ডেনিমশিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এনভয় টেক্সটাইলস। বছরে প্রায় ৫০ মিলিয়ন গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। ছয় দশমিক পাঁচ থেকে ১৫ আউন্স ডেনিম ফেব্রিকস উৎপাদন করে তারা। শতভাগ সুতির তৈরি সব ধরনের ডেনিম। প্রতিদিন প্রায় ৬২ টন সুতা উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে এ টেক্সটাইলসের।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এনভয় টেক্সটাইলস। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ২০০৮ সালে। দেশের পোশাকশিল্পে একটি অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সুনাম রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় ডেনিম কাপড় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড (ইটিএল)। এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয় প্রতিষ্ঠানটির পণ্য। দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কম্বোডিয়া, মিসর, জার্মানি, ভারত, ইতালি, কেনিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। বৈশ্বিক নামকরা কয়েকটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠার শুরুতেই। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে হংকংয়ের লি অ্যান্ড ফাং, যুক্তরাষ্ট্রের জর্ডাসি, ওয়ালমার্ট, ক্যালভিন ক্লেইন, ডিজনি ইন্টারন্যাশনাল, ভিএফ, বেল্ক, কোলস, কেনেথ কোল ও রাসেল ব্র্যান্ডস, যুক্তরাজ্যের মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, ডেভেনহ্যামস, নেক্সট ও রিগাটা, ফ্রান্সের সেলিও ও ক্যারিফুর, সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএম, বেলজিয়ামের সিঅ্যান্ডএ, স্পেনের জারা ও তুরস্কের টেমা তুরকিয়ে।
এনভয় টেক্সটাইলস শতভাগ কমপ্লায়েন্স। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের প্রথম লিড প্লাটিনাম সার্টিফায়েড টেক্সটাইল কোম্পানি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় এখানে। উন্নত মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিফিন ও মরিসন থেকে মেশিনারিজ আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি জাপানের সুদাকোমা, যুক্তরাজ্যের জেমস এইচ হাল, বেলজিয়ামে অ্যাটলাস কপকো প্রভৃতি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকেও মেশিনারিজ সরবরাহ করে। উল্লেখ্য, রোপ ডায়িং টেকনোলজিতে বাংলাদেশে এনভয় টেক্সটাইলসই প্রথম।
জ্বালানি ও পরিবেশ পরিকল্পনায় এনভয় টেক্সটাইলস বিশ্বমান অর্জন করেছে। ডেনিম প্রস্তুতকারক কারখানা হিসেবে প্লাটিনাম লিড সনদ পায় এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড। অর্থাৎ ডেনিম কারখানা হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশসম্মত স্থাপনা হচ্ছে এনভয় টেক্সটাইলস। বাংলাদেশে টেক্সটাইল কারখানাগুলোর মধ্যে প্রথম এ সনদ পেয়েছে তারা। পরিবেশ ও জ্বালানি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মান রক্ষা স্থাপনাগুলোর সর্বোচ্চ সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) এ সনদ দিয়েছে। এ লিড সনদপ্রাপ্তির অর্থ বেশি উৎপাদনশীলতা, পরিবেশের ওপর চাপ কম ও কাঁচামালের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার স্থাপনা তৈরি এবং এর ব্যবহার। এ বিশ্বমান ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানটি সব সময় তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। একই সঙ্গে পণ্য উদ্ভাবনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চলেছে তারা।
পরিবেশ-প্রতিবেশসচেতন প্রতিষ্ঠান এনভয়। শ্রমিকবান্ধব। জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেনারেটর ওয়েস্ট হিটকে কাজে লাগিয়ে বাষ্প পরিচালনা করা হয় এনভয় টেক্সটাইলসে। দিনের আলো ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম জ্বালানিতে কারখানা পরিচালনা করা হয়। ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রতিষ্ঠিত এনভয় টেক্সটাইলস চত্বরে পরিকল্পিতভাবে বনায়ন করা হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা সব সময় সহনীয় থাকে। এছাড়া বনায়নের সঙ্গে প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। পানিরও সঠিক ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি। পানিচক্রকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কিলো গ্যালন পানির অপচয় কমাচ্ছে। পানি শোধনাগারের পানি ও বৃষ্টির পানি পুনর্ব্যবহার করার জন্য একটি বড় লেক তৈরি করেছে তারা। এখানে মাছ চাষসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কৃষি সেচ ও অগ্নিনির্বাপণের জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে।
দুই হাজারের বেশি মানুষ এনভয়ে কর্মরত। সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য কর্মীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে তারা। পাশাপাশি সব কর্মীর জন্মদিন পালন করা হয় এখানে। কোনো কর্মীর বিয়ে উপলক্ষে তাদের উপহারসামগ্রী দেওয়ার চল রয়েছে। সদ্যজাত সন্তানের জন্য নানা উপহার তো আছেই। প্রতি মাসে সেরা কর্মী নির্বাচন করা হয়। কর্মীদের জন্য বিনোদনমূলক কার্যক্রমের আয়োজনও করা হয়। এখানে তাদের জন্য থ্রিডি মুভি থিয়েটার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার রয়েছে।
সেখানে ইন-হাউস ডাক্তার রয়েছেন। রয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টার। ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সেবা রয়েছে। মেডিক্যাল চেক-আপের সুযোগও রয়েছে। কর্মদিবসে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ। ১০ কিংবা তার অধিক বছর চাকরি করার পর একজন কর্মীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ঈদ ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, মাসের শেষ কর্মদিবসে বেতন প্রদান, কর্মীদের সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নেওয়া, শিক্ষাবৃত্তি (এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে), জিমনেসিয়াম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, কম্পিউটার কোর্স, কর্মীদের জন্য ডরমিটরি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন