লীন ম্যানুফ্যাকচারিং
সংজ্ঞাঃ লীন ম্যানুফ্যাকচারিং হচ্ছে অপচয় সনাক্তকরণ এবং দূরীকরণের মাধ্যমে ক্রমাগত উন্নয়নের একটি সুশৃঙ্খল নিয়মনীতি।
লীন ম্যানুফ্যাকচারিং বৃহৎ পরিবর্তনের চেয়ে সহজ, ক্ষুদ্র এবং ক্রমাগত উন্নতির দিকে জোর দেয়। লীন ম্যানুফ্যাকচারিং হচ্ছে কখনই শেষ না ক্রমাগত উন্নতি।
এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে উৎপাদন খরচ কমানো, উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো, উৎপাদনের সময় কমিয়ে আনা এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো।
♦ লীন মানুফ্যাকচারিং এর ইতিহাস
১৮৯৪: সাকিচি টয়োডা, নিজস্ব দক্ষতায় প্রচলিত তাঁতের অধিক কার্যকর তাঁত উদ্ভাবন করেন।
১৯১৮: সাকিচি ‘টয়োটা স্পিনিং ও উইভিং কোম্পানি’ চালু করেন। পরবর্তীতে তাকে জাপানের ‘বিনিয়োগের রাজা’ (Japan’s king of Investor) উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯২৬: সাকিচি টয়োডা স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে তাঁতের কাজ শুরু করেছিলেন।
১৯২৯:সাকিচির ভুল সংশোধক তাঁতের (সুতা ছিঁড়ে গেলে মেশিন বন্ধ হয়ে যায়) পেটেন্ট তার ছেলে কিচিরো টয়োডার মাধ্যমে ইংল্যান্ডে ৫০০,০০০ ডলারে বিক্রি করেন।
১৯৩৩: টয়োডা ব্যবসার উন্নতির জন্য অটোমোবাইল ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং মোটরগাড়ির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেন।
১৯৩৭: কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে টয়োডা মোটর কোম্পানি রাখা হয়।
১৯৫০: এই দশকের শুরু থেকে বিশেষায়িত পণ্যের (customizes) চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, উৎপাদন কমে যেতে থাকে, ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
১৯৫০-১৯৫৬: সাধারণ ধারনা হচ্ছে, বিক্রয় মূল্য = খরচ + লাভ। কিন্তু টয়োডা ভাবল, খরচ যদি কমানো যায় তাহলে কম মূল্য পণ্য বিক্রি করে সমান লাভ করা যাবে। তাই তিনি তাঁর সমস্ত চিন্তা-ভাবনা খরচ অর্থাৎ অপচয় কমানোর দিকে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। লাভ = বিক্রয় মূল্য – খরচ।
১৯৮০: ইউরোপ, আমেরিকার অনেক কোম্পানি, টয়োডার কাছে ধাক্কা খাচ্ছিল এবং মার্কেট শেয়ার হারাতে শুরু করেছিল। এই সময় মার্কেটে টিকে থাকার জন্য পুরাতন ব্যাচ পদ্ধতি বাদ দিয়ে টয়োডার জাস্ট ইন টাইম (JIT) মানুফ্যাকচারিং জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৯০ জেমস ওমেকের ÒThe Machine That Change The WorldÓ বা “যে যন্ত্র পৃথিবীকে পরিবর্তিত করে দিয়েছে” বইয়ে প্রথম লীন মানুফ্যাকচারিং শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
তাইচি ওহনো (Taiichi Ohno) টয়োটার উৎপাদন পদ্ধতিতে যে সমস্ত Tool & Technique প্রয়োগ করেছিল, তা টয়োটা উৎপাদন পদ্ধতি (Toyota Production System) নামে পরিচিত। পরবর্তীতে তা লীন ম্যানুফ্যাকচারিং নামে পরিচিতি লাভ করে।
তাইচি ওহনো (Taiichi Ohno)-কেই Lean Manufacturing-এর জনক বলা হয়।
বর্তমানে 27 টি দেশে টয়োটার 52 টি প্লান্টে, দুই লাখ নব্বই হাজার লোক কাজ করে।
♦♦ভ্যালু ও ওয়েস্ট (Value & Waste-মূল্য ও অপচয় )
Never surrender to never ending waste.
কখনই শেষ না হওয়া অপচয়ের কাছে কখনই আত্মসমর্পণ না করা।
♦Value– লীন মানুফ্যাকচারিং এ কোন পণ্য বা সেবার value ক্রেতার দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্ধারিত হয়। কত কঠোর পরিশ্রম করে বা কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা তৈরি হল তা ক্রেতার বিবেচনার বিষয় নয়। ক্রেতার বিবেচনার বিষয় হচ্ছে ঐ পণ্য বা সেবা তার চাহিদা কতটুকু পূরণ করছে।
লাইনের কোয়ালিটি ডিফেক্ট সারানোর জন্য যে খরচ হয়, বা ফ্যাক্টরির অতিরিক্ত মাথাপিছু খরচের জন্য ক্রেতাকে কোন মূল্য পরিশোধ করে না। তাদের চাহিদা পূরণের ভিত্তিতে, তারা পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে।
♦Waste- লীন মানুফ্যাকচারিং এ waste হচ্ছে সেই সব কাজ, যা প্রডাক্টে কোন মূল্য যোগ করে না, কিন্তু খরচ বাড়ায়। যেমন- সাইড সিমের আগে ওপেনিং টাক, কারণ এটি উৎপাদনের খরচ বাড়ায়কিন্তু পণ্যের মূল্য বাড়ায় না।
লীন মানুফ্যাকচারিং এ পণ্যের মূল্য (value) নির্ধারিত হয়, কাস্টমার কি চায় তার ভিত্তিতে। উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত কাজ গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
♦মূল্য যোগ করে এমন কাজ (Value added work) : শুধু সেই সব কাজ বা তথ্য যা কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামালকে পণ্যে পরিণত করে। অর্থাৎ সেই সব কাজ যা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে।
মূল্য যোগ করে না এমন কাজ (Non value added) : যে সব কাজ বা তথ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেনা শুধু খরচ বাড়ায়। মূল্য যোগ করে না এমন যে কোন কাজই অপচয়। অপচয় বোঝার অন্য উপায় হচ্ছে, যে বস্তু বা কাজের জন্য কাস্টমার মূল্য প্রদান করে না। কোয়ালিটি চেকও অপচয় হিসাবে বিবেচনা করা হয় কেননা কোয়ালিটি চেকের জন্য কাস্টমার কোন অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করেনা। আমরা যদি উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নতির মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত/ ডিফেক্ট ছাড়া উৎপাদন করতে পারি, তাহলে কোয়ালিটি চেকের দরকার হবে না।
মূল্য যোগ করে না এমন প্রয়োজনীয় কাজ (Non value added but necessary): যে সব কাজ বা তথ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেনা কিন্তু পণ্য উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এই সব কাজ উন্নতির মাধ্যমে দীর্ঘ সময় দূর করা যেতেও পারে আবার নাও যেতে পারে। যেমনঃ নিরাপদ মজুদ (Buffer Stock).
♦ আটটি অপচয় (8 wastages)
♦১. অতিরিক্ত উৎপাদন (Over Production): অতিরিক্ত উৎপাদন হচ্ছে অপ্রয়োজনীভাবে চাহিদার চেয়ে বেশী বা যে গতিতে দরকার তার চেয়ে বেশী গতিতে অথবা প্রয়োজনের আগেই উৎপাদন করে রাখা।
টয়োটাতে (Toyota) অতিরিক্ত উৎপাদনকে মূল অপচয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যেহেতু এটা অন্যান্য অপচয়ের মূল কারণ। উৎপাদন প্রক্রিয়ার কোন একটি কাজে গ্রাহকের চাহিদার বেশি উৎপাদন করলে মজুদের সৃষ্টি করবে। অতিরিক্ত মজুদ প্রেরনাকে কমিয়ে ফেলবে, ফলে ক্রমাগত উন্নতি এবং সমস্যা বের করা সম্ভব হবে না।
♦২. অতিরিক্ত মজুদ (Inventory):
মজুদ জনিত অপচয় বলতে অপ্রয়োজনীয় অনেক পরিমান কাঁচামাল (WIP), এবং সম্পূর্নকৃত বস্তু বুঝায়। অতিরিক্ত মজুদ, খরচ বাড়ায়। অতিরিক্ত কাঁচামাল (WIP) এবং তৈরিকৃত পণ্য দীর্ঘ লীড টাইম (Lead Time) এর সৃষ্টি করে, পন্য নষ্ট করে। পরিবহন মজুদ খরচ বাড়ায় এবং দেরি করে। অতিরিক্ত মজুদ উৎপাদন সামঞ্জসহীনতা, দেরি করে প্রদান, যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং দীর্ঘ সেট আপ (set up) সময়কে লুকিয়ে রাখে।
♦৩. ডিফেক্টস (Rework/Defects) :
সমস্যা জনিত পণ্য উৎপাদন করা, পুনরায় প্রক্রিয়া করণ, ব্যবহার অনুপযোগী জিনিস তৈরি করা, ভুল তথ্য প্রদান বা দেরি করে প্রদান করা ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। এটা একটা অপচয় কারণ পুনরায় প্রক্রিয়াকরণে পণ্য উৎপাদনের দ্বিগুণ সময় লাগে।
♦ ৪. অপ্রয়োজনীয় পরিবহন (Transportation) :
ব্স্তুর যে কোন ধরনের পরিবহন যেগুলো কোন মূল্য সংযোজন করে না, যেমন: WIP অনেক দূরে পরিবহন করা , অযথার্থ পরিবহন তৈরি করা, অথবা কাজের মাঝে বস্তু, অংশ, সম্পূর্ণ জিনিস গুদাম থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া বা বাইরে থেকে সেখানে নিয়ে যাওয়া ।
উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপের মধ্যে বস্তুর পরিবহনের দূরত্ব কম হওয়া উচিত এবং একটি প্রক্রিয়ার আউটপুট (output) অন্য প্রক্রিয়ায় ইনপুট (Input) কাছাকাছি থাকা। প্রক্রিয়ার ধাপের মধ্যে অনেক বেশি পরিবহন শ্রমিকের ও জায়গার অদক্ষ ব্যবহারের (Inefficient utilization) জন্ম দেয় এবং উৎপাদনের ছোট ছোট প্রতিবন্ধকতার জন্ম দেয়।
♦৫. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াকরণ (Over processing) :
প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ধাপ অবলম্বন করা, খারাপ যন্ত্রের কারণে অদক্ষ প্রক্রিয়াকরণ, অদক্ষ প্রডাক্ট ডিজাইন (Product design ) এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মানের (কোয়ালিটি) বস্তু উৎপাদনের জন্যও এ ধরনের অপচয়ের সৃষ্টি হয়। এটা শুধুমাত্র শ্রমিক এবং যন্ত্রপাতির অদক্ষ ব্যবহারের জন্যই সৃষ্টি হয়না বরং অতিরিক্ত প্রক্রিয়াকরণের সাথে জড়িত বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনার সময় এবং কারখানার ওভারহেড (Overhead ) খরচ বৃদ্ধি করে।
♦৬. অপেক্ষা করা (Waiting) :
অপেক্ষা হচ্ছে শ্রমিক বা মেশিনের অলস সময় যা কিনা পরবর্তী কাজের ধাপ, যন্ত্রপাতি পার্টস অংশ এর জন্য অথবা মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে লট (Lot) প্রক্রিয়ায় দেরি করার কারণে, মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে, ক্যাপাসিটি বটলনেক (bottle neck) এর কারণে, কারখানায় যথাযথ ভাবে উৎপাদন না হলে। দুটি এককের মধ্যে সামান্য দেরিও অপেক্ষার অন্তর্গত। অপেক্ষার জন্য খরচের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।
♦৭. অপ্রয়োজনীয় মোশন (নড়াচড়া) (Movement) :
অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া মধ্যে আছে অপ্রয়োজনীয় শারীরিক নড়াচড়া বা হাঁটাচলা সেটা তাদের আসল প্রক্রিয়াকরণ কাজ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। উদাহরণ- যে কোন মেশিন অপারেটরের কাজের সময়ের দুটি অংশ, একটি হ্যান্ডলিং মোশনের (Handling Motion) সময়, অন্যটি মেশিনিং/সুইং-এর সময় (Sewing Time)। সাধারণত হ্যান্ডলিং মোশনের সময় মোট কাজের ৭০ থেকে ৮০% হয়ে থাকে। অপারেটরের হ্যান্ডলিং মোশন ঠিক না থাকলে বা কোন অপ্রয়োজনীয় মোশন থাকলে, কাজ শেষ করতে বেশী সময় লাগে; ফলে তার ক্যাপাসিটি কমে যায়। এমনকি হাঁটাও একটা অপচয়।
♦৮. কর্মচারীদের অব্যবহৃত সৃজনশীলতা (Unused employee creativity) :
শ্রমিক ও কর্মচারীদের বুদ্ধি, দক্ষতা, উন্নতি, এবং বিভিন্ন কাজে যুক্ত না করে, শেখার সুযোগ না দেওয়া এবং শ্রমিকদের আইডিয়া না শোনা।
লীন ম্যানুফ্যাকচারিং প্রয়োগের ধাপ
লীন ম্যানুফ্যাকচারিং এর ভিত্তি হচ্ছে অপচয় সনাক্তকরণ এবং দূরীকরণ। লীন ম্যানুফ্যাকচারিং প্রয়োগের ধাপ গুলো হলঃ
১। এই সত্য আনুধাবন করা যে, ফ্যাক্টরিতে দূরীকরণযোগ্য অপচয় আছে।
২। অপচয় বিশ্লেষনের মাধ্যমে, অপচয়ের মূল কারন খুঁজে বের করা।
৩। অপচয়ের মূল কারনের সমাধান খুঁজে বের করা।
৪। প্রাপ্ত সমাধান প্রয়োগের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করা।
যখন এই ধাপগুলো শেষ হবে, তখন আবার প্রথম ধাপে ফিরে গিয়ে আবার চক্রাকারে ধাপগুলো আবার প্রয়োগ করতে হবে।
♦♦লীন ম্যানুফ্যাকচারিং-এর টুলস (Tools)
১। কাইজেন (KAIZEN)
কাইজেন (kaizen) = কাই অর্থ পরিবর্তন (change) + জেন অর্থ ভাল (better)। অর্থাৎ ভালোর জন্য পরিবর্তন, অন্যভাবে বলা যায় “ক্রমাগত উন্নতি” (Continuous improvement)।
সংজ্ঞাঃ ১। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মাধ্যমে কোন অপারেশনের বা পদ্ধতির বা সিস্টেমের ক্রমাগত উন্নতি সাধন করা।
সংজ্ঞাঃ ২। কাইজেন হচ্ছে এমন এক বা একাধিক পদ্ধতি বা উপায়, যার দ্বারা কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়।
সংজ্ঞাঃ ৩। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা।
কাইজেনের ধাপঃ
১। বাদ দেয়া (Eleminate) > ২। কমানো (Reduce) > ৩। পরির্বতন করা (Change)
যেমন-
১। সাইড সিমের আগে ওপেনিং টাকের অপারেশন বাদ দেয়া, কাইজেনের প্রথম ধাপের একটি উদাহরণ।
৩। Zara-607 স্টাইলে ফ্রিল জয়েন্টের ক্ষেত্রে সিংগেল নিডিল ফ্লাটলক মেশিনের পরিবর্তে মাল্টি নিডিল চেইন স্টিচ মেশিন (MCM) ব্যবহার করে প্রোডাকটিভিটি (productivity) বাড়ানো পরির্বতনের একটি উদাহরণ।
বাদ দেয়া– কাটারম্যানের সাথের হেল্পার বাদ দেয়া
কমানো– লেম্যানের সংখ্যা ১০ জন থেকে ৮ জনে কমানো
পরির্বতন করা– ম্যানুয়াল বান্ডেল কার্ডের বদলে কম্পিউটারে প্রিন্ট দেয়া বান্ডেল কার্ড ব্যাবহার করে ম্যানপাওয়ার সাত জনের স্থলে চার জন লাগে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, আগে বান্ডিল কার্ডের জন্য অতিরিক্ত OT হত, এখন যেটা হবে না।
♦♦6S (৬ টি এস)
6S হচ্ছে ৫ টা (৫+১) জাপানি শব্দের প্রথম অক্ষর। ৬ এস ব্যবহার করা হয় কাজের জায়গা সংগঠিত (Work place organization) করার জন্য, যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তার কাজে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
১। S- সি-য়েরি Sei-ri (Sort)
২। S- সেই-টন Sei-ton (Set in Order)
৩। S- সেই-সো Sei-so (Shine/ clealiness)
৪। S- সেই-ক্যা-টসু Sei-ke-tsu (Standardization)
৫। S- সিট-সুকে Shi-tsu-ke (Sustain)
৬। S- সেফটি এন্ড সিকিউরিটি Safety & Security
1.S- সি-য়েরি Sei-ri (Sort) (বাছাই করা):
সর্ট হচ্ছে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে আলাদা করা যেন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কাছাকাছি থাকে এবং সহজেই খুঁজে পেতে পারি। যে জিনিসগুলো কম ব্যবহৃত হয় বা একেবারেই ব্যবহৃত হয়, তা সরিয়ে ফেলা উচিত বা ফেলে দেয়া উচিত। অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো চিহ্নিত করার একটি কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে রেড ট্যাগ (Red Tag) কৌশল যার মাধ্যমে কার্যক্ষেত্রে প্রত্যেকটি জিনিস থাকার প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় নয় বা সঠিক স্থানে বা সংখ্যার নেই এমন সব জিনিসগুলোতে রেড ট্যাগ সংযুক্ত করা হয়।
♦ ২। S- সেই-টন Sei-ton (Set in Order) (ক্রমানুসারে সাজানো ) :
প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এমন ভাবে সাজাতে হবে, যাতে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। কাজ করার সময় শ্রমিকের অপ্রয়োজনীয় নাড়াচাড়া বা চলাচল করানই হচ্ছে এর উদ্দেশ্য ।উদাহরণ- একটি যন্ত্রের বাক্সে যদি প্রত্যেকটি যন্ত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানে সাজানোর ব্যবস্থা থাকে তাহলে
♦ ৩। S- সেই-সো Sei-so (Shine/ clealiness) (পরিচ্ছন্ন রাখা):
মেশিন ও কাজের ক্ষেত্রের চার পাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যাতে অপরিচ্ছন্নতার কারণে সৃষ্ট সমস্যা হতে দুরে থাকা যায়। অনেক কারখানায় বাতাসে ধুলা থাকে যার ফলে পণ্যের সার্ফেস ফিনিশ খারাপ হয় ও কালার কন্টামিনেশন হয়।
♦ ৪। S- সেই-ক্যা-টসু Sei-ke-tsu (Standardization) (আদর্শীকরণ):
শ্রেনীবিন্যাসকরণ (Sort) ক্রমান্বয়ে সাজানো (Setin order) ও পরিষ্কার রাখা (Shine) এই তিনটির প্রয়োগের জন্য স্পষ্ট নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে নিয়মিত অনুশীলন করা।
♦ ৫। S- সিত-সুকে Shi-tsu-ke (Sustain) (সবসময় টিকিয়ে/ ধরে রাখা):
কারখানাতে কর্পোরেট সংস্কৃতি (corporate culture) এর অংশ হিসাবে সিক্স এস কে (6S) এ পরিচিত করাতে হবে এবং এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারখানার বর্তমান কর্মীদের নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করা যেতে পারে যারা সিক্স এস (6S) কে রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
♦ ৬। S- সেফটি এন্ড সিকিউরিটি (Safety & Security) (নিরাপত্তা):
শ্রমিকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে কোন কোম্পানির প্রথম অগ্রাধিকার। যেমন- আমরা প্রোডাকশনের শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য নিডেল গার্ড, আই গার্ড; কাটিং ম্যানের নিরাপত্তার জন্য মেটাল গ্লোভস ব্যাবহার করি।
♦6S এর সুবিধাসমূহ:
নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন
উন্নত কাজের পরিবেশ
জায়গার (work place) ব্যবহার উল্লেখজনক ভাবে কমায়
বস্তু,তথ্য ও যন্ত্র সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভবপর হয়
কোয়ালিটি সম্পর্কিত সমস্যা দূর করে/ কমিয়ে দেয়
খরচ কমায়
গ্রাহকের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং
কাজের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে।
৬ টি এস (6S) চেক করার একটি স্ট্যান্ডার্ড উদাহরণ
1. কর্মস্থল থেকে অপ্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে ফেলা
2. যন্ত্রপাতির সংরক্ষণ (যন্ত্রপাতির নাম লিখে তা সাজিয়ে রাখুন )
3. পূর্বনির্ধারিত টার্গেট অনুযায়ী নির্দিষ্ট WIP(ওয়ার্ক ইন প্রসেস) রাখা ।
4. নির্ধারিত মার্কিং জায়গায় জিনিসপত্র সঠিকভাবে রাখা ।
5. সমস্ত টুলস/যন্ত্রাংশগুলি দৃশ্যমান বোর্ডে রাখা ।
6. কর্মস্থলের বাতাস প্রবাহের লাইন বা যন্ত্রাংশগুলিকে সঠিকভাবে ও আলাদা স্থানে নিরাপদে রাখা ।
7. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জিনিস পত্র নির্ধারিত জায়গায় রাখা ।
8. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ময়লা ও আর্বজনা থেকে কর্মস্থল পরিষ্কার রাখা ।
9. যন্ত্রপাতি পরিষ্কার ও কার্যকর রাখা ।
10. বর্তমান কাজের প্রয়োজনে কাগজপত্র ভালোভাবে রাখা ।
11. সকল 6S রিজেক্ট দ্রব্য সমূহ নির্ধারিত স্থানে রাখা ।
12. কোন জায়গায় কোন জিনিস যখনই বিপদজনক অবস্থায় থাকে, তাহলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
Written By: Sydul Jannat - SSS.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন