প্লাস্টিক বোতল থেকে ফাইবার তৈরীর ব্যবসা
পানি খাওয়ার পর যে বোতলটি বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, সেই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফাইবার। এই ফাইবার দিয়ে সুতা বানিয়ে রং-বেরঙের পলেস্টার কাপড় তৈরি হচ্ছে। এই তুলা আবার বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে রি-সাইকেল পদ্ধতিতে তুলা তৈরির এই অভিনব কাজটি এখন দেশেই হচ্ছে।
ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের পানিয়াশাইলে চীনা প্রযুক্তির একটি কারখানা তৈরি হয়েছে। মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে ওই কারখানাটিতে গত কয়েক মাস ধরে প্লাস্টিক পেট বোতল দিয়ে দৈনিক প্রায় ৪০ টন তুলা উত্পাদন করা হচ্ছে। চীন, ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে এ ধরনের কারখানা থাকলেও বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে /ফাইবার উৎপাদন এটিই প্রথম কারখানা।
যেভাবে পাওয়া যায় ফাইবার :
পানি খাওয়ার পর ফেলে দেওয়া স্বচ্ছ বোতল সংগ্রহ করা হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে। এই পেট বোতল ছোট ছোট করে কেটে ফ্লেক্স তৈরি করা হয়। এরপর গরম পানি দিয়ে সেই ফ্লেক্স ধোয়া হয়। উচ্চ তাপ ও চাপে সেই ফ্লেক্স আট ঘণ্টা বায়ু নিরোধক ড্রামে রাখা হয়। ভ্যাকুয়াম ড্রামে তাপ দেওয়ার পর তৈরি হয় পেস্ট। সেই পেস্ট স্পিনারেট দিয়ে স্নাইবার করা হয়। এরপর তা সূক্ষ্ম সুতার আকারে বেরিয়ে আসে।
ওই সুতা আবার বিভিন্ন আকারের কাটিং করে মেশিনে ঢোকানোর পর পলেস্টার স্ট্যাপল ফাইবার (পি.এস.এফ) হিসেবে সাদা তুলা বেরিয়ে আসে। উৎপাদন তুলা বাজারে বিক্রি করা কার্পাস তুলার মতই মোলায়েম ও মসৃণ। প্লাস্টিক বোতল থেকে তুলা তৈরির এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর রপ্তানির উদ্দেশ্যে মেশিনেই তা প্যাকেজিং করা হয়। এ থেকে সুতার মতো যে বর্জ্য বের হয় সেটিও আবার রি-সাইকেল পদ্ধতিতে তুলা তৈরিতে ব্যবহূত হয়।
জানা গেছে, এ ধরনের তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। আগে চীন কাঁচামাল হিসেবে সরাসরি প্লাস্টিক পেট বোতল আমদানি করে নিজেরাই এ ধরনের তুলা উৎপাদন করত। সম্প্রতি দেশটি প্লাস্টিক বোতল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এখন ফিনিশড পণ্য হিসেবে ফাইবার বা পি.এস.এফ. আমদানি করছে দেশটি। এ কারণে রপ্তানি পণ্য হিসেবে এ ধরণেন পি.এস.এফ তুলার কদর বাড়ছে।
মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি আবুল কালাম মোহাম্মদ মূসা বলেন, এ ধরনের কারখানা গড়ার পেছনে দুটো উদ্দেশ্য কাজ করেছে।
এক : ফাইবার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া বোতল ব্যবহার করায় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ ফাইবার বানাতে যে ধরনের বোতল ব্যবহৃত হয় তা মাটির সঙ্গে মেশে না। ফলে পরিবেশের ব্যাপক দূষণ করে এটি। সেজন্য পরিবেশ সুরক্ষায় ফেলে দেওয়া এই বোতল কারখানায় ব্যবহার করা হচ্ছে কাঁচামাল হিসেবে।
দুই : এই বর্জ্য থেকে উৎপাদিত ফাইবার বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারখানার কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এই প্রথম স্থাপিত এ ধরনের কারখানা থেকে দৈনিক প্রায় ৪০ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদিত হচ্ছে, যা শিগগিরই ৮০ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
প্রতি কেজি পি.এস.এফের রপ্তানি মূল্য এক ডলার হলেও দৈনিক প্রায় ৮০ হাজার ডলারের তুলা উৎপাদনে সক্ষম ওই কারখানাটি। তবে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিতে সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কারখানার কর্মকর্তারা জানান, নতুন প্রযুক্তির কারখানাটি স্থাপনের পর কাঁচামাল সংগ্রহসহ দেশীয় বাজারে উৎপাদিত তুলার যথাযথ মূল্য না থাকায় এটি অলাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমানে সরকার পেট বোতল ফ্লেক্স রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। কারখানা সংশ্লিষ্টরা পেট বোতল ব্যবহার করে ফাইবার উৎপাদন করার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করছেন। ফলে এই খাতে তারা ২০ শতাংশ রপ্তানি ভর্তুকির সুযোগ চান সরকারের কাছে।
আবুল কালাম মোহাম্মদ মূসা বলেন, আমাদের উৎপাদিত ফাইবারের চাহিদা বিদেশে থাকলেও দেশে এখনো সে ধরনের চাহিদা তৈরি হয়নি। ফলে যথাযথ মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকার রপ্তানি ভর্তুকি দিলে সম্ভাবনাময় এই শিল্প খাতের বিকাশ ঘটবে। এতে ফেলে দেওয়া বর্জ্য ব্যবহার করে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে, তেমনি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে সম্ভাবনাময় এই শিল্পে।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন ডটকম।
MUMANU Polyester Industries Ltd.
Head office
3/8 A, Block: D, Lalmatia
Dhaka, Bangladesh.
telephone: +88 029116052, + 8801928281818
e-mail: mumanupolyester@gmail.com
Factory
Panishal, P.O. Jamirta
Singair, Manikgonj
Dhaka, Bangladesh
http://mumanupolyester.com/
র্য মেটেরিয়াল কালেকশন কিভাবে হয়
টোকাইদের কুড়ানো বোতল ও বাসাবাড়ির আবর্জনার সঙ্গে আসা প্লাস্টিকের বোতল ভাঙারি দোকানদারের হাত ধরে চলে আসে আমাদের কাছে, আর বোতল পরিষ্কার করে মেশিনে গুঁড়ো করে রপ্তানিযোগ্য কাঁচামাল বানাই।
সবশেষে সেই কাঁচামাল রপ্তানি করে আসে বৈদেশিক মুদ্রা তথা স্বর্ণমুদ্রা। আর এতেই গত আট বছর যাবত আমিসহ আমার প্রতিষ্ঠানের সাত শ্রমিকের স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলছে।
অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর গেন্ডারিয়া রেললাইনের পাশঘেঁষা পেটফ্লাস্ক কারখানার মালিক মো. ইকবাল হোসাইন (৪৭)। গত আট বছর ধরে পুরাতন বোতল ভাঙিয়ে বিক্রি করে সংসার বেশ ভালোই চলছে বলে জানালে তিনি।
শুক্রবার সকালে কারখানার কাজের ফাঁকে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে।
গেন্ডারিয়া রেল স্টেশনের রেলপথ ধরে জুরাইনের দিকে হেঁটে যেতেই পশ্চিম পাশে চোখে পড়বে বোতলের স্তূপসহ একটি পুরাতন বোতল ভাঙানোর কারখানা। শ্যামপুর এলাকার আদি পেটফ্লাস্ক কারখানাটিতে পুরাতন বোতল পরিষ্কার ও ভাঙানোর কাজে ব্যস্ত যেন মালিকসহ এখানকার শ্রমিকরা।
এমন কর্মব্যস্ততার কারণ হিসেবে ওই কারখানার মালিক বললেন, ‘এ এলাকায় আমার প্রতিষ্ঠানটি একমাত্র পেটফ্লাস্ক ফ্যাক্টরি। অন্যদিকে রপ্তানি ছাড়াও এই কাঁচামাল দেশে সুতা ও তুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর এতে মালের চাহিদার কারণে বর্তমানে কাজের চাপ অনেকাংশে বেড়েছে।’
এতো বোতল কীভাবে সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘টোকাই ও ভাঙারিদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ত্রিশ টাকা দরে কিনি। কস্টিক সোডা দিয়ে বোতল পরিষ্কার করি এবং মেশিনে গুঁড়ো করে পাইকারি দরে কেজি প্রতি ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করি।’
কারা এই কাঁচামালের ক্রেতা জানতে চাইলে বলেন, ‘কাঁচামাল হিসেবে এসব মাল বিদেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানিকারক ছাড়াও এখন দেশীয় প্লাস্টিকের বস্তা তৈরিকারকরা আমাদের কাছ থেকে কিনে। আবার শুনেছি পদ্মাসেতুর কাজেও এসব কাঁচামালের তৈরি বস্তা ব্যবহার হচ্ছে।’
ক্ষুদ্র এই শিল্পের প্রতিকূলতা কেমন জানতে চাইলে ইকবাল বলেন, ‘প্রতিকূলতা তো অছেই। শ্রমিক সংকট ছাড়াও রয়েছে বিদ্যুৎ বিলের চাপ। তাই শ্রমিকদের সঙ্গে নিজেও কাজ করছি প্রতিনিয়ত।’
এই শিল্পের ভবিষ্যৎ কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই কাঁচামাল যদি আমরা ভালো দামে বিক্রি করতে পারতাম, তবে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই ধরনের কারখানা চালু করতো। এ পণ্যে মধ্যস্বত্তভোগীদের কারণে আমরা ব্যবসা করতে পারি না। সরকার আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতি আরো মনোযোগী হলে এই শিল্প দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।’
প্লাস্টিক PET বোতল রিসাইকেলের কিছু তথ্যঃ
10 প্লাস্টিক বোতল = 1পাউন্ড পলিয়েস্টার ফাইবার
1 টন (2000) প্লাস্টিক বোতল পুনর্ব্যবহার করলে তা 3.8 ব্যারেল পরিমান তেল কে সেইভ করে
পুনর্ব্যবহৃত 1 মিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল 250 ব্যারেল তেল সংরক্ষণ করে
পুনর্ব্যবহৃত 1 মিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল বায়ুমন্ডলে মুক্তি থেকে 180 মিলিয়ন টন CO2 নির্গমন পরিহার করে।
মার্কিনরা তাদের তেলের প্রায় 10% (প্রতিদিন 2 মিলিয়ন ব্যারেল) ব্যবহার করে এই বোতল উৎপাদনের পেছনে।
রিসাইকেল প্লাস্টিকের বোতল নতুন তুলনায় 8 গুণ কম শক্তি উৎপন্ন করে
পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি 150 টি ফ্লিচ ফেব্রিক তৈরি করা হলে 1 ব্যারেল তেল সংরক্ষণ করে।
পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি 500 টি-শার্ট তেলের 1 ব্যারেল সংরক্ষণ করে
রিসাইকেল করা প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি 50 ব্যাক প্যাকগুলি প্রায় 1 ব্যারেল তেল সেইভ করে ।
প্রতি বছর আমেরিকানরা যে পপরিমান প্লাস্টিকের বোতল ব্যাবহার করে 47 মিলিয়ন ব্যারেল তেল লাগে এবং ম্যানুফেকচার করতে 1.0 বিলিয়ন পাউন্ডের CO2 বায়ুমন্ডলে চলে যায় ।
প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি হচ্ছে ফাইবার
কুড়িয়ে নেয়া প্লাস্টিকের পানির বোতল থেকে দেশে তৈরি হচ্ছে শতকোটি টাকার ফাইবার। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্লাস্টিকের এই ফাইবার রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। আশা করা হচ্ছে, বছর শেষে রফতানি আয় ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পোশাক খাতে বার্ষিক তুলার চাহিদা ৪৫ থেকে ৫০ লাখ বেল। উৎপাদন হয় ১ লাখ বেলের সামান্য বেশি। এ অবস্থায় টেক্সটাইল শিল্প সুরক্ষা ও ঘাটতি পূরণে তুলা উৎপাদনের বিকল্প নেই। তুলার অভাব পূরণে নতুন সম্ভাবনা প্লাস্টিকের ফাইবার উৎপাদন ও তা থেকে সুতা তৈরি করা। গেঞ্জি, জার্সি, ট্রাউজার এবং ব্লেজারের মতো দামী কাপড়ে প্লাস্টিকের সুতা অপরিহার্যভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে রিসাইকেল পদ্ধতিতে তুলা তৈরিতে ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের পানিয়াশাইলে চীনা প্রযুক্তির একটি কারখানা তৈরি হয়েছে। মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কারখানাটিতে কয়েক মাস ধরে প্লাস্টিক পেট বোতল দিয়ে দৈনিক ৪০ টন তুলা উৎপাদন করা হচ্ছে। চীন, ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে এ ধরনের কারখানা থাকলেও বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে তুলা উৎপাদনের এটিই প্রথম কারখানা।
সূত্রমতে, বর্তমান প্লাস্টিক শিল্পের বার্ষিক টার্নওভার হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। রফতানিমুখী এ শিল্প খাত থেকে সরকার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। এটি একটি উদীয়মান শিল্প। সরকার ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় বিসিকের মাধ্যমে ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমির ওপর প্লাস্টিক শিল্প নগরীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকে অনুমোদনক্রমে কাজ চলছে। এছাড়া ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন হচ্ছে। বেজা কর্তৃপক্ষ বিপিজিএমইএকে ১০৫ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে।
যে প্রক্রিয়ায় বোতল থেকে তুলা হচ্ছে ॥ পানি খাওয়ার পর ফেলে দেয়া স্বচ্ছ বোতল টোকাইদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছ থেকে এই পেট বোতল সংগ্রহ করে ছোট করে কেটে ফ্লেক্স তৈরি করা হয়। এর পর গরম পানি দিয়ে সেই ফ্লেক্স ধোয়া হয়। উচ্চ তাপ ও চাপে সেই ফ্লেক্স আট ঘণ্টা বায়ু নিরোধক ড্রামে রাখা হয়। ভ্যাকুয়াম ড্রামে তাপ দেয়ার পর তৈরি হয় পেস্ট। সেই পেস্ট স্পিনারেট দিয়ে স্নাইবার করা হয়। এর পর তা সূক্ষ্ম সুতার আকারে বেরিয়ে আসে। ওই সুতা আবার বিভিন্ন আকারে কাটিং করে মেশিনে ঢোকানোর পর পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার (পিএসএফ) হিসেবে সাদা ফাইবার বেরিয়ে আসে। উৎপাদিত ফাইবার বাজারে বিক্রি করা কার্পাস তুলার মতোই মোলায়েম ও মসৃণ। প্লাস্টিক বোতল থেকে তুলা তৈরির এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর রফতানির উদ্দেশে মেশিনেই তা প্যাকেজিং করা হয়। এ থেকে সুতার মতো যে বর্জ্য বের হয় সেটিও আবার রিসাইকেল পদ্ধতিতে ফাইবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
জানা গেছে, প্লাস্টিকের ফাইবার চাহিদা দেশে বাড়ছে। এছাড়া এ ধরনের তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশে। আগে চীন কাঁচামাল হিসেবে সরাসরি প্লাস্টিক পেট বোতল আমদানি করে নিজেরাই এ ধরনের তুলা উৎপাদন করত। সম্প্রতি দেশটি প্লাস্টিক বোতল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এখন ফিনিশড পণ্য হিসেবে ফাইবার বা পিএসএফ আমদানি করছে দেশটি। এ কারণে রফতানি পণ্য হিসেবে এ ধরনের পিএসএফ তুলার কদর বাড়ছে।
মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি আবুল কালাম মোহাম্মদ মূসা জনকণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের কারখানা গড়ার পেছনে দুটো উদ্দেশ্য কাজ করেছে। প্রথমত, তুলা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে প্লাস্টিকের ফেলে দেয়া বোতল ব্যবহার করায় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, এই বর্জ্য থেকে উৎপাদিত ফাইবার বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম স্থাপিত এ ধরনের কারখানা থেকে দৈনিক প্রায় ৪০ মেট্রিক টন ফাইবার উৎপাদন হচ্ছে, যা শীঘ্রই ৮০ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
তুলা উৎপাদনে যেসব চ্যালেঞ্জ ॥ সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিতে সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন প্রযুক্তির কারখানাটি স্থাপনের পর কাঁচামাল সংগ্রহসহ দেশীয় বাজারে উৎপাদিত তুলার যথাযথ মূল্য না থাকায় এটি অলাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে সরকার পেট বোতল ফ্লেক্স রফতানিতে ১০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। কারখানা সংশ্লিষ্টরা পেট বোতল ব্যবহার করে ফাইবার উৎপাদন করার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করছেন। ফলে এই খাতে তারা ২০ শতাংশ রফতানি ভর্তুকির সুযোগ চান সরকারের কাছে। ভতুর্কি দেয়া হলে রফতানি বহুমুখীকরণের পাশাপাশি এ খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে (বিপিজিএমইএ) প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ে এখনও ডেভেলপ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর পরও টোকাই, ভাঙ্গারির দোকানের মাধ্যমে রাস্তার আর্বজনা থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে ৭০ শতাংশ রিসাইক্লিং করে এই শিল্পের পণ্য তৈরি হয়। রিসাইক্লিং পণ্যের কারণে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হচ্ছে। বিপিজিএমইএর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, রিসাইক্লিং খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া প্রয়োজন। প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ডেভেলপ করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, চলতি বাজেটে প্লাস্টিক খাতের কিছু প্রস্তাব উপেক্ষিত হয়েছে। তিনি জানান, প্লাস্টিকের বোতল থেকে তুলা এবং সেই তুলা থেকে পলিয়েস্টার কাপড় তৈরি হচ্ছে। এটি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প খাত।
পানি খাওয়ার পর যে বোতলটি বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, সেই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফাইবার। এই ফাইবার দিয়ে সুতা বানিয়ে রং-বেরঙের পলেস্টার কাপড় তৈরি হচ্ছে। এই তুলা আবার বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে রি-সাইকেল পদ্ধতিতে তুলা তৈরির এই অভিনব কাজটি এখন দেশেই হচ্ছে।
ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের পানিয়াশাইলে চীনা প্রযুক্তির একটি কারখানা তৈরি হয়েছে। মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে ওই কারখানাটিতে গত কয়েক মাস ধরে প্লাস্টিক পেট বোতল দিয়ে দৈনিক প্রায় ৪০ টন তুলা উত্পাদন করা হচ্ছে। চীন, ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে এ ধরনের কারখানা থাকলেও বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে /ফাইবার উৎপাদন এটিই প্রথম কারখানা।
যেভাবে পাওয়া যায় ফাইবার :
পানি খাওয়ার পর ফেলে দেওয়া স্বচ্ছ বোতল সংগ্রহ করা হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে। এই পেট বোতল ছোট ছোট করে কেটে ফ্লেক্স তৈরি করা হয়। এরপর গরম পানি দিয়ে সেই ফ্লেক্স ধোয়া হয়। উচ্চ তাপ ও চাপে সেই ফ্লেক্স আট ঘণ্টা বায়ু নিরোধক ড্রামে রাখা হয়। ভ্যাকুয়াম ড্রামে তাপ দেওয়ার পর তৈরি হয় পেস্ট। সেই পেস্ট স্পিনারেট দিয়ে স্নাইবার করা হয়। এরপর তা সূক্ষ্ম সুতার আকারে বেরিয়ে আসে।
ওই সুতা আবার বিভিন্ন আকারের কাটিং করে মেশিনে ঢোকানোর পর পলেস্টার স্ট্যাপল ফাইবার (পি.এস.এফ) হিসেবে সাদা তুলা বেরিয়ে আসে। উৎপাদন তুলা বাজারে বিক্রি করা কার্পাস তুলার মতই মোলায়েম ও মসৃণ। প্লাস্টিক বোতল থেকে তুলা তৈরির এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর রপ্তানির উদ্দেশ্যে মেশিনেই তা প্যাকেজিং করা হয়। এ থেকে সুতার মতো যে বর্জ্য বের হয় সেটিও আবার রি-সাইকেল পদ্ধতিতে তুলা তৈরিতে ব্যবহূত হয়।
জানা গেছে, এ ধরনের তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। আগে চীন কাঁচামাল হিসেবে সরাসরি প্লাস্টিক পেট বোতল আমদানি করে নিজেরাই এ ধরনের তুলা উৎপাদন করত। সম্প্রতি দেশটি প্লাস্টিক বোতল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এখন ফিনিশড পণ্য হিসেবে ফাইবার বা পি.এস.এফ. আমদানি করছে দেশটি। এ কারণে রপ্তানি পণ্য হিসেবে এ ধরণেন পি.এস.এফ তুলার কদর বাড়ছে।
মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি আবুল কালাম মোহাম্মদ মূসা বলেন, এ ধরনের কারখানা গড়ার পেছনে দুটো উদ্দেশ্য কাজ করেছে।
এক : ফাইবার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া বোতল ব্যবহার করায় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ ফাইবার বানাতে যে ধরনের বোতল ব্যবহৃত হয় তা মাটির সঙ্গে মেশে না। ফলে পরিবেশের ব্যাপক দূষণ করে এটি। সেজন্য পরিবেশ সুরক্ষায় ফেলে দেওয়া এই বোতল কারখানায় ব্যবহার করা হচ্ছে কাঁচামাল হিসেবে।
দুই : এই বর্জ্য থেকে উৎপাদিত ফাইবার বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারখানার কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এই প্রথম স্থাপিত এ ধরনের কারখানা থেকে দৈনিক প্রায় ৪০ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদিত হচ্ছে, যা শিগগিরই ৮০ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
প্রতি কেজি পি.এস.এফের রপ্তানি মূল্য এক ডলার হলেও দৈনিক প্রায় ৮০ হাজার ডলারের তুলা উৎপাদনে সক্ষম ওই কারখানাটি। তবে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিতে সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কারখানার কর্মকর্তারা জানান, নতুন প্রযুক্তির কারখানাটি স্থাপনের পর কাঁচামাল সংগ্রহসহ দেশীয় বাজারে উৎপাদিত তুলার যথাযথ মূল্য না থাকায় এটি অলাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমানে সরকার পেট বোতল ফ্লেক্স রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। কারখানা সংশ্লিষ্টরা পেট বোতল ব্যবহার করে ফাইবার উৎপাদন করার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করছেন। ফলে এই খাতে তারা ২০ শতাংশ রপ্তানি ভর্তুকির সুযোগ চান সরকারের কাছে।
আবুল কালাম মোহাম্মদ মূসা বলেন, আমাদের উৎপাদিত ফাইবারের চাহিদা বিদেশে থাকলেও দেশে এখনো সে ধরনের চাহিদা তৈরি হয়নি। ফলে যথাযথ মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকার রপ্তানি ভর্তুকি দিলে সম্ভাবনাময় এই শিল্প খাতের বিকাশ ঘটবে। এতে ফেলে দেওয়া বর্জ্য ব্যবহার করে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে, তেমনি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে সম্ভাবনাময় এই শিল্পে।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন ডটকম।
MUMANU Polyester Industries Ltd.
Head office
3/8 A, Block: D, Lalmatia
Dhaka, Bangladesh.
telephone: +88 029116052, + 8801928281818
e-mail: mumanupolyester@gmail.com
Factory
Panishal, P.O. Jamirta
Singair, Manikgonj
Dhaka, Bangladesh
http://mumanupolyester.com/
র্য মেটেরিয়াল কালেকশন কিভাবে হয়
টোকাইদের কুড়ানো বোতল ও বাসাবাড়ির আবর্জনার সঙ্গে আসা প্লাস্টিকের বোতল ভাঙারি দোকানদারের হাত ধরে চলে আসে আমাদের কাছে, আর বোতল পরিষ্কার করে মেশিনে গুঁড়ো করে রপ্তানিযোগ্য কাঁচামাল বানাই।
সবশেষে সেই কাঁচামাল রপ্তানি করে আসে বৈদেশিক মুদ্রা তথা স্বর্ণমুদ্রা। আর এতেই গত আট বছর যাবত আমিসহ আমার প্রতিষ্ঠানের সাত শ্রমিকের স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলছে।
অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর গেন্ডারিয়া রেললাইনের পাশঘেঁষা পেটফ্লাস্ক কারখানার মালিক মো. ইকবাল হোসাইন (৪৭)। গত আট বছর ধরে পুরাতন বোতল ভাঙিয়ে বিক্রি করে সংসার বেশ ভালোই চলছে বলে জানালে তিনি।
শুক্রবার সকালে কারখানার কাজের ফাঁকে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে।
গেন্ডারিয়া রেল স্টেশনের রেলপথ ধরে জুরাইনের দিকে হেঁটে যেতেই পশ্চিম পাশে চোখে পড়বে বোতলের স্তূপসহ একটি পুরাতন বোতল ভাঙানোর কারখানা। শ্যামপুর এলাকার আদি পেটফ্লাস্ক কারখানাটিতে পুরাতন বোতল পরিষ্কার ও ভাঙানোর কাজে ব্যস্ত যেন মালিকসহ এখানকার শ্রমিকরা।
এমন কর্মব্যস্ততার কারণ হিসেবে ওই কারখানার মালিক বললেন, ‘এ এলাকায় আমার প্রতিষ্ঠানটি একমাত্র পেটফ্লাস্ক ফ্যাক্টরি। অন্যদিকে রপ্তানি ছাড়াও এই কাঁচামাল দেশে সুতা ও তুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর এতে মালের চাহিদার কারণে বর্তমানে কাজের চাপ অনেকাংশে বেড়েছে।’
এতো বোতল কীভাবে সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘টোকাই ও ভাঙারিদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ত্রিশ টাকা দরে কিনি। কস্টিক সোডা দিয়ে বোতল পরিষ্কার করি এবং মেশিনে গুঁড়ো করে পাইকারি দরে কেজি প্রতি ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করি।’
কারা এই কাঁচামালের ক্রেতা জানতে চাইলে বলেন, ‘কাঁচামাল হিসেবে এসব মাল বিদেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানিকারক ছাড়াও এখন দেশীয় প্লাস্টিকের বস্তা তৈরিকারকরা আমাদের কাছ থেকে কিনে। আবার শুনেছি পদ্মাসেতুর কাজেও এসব কাঁচামালের তৈরি বস্তা ব্যবহার হচ্ছে।’
ক্ষুদ্র এই শিল্পের প্রতিকূলতা কেমন জানতে চাইলে ইকবাল বলেন, ‘প্রতিকূলতা তো অছেই। শ্রমিক সংকট ছাড়াও রয়েছে বিদ্যুৎ বিলের চাপ। তাই শ্রমিকদের সঙ্গে নিজেও কাজ করছি প্রতিনিয়ত।’
এই শিল্পের ভবিষ্যৎ কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই কাঁচামাল যদি আমরা ভালো দামে বিক্রি করতে পারতাম, তবে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই ধরনের কারখানা চালু করতো। এ পণ্যে মধ্যস্বত্তভোগীদের কারণে আমরা ব্যবসা করতে পারি না। সরকার আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতি আরো মনোযোগী হলে এই শিল্প দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।’
প্লাস্টিক PET বোতল রিসাইকেলের কিছু তথ্যঃ
10 প্লাস্টিক বোতল = 1পাউন্ড পলিয়েস্টার ফাইবার
1 টন (2000) প্লাস্টিক বোতল পুনর্ব্যবহার করলে তা 3.8 ব্যারেল পরিমান তেল কে সেইভ করে
পুনর্ব্যবহৃত 1 মিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল 250 ব্যারেল তেল সংরক্ষণ করে
পুনর্ব্যবহৃত 1 মিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল বায়ুমন্ডলে মুক্তি থেকে 180 মিলিয়ন টন CO2 নির্গমন পরিহার করে।
মার্কিনরা তাদের তেলের প্রায় 10% (প্রতিদিন 2 মিলিয়ন ব্যারেল) ব্যবহার করে এই বোতল উৎপাদনের পেছনে।
রিসাইকেল প্লাস্টিকের বোতল নতুন তুলনায় 8 গুণ কম শক্তি উৎপন্ন করে
পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি 150 টি ফ্লিচ ফেব্রিক তৈরি করা হলে 1 ব্যারেল তেল সংরক্ষণ করে।
পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি 500 টি-শার্ট তেলের 1 ব্যারেল সংরক্ষণ করে
রিসাইকেল করা প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি 50 ব্যাক প্যাকগুলি প্রায় 1 ব্যারেল তেল সেইভ করে ।
প্রতি বছর আমেরিকানরা যে পপরিমান প্লাস্টিকের বোতল ব্যাবহার করে 47 মিলিয়ন ব্যারেল তেল লাগে এবং ম্যানুফেকচার করতে 1.0 বিলিয়ন পাউন্ডের CO2 বায়ুমন্ডলে চলে যায় ।
প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি হচ্ছে ফাইবার
কুড়িয়ে নেয়া প্লাস্টিকের পানির বোতল থেকে দেশে তৈরি হচ্ছে শতকোটি টাকার ফাইবার। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্লাস্টিকের এই ফাইবার রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। আশা করা হচ্ছে, বছর শেষে রফতানি আয় ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পোশাক খাতে বার্ষিক তুলার চাহিদা ৪৫ থেকে ৫০ লাখ বেল। উৎপাদন হয় ১ লাখ বেলের সামান্য বেশি। এ অবস্থায় টেক্সটাইল শিল্প সুরক্ষা ও ঘাটতি পূরণে তুলা উৎপাদনের বিকল্প নেই। তুলার অভাব পূরণে নতুন সম্ভাবনা প্লাস্টিকের ফাইবার উৎপাদন ও তা থেকে সুতা তৈরি করা। গেঞ্জি, জার্সি, ট্রাউজার এবং ব্লেজারের মতো দামী কাপড়ে প্লাস্টিকের সুতা অপরিহার্যভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে রিসাইকেল পদ্ধতিতে তুলা তৈরিতে ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের পানিয়াশাইলে চীনা প্রযুক্তির একটি কারখানা তৈরি হয়েছে। মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কারখানাটিতে কয়েক মাস ধরে প্লাস্টিক পেট বোতল দিয়ে দৈনিক ৪০ টন তুলা উৎপাদন করা হচ্ছে। চীন, ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে এ ধরনের কারখানা থাকলেও বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে তুলা উৎপাদনের এটিই প্রথম কারখানা।
সূত্রমতে, বর্তমান প্লাস্টিক শিল্পের বার্ষিক টার্নওভার হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। রফতানিমুখী এ শিল্প খাত থেকে সরকার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। এটি একটি উদীয়মান শিল্প। সরকার ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় বিসিকের মাধ্যমে ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমির ওপর প্লাস্টিক শিল্প নগরীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকে অনুমোদনক্রমে কাজ চলছে। এছাড়া ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন হচ্ছে। বেজা কর্তৃপক্ষ বিপিজিএমইএকে ১০৫ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে।
যে প্রক্রিয়ায় বোতল থেকে তুলা হচ্ছে ॥ পানি খাওয়ার পর ফেলে দেয়া স্বচ্ছ বোতল টোকাইদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছ থেকে এই পেট বোতল সংগ্রহ করে ছোট করে কেটে ফ্লেক্স তৈরি করা হয়। এর পর গরম পানি দিয়ে সেই ফ্লেক্স ধোয়া হয়। উচ্চ তাপ ও চাপে সেই ফ্লেক্স আট ঘণ্টা বায়ু নিরোধক ড্রামে রাখা হয়। ভ্যাকুয়াম ড্রামে তাপ দেয়ার পর তৈরি হয় পেস্ট। সেই পেস্ট স্পিনারেট দিয়ে স্নাইবার করা হয়। এর পর তা সূক্ষ্ম সুতার আকারে বেরিয়ে আসে। ওই সুতা আবার বিভিন্ন আকারে কাটিং করে মেশিনে ঢোকানোর পর পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার (পিএসএফ) হিসেবে সাদা ফাইবার বেরিয়ে আসে। উৎপাদিত ফাইবার বাজারে বিক্রি করা কার্পাস তুলার মতোই মোলায়েম ও মসৃণ। প্লাস্টিক বোতল থেকে তুলা তৈরির এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর রফতানির উদ্দেশে মেশিনেই তা প্যাকেজিং করা হয়। এ থেকে সুতার মতো যে বর্জ্য বের হয় সেটিও আবার রিসাইকেল পদ্ধতিতে ফাইবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
জানা গেছে, প্লাস্টিকের ফাইবার চাহিদা দেশে বাড়ছে। এছাড়া এ ধরনের তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশে। আগে চীন কাঁচামাল হিসেবে সরাসরি প্লাস্টিক পেট বোতল আমদানি করে নিজেরাই এ ধরনের তুলা উৎপাদন করত। সম্প্রতি দেশটি প্লাস্টিক বোতল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এখন ফিনিশড পণ্য হিসেবে ফাইবার বা পিএসএফ আমদানি করছে দেশটি। এ কারণে রফতানি পণ্য হিসেবে এ ধরনের পিএসএফ তুলার কদর বাড়ছে।
মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি আবুল কালাম মোহাম্মদ মূসা জনকণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের কারখানা গড়ার পেছনে দুটো উদ্দেশ্য কাজ করেছে। প্রথমত, তুলা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে প্লাস্টিকের ফেলে দেয়া বোতল ব্যবহার করায় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, এই বর্জ্য থেকে উৎপাদিত ফাইবার বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম স্থাপিত এ ধরনের কারখানা থেকে দৈনিক প্রায় ৪০ মেট্রিক টন ফাইবার উৎপাদন হচ্ছে, যা শীঘ্রই ৮০ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
তুলা উৎপাদনে যেসব চ্যালেঞ্জ ॥ সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিতে সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন প্রযুক্তির কারখানাটি স্থাপনের পর কাঁচামাল সংগ্রহসহ দেশীয় বাজারে উৎপাদিত তুলার যথাযথ মূল্য না থাকায় এটি অলাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে সরকার পেট বোতল ফ্লেক্স রফতানিতে ১০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। কারখানা সংশ্লিষ্টরা পেট বোতল ব্যবহার করে ফাইবার উৎপাদন করার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করছেন। ফলে এই খাতে তারা ২০ শতাংশ রফতানি ভর্তুকির সুযোগ চান সরকারের কাছে। ভতুর্কি দেয়া হলে রফতানি বহুমুখীকরণের পাশাপাশি এ খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে (বিপিজিএমইএ) প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ে এখনও ডেভেলপ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর পরও টোকাই, ভাঙ্গারির দোকানের মাধ্যমে রাস্তার আর্বজনা থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে ৭০ শতাংশ রিসাইক্লিং করে এই শিল্পের পণ্য তৈরি হয়। রিসাইক্লিং পণ্যের কারণে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হচ্ছে। বিপিজিএমইএর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, রিসাইক্লিং খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া প্রয়োজন। প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ডেভেলপ করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, চলতি বাজেটে প্লাস্টিক খাতের কিছু প্রস্তাব উপেক্ষিত হয়েছে। তিনি জানান, প্লাস্টিকের বোতল থেকে তুলা এবং সেই তুলা থেকে পলিয়েস্টার কাপড় তৈরি হচ্ছে। এটি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প খাত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন