ওয়াশিং প্ল্যান্ট এবং একটি সম্ভাবনাময় চাকরীর ক্ষেত্র:
বর্তমান সময়ে দাড়িয়ে একটা কথা খুব সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাটি অন্য যেকোন পেশার তুলনায় অনেক বেশি সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক গুলো ভাগে বিভক্ত যার মধ্যে রয়েছে স্পিনিং টেকনোলজি,ফেব্রিক মযানুফ্যাকচারিং টেকনোলজি,এপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজি,ওয়েট প্রোসেসিং টেকনোলজি বা টেক্সটাইল রসায়ন এবং টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট ।প্রত্যেকটি ভাগই অনেক সম্ভাবনাময় এবং গুরুত্বপূর্ণ তবে
টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পদ রয়েছে যেখানে চাকুরেদের জন্য পেশাগত সাফল্যের দিক দিয়ে তুলনামূলক বেশি সুযোগ সুবিধা রয়েছে।গার্মেন্টস ওয়াশিং তেমনি একটি সেকশন যেখানে কাজ করে খুব সহজে এবং দ্রুত উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব।
১৯৮৮ র আগে বাংলাদেশে গার্মেন্টস প্রোডাক্ট ওয়াশিং করার কোন ব্যবস্থা ছিল না।যেকোন প্রকার ওয়াশিং এর জন্য বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে হংকং ও সিঙ্গাপুরের উপড় নির্ভরশীল ছিল।তৈরি পোশাককে ওয়াশিং এর জন্য বাইরে পাঠানো হত ওয়াশিং হয়ে গেলে পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনা হত এভাবে কাজ করতে গিয়ে ব্যয় ভার অনেক বেড়ে যেত ,বেড়ে যেত উৎপাদন খরচ।অনেক দিন ধরেই এ অবস্থার আমুল পরিবর্তন এসেছে।শুধু কাঁচামাল ও ব্যাকোয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রি ছারা উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ কার্যকরণ এখন দেশেই সম্পন্ন হচ্ছে।
একনজরে দেখে নিই গার্মেন্টস ওয়াশিং প্ল্যান্ট ঠিক কি কি ধরণের কাজ সম্পাদন করে থাকেঃ-
১। ফেব্রিক তৈরির বিভিন্ন সময়ে যে বিভিন্ন সাইজ রসায়ন প্রয়োগ করা হয় সেগুলোকে এই ওয়াশিং প্ল্যান্ট এ এসে দূর করা হয়।এতে পোশাকের মসৃণতা বৃদ্ধি পায়। সফেনার ব্যাবহার করে এই মসৃণতাকে আরও বাড়িয়ে নেয়া যায়।
২। রং করার সময় ডাই ও পিগমেন্ট গুলোর ব্যবহারে এদের কিছু অপ্রয়োজনীয় অংশ ফেব্রিকের গায়ে লেগে থাকতে পারে,এগুলোকে দূর করতে ফেব্রিককে ওয়াশিং প্ল্যান্টে আনা হয়।
৩। নতুন ধারার ফ্যাশন স্টাইল সৃষ্টি করতে যেমন ঝাপসা রঙের জিন্স প্যান্ট অথবা বেশি গাড় রঙের প্যান্ট ইত্যাদি নতুন স্টাইলের পোশাক ওয়াশিং প্ল্যান্টের কৃতিত্ব।
৪।. ওয়াশিং প্ল্যন্টে এসে কাপড়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঁজ ও কোঁকড়ানো অবস্থা দূর করা হয়।এছাড়া আরও স্পেশালাইজড(বিশেষ বিশেষ উদ্দেশে ওয়াশিং করা হয়ে থাকে যাদের ভিন্ন রকমের প্রভাব থাকে যেমনঃ স্টোন ওয়াশিং,সান্ড ব্লাস্টিং,এনজাইম ওয়াশ ইত্যাদি)
ওয়াশিং প্ল্যান্টের একাংশ
গার্মেন্টস ওয়াশিং এবং ডাইং , ওয়েট প্রোসেসিং টেকনোলজির একটি অংশ যে জায়গাতে বিভিন্ন ভাবে পোশাকের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়ে থাকে।কাপড়ের প্রকৃতির ভিন্নতায় ভিন্ন ভিন্ন গার্মেন্টস ওয়াশ প্রযোজ্য হয় যাদের প্রভাব আলাদা আলাদা ।
টুইল,ক্যানভাস বা নীটেড কাপড়ের জন্যে সাধারণ ওয়াশ,পিগমেন্ট ওয়াশ, কস্টিক ও সিলিকন ওয়াশ অন্যদিকে ডেনিম,জিন্স বা গ্যাবারডিন কাপড়ের জন্য এনজাইম ওয়াশ,স্টোন ওয়াশ,ব্লিছ ও এসিড ওয়াসকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।
একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার কোন ওয়াশিং প্ল্যান্টের প্রোডাকশন অফিসার,সহকারি রসায়নবিদ ইত্যাদি পদ লাভ করতে পারেন আবার কোণ বাইং হাউজের ওয়াশ টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতে পারেন।
এসমস্ত পেশার ক্ষেত্রে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি সহ যদি কারো ওয়াশিং সেকশনে ৪-৫ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় তাকে আর পেছনে তাকাতে হবে না। ধীরে ধীরে বড় অংকের বেতনের সাথে আরও অনেক রকমের সুযোগ সুবিধা পেতে শুরু করবেন।
এ সম্পর্কে বিশিষ্ট জন দের মতামত বিশ্লেষণ করে যেটা পাওয়া গেছে তা হল বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের ওয়াশিং সেক্টরটি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকলেও এখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষিত লোকবলের ব্যাপক অভাব রয়েছে, বিশেষত যথেষ্ট পরিমাণে মানসম্মত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার নেই।যে পরিমাণে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং অনেক ক্ষেত্রে নিন্ম দক্ষতা সম্পন্ন ।
তাছাড়া সমগ্র তৈরি পোশাক শিল্পের সিংহভাগ চাকুরী এখনও নন-টেকনিকাল ব্যাক্তিদের দখলে । তবে আশার কথা হল দ্রুত এ অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।তাই একজন ছাত্র যদি তার পেশাগত জীবন নিয়ে যথেষ্ট প্রত্যয়ী হয়ে স্বপ্ন দেখেন তাহলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ হবে তার জন্য অবশ্যই একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।তবে মনে রাখতে হবে এ পেশায় অভিজ্ঞতা একটা অনেক বড় ব্যাপার ।কারন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন খুব সহজে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাইয়ার নিয়ন্ত্রন করতে ঐপারবেন,যেটা অনভিজ্ঞ কারো পক্ষে একটু কঠিন হবে।
একজন অভিজ্ঞ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ওয়াশিং প্ল্যান্ট ছাড়াও কোন বাইং হাউজের ওয়াশ টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরী করতে পারেন।ওয়াশিং টেকনিশিয়ান বাইং হাউজের একটি বড় পদ, যেখানে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন