরের সাথে লেগে না থাকে।
ফ্লাট প্যাটার্নের শুরুতেই একজন ডিজাইনারের যা প্রয়োজন হয় হা হল শরিরের মাপ অনুযায়ি পোশাকটির জন্য sloper বা প্যাটার্ন ব্লক তৈরি করা। Final sloper সাধারণত: কার্ডবোর্ড বা পেপারবোর্ডের উপর তৈরি করা হয় যা ব্যবহার করে নেকলাইন, হাতার সাইজ, দৈর্ঘ ইত্যাদি পরিবর্তন করে অগনিত পোশাকের স্টাইল তৈরি করা যায়।
পোশাক তৈরির সময় এই প্যাটার্নে পাঁচটি টুকরার প্রয়োজন হয়:
শরিরের সামনের অংশ বা front bodice
শরিরের পিছনের অংশ বা back bodice
গলার মাপ বা neckline
হাতার মাপ বা sleeve
Fitted skirt
উপরের এই প্রত্যেক উপাদান অনুযায়ি কাপড় কাটর পর তা একসাথে মিলিয়ে সেলাই করে পোশাক তৈরি করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে কিভাবে প্যাটার্ন তৈরি করা হয়?
আজকের দিনে কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে প্যাটার্ন তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়ে মার্কেটে বিভিন্ন সফটওয়ার চলে এসেছে যার ব্যাবহার শিখে নিয়ে বায়ারের চাহিদামত আপনিও খুব সহজে কাংখিত কোন প্যাটার্ন তৈরি করে নিতে পারেন। এমন কয়েকটি সফটওয়ারের নাম হল-
Gerba
Lectra
Tukatech
Optitex etc.
এই সফটওয়ারগুলো আপনার কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্যাটার্ন তৈরিতে সময় এবং পয়সা উভয়ই কম লাগে। প্যাটার্ন তৈরির এই সফটওয়ারে আপনি পোশাকের মাপের বিভিন্ন ভেল্যু খুব সহজেই বসিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে যা দিয়ে আপনি প্যাটার্নের একটি খসরা তৈরি করে নিতে পারেন।
আপনি সফটওয়ারগুলো দিয়ে ত্রি-মাত্রিক আকারে প্যাটার্ন তৈরি করতে পারবেন। যার সমস্ত measurements আপনি 3D body scanner থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন