প্রশ্ন হলো এভাবে কয়দিন ?
“You can’t allow tradition to get in the way of innovation. There’s a need to respect the past, but it’s a mistake to revere your past.“
- Bob Iger
আমরা সাকসেস্ফুল মানেই যে ভুল করবনা অথবা করছিনা তা কি করে হয়। আমার শিক্ষাগুরু সায়মন গিবসনের কাছে সেলস ট্রেইনিং নিতে গিয়ে কন্ট্রাস্ট (পক্ষান্তরে) বলে একটা টার্ম শিখেছিলাম। আমি আমার স্বল্প জ্ঞানে ইন্ডাস্ট্রির কয়েকটা কন্ট্রাস্ট দেখানোর অপচেষ্টা করবো। ভুল হলে শুধরিয়ে দিবেন, মেনে নেব।
১। আমরা হেড অফিসের প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা পুরো মাসের সুইং প্ল্যান পেয়ে থাকি, আবার অনেকেই তাও পাইনা। আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হল এই প্ল্যান ৩০% থেকে ৭০% সময় ঠিক থাকেনা, তখন আমরা যা রেডি থাকে, তাই দিয়ে কাজ শুরু করে দেই। দরকার থাকুক আর না থাকুক, ধুমায়া প্রোডাকশন করতে থাকি ৬০% ইফিসিয়েন্সিতে। পরে যখন দরকারী অর্ডার এর মালামাল রেডি হয়ে যায় , তখন অর্ডার টাকে স্থগিত করে, সত্যিই জরুরী অর্ডার টাকে ফায়ার আর্জেন্ট নাম দিয়ে গামছা বেঁধে ঝাঁপিয়ে পরে, ওভারটাইম, নাইট, ফায়ার ফাইট করে , একটার জায়গায় চার লাইনে কাজ শুরু করে, যে কোন মূল্যে এক্সটেনশন নিয়ে ৯৫% অনটাইম ডেলিভারী দেই। এখানে কোন কন্ট্রাস্ট বলতে কিছু নেই। বিগত তিরিশ বছর এটাই চলে আসছে। এটাই করছি, এরই মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। কন্ট্রাস্ট হলো এই মগের মুল্লুক থেকে বেরিয়ে আসা।
২। আমরা শুধু সুইং ইফিসিয়েন্সি নিয়ে কাজ করতে করতে তিরিশ বছর পার করে দিলাম কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সাপ্লাই চেইন, ডিসিশন, প্ল্যানিং , ম্যানেজমেন্ট এবং পুরো গ্রূপের ইফিসিয়েন্সি নিয়ে কোন কাজ করছিনা। আমরা আমাদের গ্রূপ ইফিসিয়েন্সি কত তা কেউ কি বলতে পারবো ? অথচ ৭৫% সমস্যা কিন্তু এখানে। এই ৭৫% সমস্যা নিজেরাই সৃষ্টি করে শেষ সপ্তাহে গিয়ে শিপমেন্ট দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাই। আপনি যে কোন ফ্যাক্টরির জিএম সাহেব কে প্রশ্ন করুন, দেখবেন সুয়িং ইফিসিয়েন্সি নিয়ে ঝাড়া বক্তৃতা দিয়ে দেবেন , কিন্তু গ্রূপ ইফিসিয়েন্সি কত, উনি বলবেন হেড অফিসের লোকজন বলতে পারবেন। কন্ট্রাস্ট টা এখানেই, বিগত তিরিশ বছর ধরে এভাবেই চলছে, চলবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আর কতদিন এভাবে !
৩। চায়নীজ ফ্যাক্টরী আর আমাদের ফ্যাক্টরী গুলোর ভিতরে অন্যতম একটা কন্ট্রাস্ট হল, চায়নিজরা অন্ততঃ ১৫টা প্যারামিটার বিবেচনা করে সবগুলো অপারেশনাল ক্যাপাসিটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে হিসাব করে , ভবিষ্যৎ অর্ডার গুলো নিয়ে দর কষাকষি করে। আগামী তিন/চার মাসের প্ল্যানিং করে পক্ষান্তরে আমরা ৯০% ফ্যাক্টরি শুধুমাত্র অর্ডার কোয়ান্টিটি নিয়ে ( ধরুন ২০ লক্ষ পিস্ ) আলোচনা করে, ট্র্যাডিশনাল অভিজ্ঞতা থেকে পারবো বলে ধারণা করে অর্ডার নিয়ে নিচ্ছি। আর শেষ পর্যন্ত যখন কস্টসাধ্য হলেও শিপমেন্ট চলে যাচ্ছে তখন কনফিডেন্স টা আরো দৃঢ়তর হচ্ছে। কোনদিন কন্ট্রাস্ট এর চিন্তা করছিই না। শেষ পর্যন্ত নাইট , ওভারটাইম , এক্সট্রা খরচ, এয়ারশিপমেন্ট , পেনাল্টি, শর্ট শিপমেন্ট তো নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আর কতদিন এভাবে !
৪। আরেকটা গুরুত্তপূর্ণ জায়গায় আমাদের সাথে চায়নীজ দের কন্ট্রাস্ট হল ক্রিটিকাল পাথ এবং টাইম এন্ড একশন ক্যালেন্ডার ম্যানেজমেন্টে। আমাদের সিস্টেমটা পুরোটা আমরা বিজ্ঞের মত ব্রেইনে রেখে দেয়ার চেষ্টা করি। কিছুটা ম্যাটেরিয়াল চেকলিস্ট এ রাখি , কিছু থাকে ইমেইলে , কিছু থাকে নোটবুকে , কিছু থাকে হোয়াটস্যাপ এ। খেয়াল করে দেখবেন সমস্যা কখনোই পিছু ছাড়েনা , কাজ শেষ শেষ হতেই চায়না , প্রোডাকশন শুরু করা যায়না মেটেরিয়াল এবং এপ্রুভাল এর অভাবে। সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে যায়। আমাদের এই এরিয়া টা ফোকাসের বাইরে বিগত দুই দশক ধরে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি পুরাতন ট্রাডিশনাল মেথড ভেঙ্গে যতদিন নতুন ইনোভেটিভ কোন মেথড এর সাহায্য না নেবো ততদিন এই সমস্যার কোন সমাধান হবেনা।
তাইতো উপরের কোটেশনে বলা হচ্ছে আপনি অবশ্যই আপনার অতীত কে সম্মান করবেন কিন্তু অতীতের ভুল গুলোর যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিয়ে কিন্তু আপনাকে কাজ করতে হবে। ট্র্যাডিশন বা পুরাতন ধ্যান ধারণা কে সামনে রেখে ইনোভেশন বা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখা অথবা বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা। রোবোটিক্স কিভাবে উপরোক্ত সমস্যাগুলোর কিছু কিছু সমাধান দিতে পারে তা নিয়ে আগের অট্রিকেল এ কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি , আশা করি পড়ে নেবেন। ট্রাডিশনাল সাকসেস দিয়ে রোবোটিক্স এর মতো নতুন দিনের গল্প কখনোই আলোর মুখ দেখবেনা।
পরিশেষে আসুন সকলে সম্মিলিত ভাবে ইন্ডাস্ট্রিটাকে বাঁচাই , ইন্ডাস্ট্রি টা টিকে থাকলে আমাদের অনেক মানুষ ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে , দেশটা এগিয়ে যাবে।
Name of Author :
Habibur Rahman
Smart Factory 4.0 Consultant for Textile Apparel Industries.
Follow Him on Linkedin :
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন