টেক্সটাইল জবের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্ত চেনার উপায় , বাচুন প্রতারণার ফাদ থেকে - Textile Lab | Textile Learning Blog
ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নামে প্রতারণা থামছে না

নগরীতে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নামে প্রতারণা থামছে না। ঢাকা শহরের বিভিন্ন যানবাহন যেমন- লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা, বাস ও বিভিন্ন অলিগলির দেয়ালে লাগানো থাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির স্টিকারগুলো। এসব বিজ্ঞপ্তি দেখে অল্প শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা চাকরি পাওয়ার আশায় ছুটে যাচ্ছে ভুয়া প্রতিষ্ঠানে। আর এ সুযোগে প্রতারক চক্রের সদস্যরা চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
যানবাহনের বিভিন্ন স্টিকার ও দেয়ালে লাগানো পোস্টার থেকে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির নাম জানা যায়। এর মধ্যে রয়েছে- আরএইচ এন্টারপ্রাইজ, লুনা ফ্যাশন হাউজ, রহমান বায়িং হাউজ, সায়েম ফ্যাশন, বাবর এন্টারপ্রাইজ, স্বপ্ন এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম। এছাড়া বিভিন্ন বীমা, ইন্স্যুরেন্স ও সমিতির অফিসের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।

ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই মহাখালী, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, বনানী, উত্তরা, বারিধারা, খিলগাঁও এলাকায় অবস্থিত। ওইসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা যুগান্তরকে বলেন, আমাদের এলাকায় ঝড়ের মতো এসে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হয়। আবার দেখা যায় ২-৩ মাস পরে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যে ব্যক্তিরা এ প্রতিষ্ঠান খোলেন তারা খুব চালাক ও বিচক্ষণ। তাদের সহজেই ধরা যায় না। আর যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে তাদের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। মালিকরা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
লুনা ফ্যাশন হাউজের মালিক সাইফুল বলেন, আমি ময়মনসিংহের ছেলে। বিএ পাস করেছি। অনেক
কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছি। শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে বাবা-মা আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তারা জানেন আমি চাকরি পেলে উপার্জন করে সংসারের হাল ধরব। ঢাকায় এসে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একটা চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার কপালে চাকরি জোটেনি। তাই বাধ্য হয়ে লুনা ফ্যাশন হাউজ নামে এ ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলি।

প্রতারণার শিকার লালবাগের বাসিন্দা জাফর বলেন, আমি এইচএসসি পাস করে বহুদিন ধরে বেকার অবস্থায় আছি। চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিল না। হঠাৎ একদিন দেয়ালে লাগানো একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাই। সেখানে লেখা ছিল ‘প্রশিক্ষণ নিলে মার্চেন্ডাইজার হওয়া যায়’, শিক্ষা- এইচএসসি, বেতন-৩০ হাজার টাকা’। এ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে আমি মতিঝিল চলে যাই।

আরএইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক মন্নান সাহেব বলেন, আমি ১ মাস প্রশিক্ষণ নিলে মার্চেন্ডাইজার হয়ে যাব। তার জন্য আমাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ ফি বাবদ ২০ হাজার টাকা আমি মান্নান সাহেবকে দেই। উনি আমাকে ২ সপ্তাহ পরে আসতে বলেন। ২ সপ্তাহ পরে গিয়ে দেখি অফিসের দরজায় তালা ঝুলছে। অফিস নাকি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতারণার শিকার কামরাঙ্গীচরের বাসিন্দা লুনা আক্তার বলেন, স্বামীর আয় দিয়ে আমার সংসার ঠিকমতো চলছিল না। তাই একটু বাড়তি আয়ের জন্য চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেই। একদিন আমি লেগুনায় যাচ্ছিলাম, হঠাৎ লেগুনায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির স্টিকার দেখতে পাই। সেখানে লেখা ছিল, মহিলা রিসিপশনিস্ট আবশ্যক, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি, বেতন ২০ হাজার টাকা। দেখতে খুবই সুন্দরী ও স্মার্ট হতে হবে। এ দেখে আমি মহাখালীর সেই প্রতিষ্ঠানে যাই। প্রতিষ্ঠানের মালিক চাকরি দেয়ার বিনিময়ে কুপ্রস্তাব দেয়।

লালবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার হেলাল বলেন, লালবাগ থানায় এ ধরনের ভুয়া প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ খুব কম আসে। আর যা আসে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে সেই সব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমার দৃষ্টিতে এটা খুব বড় ধরনের অপরাধ। চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে বেকার ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে টাকা
নেয়া মেনে নেয়া যায় না। তাদের ধরতে আমরা
তৎপর আছি। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রিপোর্টারঃ রাশেদ খান
যুগান্তর
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

job

টেক্সটাইল জবের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্ত চেনার উপায় , বাচুন প্রতারণার ফাদ থেকে

ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নামে প্রতারণা থামছে না

নগরীতে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নামে প্রতারণা থামছে না। ঢাকা শহরের বিভিন্ন যানবাহন যেমন- লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা, বাস ও বিভিন্ন অলিগলির দেয়ালে লাগানো থাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির স্টিকারগুলো। এসব বিজ্ঞপ্তি দেখে অল্প শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা চাকরি পাওয়ার আশায় ছুটে যাচ্ছে ভুয়া প্রতিষ্ঠানে। আর এ সুযোগে প্রতারক চক্রের সদস্যরা চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
যানবাহনের বিভিন্ন স্টিকার ও দেয়ালে লাগানো পোস্টার থেকে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির নাম জানা যায়। এর মধ্যে রয়েছে- আরএইচ এন্টারপ্রাইজ, লুনা ফ্যাশন হাউজ, রহমান বায়িং হাউজ, সায়েম ফ্যাশন, বাবর এন্টারপ্রাইজ, স্বপ্ন এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম। এছাড়া বিভিন্ন বীমা, ইন্স্যুরেন্স ও সমিতির অফিসের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।

ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই মহাখালী, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, বনানী, উত্তরা, বারিধারা, খিলগাঁও এলাকায় অবস্থিত। ওইসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা যুগান্তরকে বলেন, আমাদের এলাকায় ঝড়ের মতো এসে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হয়। আবার দেখা যায় ২-৩ মাস পরে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যে ব্যক্তিরা এ প্রতিষ্ঠান খোলেন তারা খুব চালাক ও বিচক্ষণ। তাদের সহজেই ধরা যায় না। আর যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে তাদের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। মালিকরা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
লুনা ফ্যাশন হাউজের মালিক সাইফুল বলেন, আমি ময়মনসিংহের ছেলে। বিএ পাস করেছি। অনেক
কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছি। শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে বাবা-মা আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তারা জানেন আমি চাকরি পেলে উপার্জন করে সংসারের হাল ধরব। ঢাকায় এসে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একটা চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার কপালে চাকরি জোটেনি। তাই বাধ্য হয়ে লুনা ফ্যাশন হাউজ নামে এ ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলি।

প্রতারণার শিকার লালবাগের বাসিন্দা জাফর বলেন, আমি এইচএসসি পাস করে বহুদিন ধরে বেকার অবস্থায় আছি। চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিল না। হঠাৎ একদিন দেয়ালে লাগানো একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাই। সেখানে লেখা ছিল ‘প্রশিক্ষণ নিলে মার্চেন্ডাইজার হওয়া যায়’, শিক্ষা- এইচএসসি, বেতন-৩০ হাজার টাকা’। এ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে আমি মতিঝিল চলে যাই।

আরএইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক মন্নান সাহেব বলেন, আমি ১ মাস প্রশিক্ষণ নিলে মার্চেন্ডাইজার হয়ে যাব। তার জন্য আমাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ ফি বাবদ ২০ হাজার টাকা আমি মান্নান সাহেবকে দেই। উনি আমাকে ২ সপ্তাহ পরে আসতে বলেন। ২ সপ্তাহ পরে গিয়ে দেখি অফিসের দরজায় তালা ঝুলছে। অফিস নাকি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতারণার শিকার কামরাঙ্গীচরের বাসিন্দা লুনা আক্তার বলেন, স্বামীর আয় দিয়ে আমার সংসার ঠিকমতো চলছিল না। তাই একটু বাড়তি আয়ের জন্য চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেই। একদিন আমি লেগুনায় যাচ্ছিলাম, হঠাৎ লেগুনায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির স্টিকার দেখতে পাই। সেখানে লেখা ছিল, মহিলা রিসিপশনিস্ট আবশ্যক, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি, বেতন ২০ হাজার টাকা। দেখতে খুবই সুন্দরী ও স্মার্ট হতে হবে। এ দেখে আমি মহাখালীর সেই প্রতিষ্ঠানে যাই। প্রতিষ্ঠানের মালিক চাকরি দেয়ার বিনিময়ে কুপ্রস্তাব দেয়।

লালবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার হেলাল বলেন, লালবাগ থানায় এ ধরনের ভুয়া প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ খুব কম আসে। আর যা আসে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে সেই সব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমার দৃষ্টিতে এটা খুব বড় ধরনের অপরাধ। চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে বেকার ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে টাকা
নেয়া মেনে নেয়া যায় না। তাদের ধরতে আমরা
তৎপর আছি। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রিপোর্টারঃ রাশেদ খান
যুগান্তর
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কোন মন্তব্য নেই: