গার্মেন্টস কারখানার সেফটি কমিটি - ‍Safety Committee - Textile Lab | Textile Learning Blog
সেফটি কমিটি - ‍Safety Committee
সেইফটি কমিটি কি?

What is the Safety Committee?

সেইফটি কমিটি বলতে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল বা টিমকে বুঝায় যা নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরি ও তা রক্ষা করতে মালিক বা নিয়োগ কর্তাকে সহায়তা করে।

যেসব কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৫০ বা তার অধিক শ্রমিক কাজ করে তার প্রত্যেকটিতে এ কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক। তবে, যেসব প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে এর থেকে কম শ্রমিক কাজ করে সেসব প্রতিষ্ঠানেও এ কমিটি গঠন করা যেতে পারে (ধারা- ৯০ক, বাংলাদেশ শ্রম আইন; বিধি- ৮১ ও ৮৪, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা)।

এ লেখা থেকে আপনি জানতে পারবেন:

সেইফটি কমিটি কেন দরকার?

১. কিভাবে এটা গঠন করতে হবে?

২. এ কমিটি কি কি কাজ করবে?

৩. মালিক / ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কমিটিকে কিভাবে সহায়তা দেবে?

৪. কমিটির গঠনকাঠামো কেমন হবে (সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সদস্য-সচিব ও অনান্য সদস্যদের দায়িত্ব বা কাজসমূহ)?



১. সেইফটি কমিটি কেন দরকার?

অনেক কারখানায় হয়তো ইতোমধ্যে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি কর্মকর্তা/সেইফটি অফিসার আছে এবং একটু বিষ্মিতও হচ্ছেন যে এটা থাকা সত্তে¡ও আইনে আবার সেইফটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে কেন:
 
সেইফটি কমিটির কাজ হচ্ছে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি কর্মকর্তা/সেইফটি অফিসার এবং উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন ধরনের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়নে সহায়তা করা, যেমন- নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান তাছাড়া এ কমিটি তাদেরকে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়েও পরামর্শ প্রদান করবে। 

দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এক্ষেত্রে দলীয় সদস্যদের মাঠ পর্যায়ের ব্যাপক অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয় এবং যেসব শ্রমিক প্রতিদিন মেশিনে কাজ করে তারাই সবচেয়ে ভাল জানে যে এক্ষেত্রে কি কি ঝুঁকি রয়েছে এবং তারাই এসব বিপজ্জনক অবস্থা এবং উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল বলতে পারবে।

সেইফটি কমিটির সফলতা নির্ভর করে মূলত শ্রমিকদের সহযোগিতা এবং সেইফটি নির্দেশনা মেনে চলতে তাদের সম্পৃক্ততার ওপর তাছাড়া পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি পদ্ধতির খসড়া প্রস্তুত ও তা বাস্তবায়নে শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিলেই প্রতিষ্ঠানের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি ব্যবস্থা সম্পর্কে যথাযথভাবে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত সভা আয়োজন করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রের স্বাস্থ্য ও সেইফটি ব্যবস্থা যেমন- দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, অনুপস্থিতি কমিয়ে আনা, দুর্ঘটনার আইনগত ও আর্থিক ক্ষতি প্রতিরোধ করা এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয় এরূপ অবস্থা এড়িয়ে চলা ইত্যাদি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো কার্যক্রমের একটি হচ্ছে সেইফটি কমিটি গঠন করা ।

২. কিভাবে সেইফটি কমিটি গঠন করতে হবে?
How to form a safety committee? (Safety Committee Formation)

কাদের নিয়ে কমিটি গঠিত হবে? কমিটির আকার কি হবে?

কমিটির মোট সদস্য সংখ্যার ৫০ ভাগ অর্থাৎ অর্ধেক হবে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি এবং অন্য ৫০ ভাগ হবে মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি। মোট কথা উভয়পক্ষের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি থাকবে। বিধি- ৮১(২): বিএলআর

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার ৮১ (২)-এ বলা হয়েছে যে সেইফটি কমিটিতে মোট সদস্য সংখ্যা ৬ এর কম এবং ১২ এর বেশি হবেনা এবং উহাতে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সমসংখ্যক প্রতিনিধি থাকবে। 

শ্রমিকের সংখ্যা অনুযায়ী সেইফটি কমিটির সদস্য সংখার আনুপাতিক হার হবে নি¤œরূপ:

মোট শ্রমিকের সংখ্যা - কমিটির সদস্য সংখ্যা

৫০০ জনরে কম - ৬ জন

৫০১ থকেে ১০০০ - ৮ জন

১০০১ থকেে ৩০০০ - ১০ জন

৩০০১ থেকে এর অধকি - ১২ জন

প্রতিষ্ঠান পুঞ্জের মালিকগণ এলাকাভিত্তিক বা উপজেলাভিত্তিক সেইফটি কমিটি গঠন করবে।

কিভাবে সেইফটি কমিটি গঠন করতে হবে? (বিধি- ৮১(৮-১৩), বিএলআর)
How to form a safety committee?

শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি:

যেক্ষেত্রে কোন কারখানায় মাত্র একটি ইউনিয়ন আছে সেক্ষেত্রে তা যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং উক্ত ইউনিয়ন সেইফটি কমিটিতে তাদের পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করবে।
যেক্ষেত্রে কোন কারখানায় এক এর অধিক ইউনিয়ন আছে, সেক্ষেত্রে যে ইউনিয়ন যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি বা সিবিএ নির্বাচিত হয়েছে তারা কমিটিতে তাদের পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করবে।

ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির উচিত প্রতিষ্ঠানের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সেইফটি কমিটিতে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা। শ্রম বিধি অনুযায়ী এসব সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ/ফ্লোর/শাখা/গোডাউন/ইউনিট থেকে মনোনীত হতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে ।

যেক্ষেত্রে কোন কারখানায় কোন ইউনিয়ন নেই , সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী কমিটির শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিভাগ/ফ্লোর/ শাখা/গোডাউন/ইউনিট থেকে সেইফটি কমিটিতে তাদের পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করবে। এরূপ ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে যারা পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটির  প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাদের কারখানায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যারা পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও যাদের যোগাযোগ দক্ষতা ভাল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই যাঁচাই-বাছাই করতে হবে এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, যেসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের এক তৃতীয়াংশ নারী সসেব প্রতষ্ঠিানে সইেফটি কমটিতিে শ্রমকি পক্ষরে মনোনীত প্রতনিধিদিরে মধ্যে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ নারী রয়েছে (বিধি- ৮১(১৩), বিএলআর)।

মালিক পক্ষের প্রতিনিধি:

মালিক সেইফটি কমিটিতে তার পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত  করবে। কারখানার পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি অফিসারকে এ কমিটির সদস্য মনোনীত করা প্রয়োজন। সাধারনত অন্যান্য যেসব কর্মকর্তা এ কমিটিতে মনোনীত হতে পারেন তারা হলেন: ম্যানেজার, কল্যান কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, সুপারভাইজার, ফিজিসিয়ান ও নার্স। সেইফটি কমিটির কাজের গুণগতমান   নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ কমিটিতে এমন একজন সিনিয়র ম্যানেজারকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা উচিত যার সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। এক্ষেত্রে জেন্ডারের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।  শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত হবার ৭ দিনের মধ্যে মালিক/ ব্যবস্থাপনা পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করতে হবে।

সেইফটি কমিটি কত দিনের মধ্যে গঠন করতে হবে ?
Safety committee should be formed in how many days?

উভয় পক্ষ তাদের প্রতিনিধি মনোনীত করার ১৫ দিনের মধ্যে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে।

• ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে যেসব প্রতিষ্ঠান চালু ছিল তাদের ক্ষেত্রে ১৫ মার্চ ২০১৬।

• ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরের পরে যেসব প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে বা হবে তাদের ক্ষেত্রে উৎপাদন শুরুর ৯ মাসের মধ্যে।

কমিটি সম্পর্কে শ্রমিক-কর্মচারী ও মহাপরিদর্শককে জানাতে হবে।

• সেইফটি কমিটির ভূমিকা এবং এ কমিটির সদস্যদের বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারীগণকে মালিক কর্তৃক জানাতে হবে। তাছাড়া সেইফটি কমিটি সম্পর্কিত ১ পৃষ্ঠার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ বিভিন্ন জায়গায় বা দেয়ালে সেটে দেওয়া যেতে পারে। প্রতিক্ষেত্রে কমিটির সদস্যদের তালিকা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। 

• কমটিরি প্রথম সভা অনুষ্ঠতি হবার ১০ দিনের মধ্যে সভাপতি কমিটির সদস্যদের তালিকা মহাপরিদর্শক বরাবরে প্রেরণ করবে (বিধি- ৮১(১২), বিএলআর)। 

কমিটির মেয়াদ কি হবে ? যদি কোন প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন বা অংশগ্রহণকারী কমিটি গঠিত নাহয় তাহলে কি হবে?

সেইফটি কমিটির মেয়াদ কাল হবে ২ বছর, যার গণনা শুরু হবে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবার দিন থেকে (বিধি-৮৩, বিএলআর)। 



৩. সেইফটি কমিটির কার্যক্রম এবং উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সহায়তাঃ
Safety Committee Function/activities and support from senior management authorities

সেইফটি কমিটির কার্যক্রম কি হবে?
Safety Committee Functions

লাইন ম্যানেজমেন্ট, মালিক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকলেরই দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সেইফটি কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে ম্যানেজমেন্টকে পরামর্শ প্রদান, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইন, বিধি বাস্তবায়নে ম্যানেজমেন্টকে সহায়তা করা, প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি আইন ও বিধি-বিধান বাস্তবায়নে শ্রমিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা (বিধি-৮৫ ও তফসিল-৪,বিএলআর)।

কমিটির সদস্যদের প্রধান প্রধান কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে:

প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এ অংশগ্রহণ করা (তফসিল-৪ (২ক), বিএলআর);

অগ্নি নির্বাপন দল, জরুরী উদ্ধারকারী দল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দল গঠন ও প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা করা;

কারাখানার নিরাপত্তা সম্পর্কিত ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করতে চেকলিস্ট তৈরি করা;

চেকলিস্ট এর মাধ্যমে নিয়মিত ঝুঁকি নিরূপণ করা এবং ঝুঁকি মোকাবেলা করার উপায় বের করা।

মাসিক ভিত্তিতে কারখানার নিরাপত্তা সম্পর্কিত সকল বিষয়াদি পরীক্ষা করা এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বলে দেয়া;

যদি কোন ঝুঁকি চিহ্নিত হয়ে থাকে তাহলে সাথে সাথে মালিককে জানানো (তফসিল-৪. ১১(খ), বিএলআর)
শ্রমিকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত সমস্যাসমূহ জানা এবং সে সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান ও সমাধানে সহায়তা করা;

শ্রমিকের জীবনের প্রতি মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে এরূপ কোন বিষয় চিহ্নিত হলে প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মালিক/ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা এবং শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। (তফসিল-৪ (২) (খ) (১) (ঘ), বি এল আর);

প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রচারের উদ্যেগ ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা;

দুর্ঘটনা সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করা; 

পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করা;

অগ্নি সেইফটি এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি সম্পর্কিত আইন, বিধিমালা, বিল্ডিং কোড ও সার্কুলার এর সর্বশেষ অনুলিপি সংরক্ষণ করা;

কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে শ্রমিক ও মালিক/ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবগত করা (যার মধ্যে রয়েছেশ্রমিকরা যেসব সমস্যা উত্থাপন করেছে তার সমাধান সম্পর্কে /সমাধানে বিলম্ব হলে বিলম্বের কারণ সম্পর্কে জানাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিতযোগাযোগ রক্ষা করা, বিশেষ করে সেইফটি কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশ মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিকট পৌছানোর ৭ দিনের মধ্যে যদি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে সে বিষয়ে শ্রমপরিদর্শককে জানানো। (ধারা-৩১৫, বিএলএ; তফসিল-৪ (১) (ঙ) ও ৪ (১১) (ক) ও (গ), বিএলআর)
সেইফটি কমিটিকে তাদের নিজস্ব গাইডলাইন প্রস্তুত করতে হবে (তফসিল-৪ (২) (ক)।



৪. কতদিন পর পর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে?

সেইফটি কমিটির সভা প্রতি ৩ মাসে কমপক্ষে একবার অনুষ্ঠিত হবে [তফসিল-৪(৩), বিএলআর]
প্রয়োজনে যেকোন সময়ে সভা আহবান করা যাবে। [তফসিল-৪(৩), বিএলআর]
যদি কোন কারনে ৩ মাসের ব্যবধানে সভা অনুষ্ঠিত না হয় সেক্ষেত্রে যে কোন পক্ষ শ্রমপরিদর্শকের সহায়তা চাইতে পারবে।

মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সহায়তা
বাস্তবে যদি এমন হয় যে সেইফটি কমিটি কোন সভা আয়োজন করে না, কমিটির সদস্যরা নিয়মিত সভায় উপস্থিত থাকে না বা সভায় উপস্থিত থাকার জন্য কমিটির সদস্যদের সেভাবে অনুপ্রেরণা প্রদান করা হয় না, তাহলে- 

সভায় উপস্থিত থাকার জন্য কমিটির সদস্যদের অবশ্যই যথেষ্ট সময় দিতে হবে (সভার বিষয়ে অগ্রীম ঘোষণা প্রদান করতে হবে ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে); সাধারনত উভয় পক্ষের অর্ধেক সংখ্যক সদস্য উপস্থিত থাকলেই কোরাম পূর্ণ হবে।
সদস্যগণকে সভার আগে নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের করণীয় নির্ধারণ ও সভার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সময় দিতে হবে।

কমিটির করণীয় নির্ধারণ করার জন্য সদস্যরা যে সময় ব্যয় করে তা তাদের কর্ম-সময় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং এর জন্য তাদের কোন আর্থিক ক্ষতি বা মজুরি কর্তন করা যাবে না (যারা পিচ-রেট এ কাজ করে তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)

কমিটির সুপারিশ নিয়ে মালিক বা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার জন্য তাদের সাথে সভাপতি ও সহসভাপতির নিয়মিত যোগাযোগ ও সহজ প্রবেশাধিকার থাকবে।

কমিটি প্রয়োজনে প্রশাসনিক সহায়তা নিতে পারবে (উদাহরণ সিসেবে বলা যায়- কোন ডকুমেন্ট ছাপানোর জন্য)।

কাজ চলাকালীন সময়ে বা কর্ম- ঘন্টার বাইরে কারখানার প্রতিটি কর্ম-এলাকায় কমিটির সদস্যদের প্রবেশাধিকার থাকবে।

কাজের মূল্যায়ন/পদোন্নতির ক্ষেত্রে সেইফটি কমিটিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা মারাত্মক ও আশু বিপদের সম্ভাবনা ইত্যাদির কারণে শ্রমিক পক্ষের কোন সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ বা দোষী করা যাবে না। যেমন শ্রমপরিদর্শককে কোন কিছু জানানো অথবা মারাত্মক কোন ঝুঁকি চিহ্নিত হলে কাজ থেকে বিরত থাকা। [তফসিল-৪ (১১) ও ৪ (১২), বিএলআর]।

৫. সেইফটি কমিটির সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণ

যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া সেইফটি কমিটির সদস্যরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার মত সক্ষমতা অর্জন করবে না। কমিটির প্রত্যক সদস্যকে সেইফটি কমিটির কার্যক্রম ও পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া ঝুঁকি নিরুপণ, দুর্ঘটনার তথ্যানুসন্ধান, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়সমূহ উত্থাপন ও সমাধান ইত্যাদি বিষয়েও তাদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

উল্লেখিত বিষয়ে যদি সেইফটি অফিসারের যথেষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা থাকে তাহলে এসব প্রশিক্ষণ অভ্যন্তরীণভাবে আয়োজন করা যায়। এছাড়াও বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এই প্রকাশনা সিরিজের অন্যান্য পুস্তিকা থেকেও এ বিষয়ে জানতে পারবেন। সেইফটি অফিসারকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সেইফটি কমিটির সকল সদস্য আইনের সর্বশেষ পরিবর্তন সম্পর্কে এবং প্রতিষ্ঠানের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিবি-বিধানে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সে সম্পর্কে জানে। এসব প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আয়োজনের ব্যবস্থা মালিককেই করতে হবে: যেমন- কর্ম-ঘন্টার মধ্য থেকে প্রশিক্ষণের সময় দেয়া, উপযুক্ত কক্ষের ব্যবস্থা করা এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত সকল ব্যয় বহন করা [তফসিল-৪(১১) ও ৪(১৩), বিএলআর]।

গার্মেন্টস কারখানার সেফটি কমিটি - ‍Safety Committee

সেফটি কমিটি - ‍Safety Committee
সেইফটি কমিটি কি?

What is the Safety Committee?

সেইফটি কমিটি বলতে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল বা টিমকে বুঝায় যা নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরি ও তা রক্ষা করতে মালিক বা নিয়োগ কর্তাকে সহায়তা করে।

যেসব কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৫০ বা তার অধিক শ্রমিক কাজ করে তার প্রত্যেকটিতে এ কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক। তবে, যেসব প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে এর থেকে কম শ্রমিক কাজ করে সেসব প্রতিষ্ঠানেও এ কমিটি গঠন করা যেতে পারে (ধারা- ৯০ক, বাংলাদেশ শ্রম আইন; বিধি- ৮১ ও ৮৪, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা)।

এ লেখা থেকে আপনি জানতে পারবেন:

সেইফটি কমিটি কেন দরকার?

১. কিভাবে এটা গঠন করতে হবে?

২. এ কমিটি কি কি কাজ করবে?

৩. মালিক / ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কমিটিকে কিভাবে সহায়তা দেবে?

৪. কমিটির গঠনকাঠামো কেমন হবে (সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সদস্য-সচিব ও অনান্য সদস্যদের দায়িত্ব বা কাজসমূহ)?



১. সেইফটি কমিটি কেন দরকার?

অনেক কারখানায় হয়তো ইতোমধ্যে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি কর্মকর্তা/সেইফটি অফিসার আছে এবং একটু বিষ্মিতও হচ্ছেন যে এটা থাকা সত্তে¡ও আইনে আবার সেইফটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে কেন:
 
সেইফটি কমিটির কাজ হচ্ছে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি কর্মকর্তা/সেইফটি অফিসার এবং উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন ধরনের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়নে সহায়তা করা, যেমন- নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান তাছাড়া এ কমিটি তাদেরকে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়েও পরামর্শ প্রদান করবে। 

দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এক্ষেত্রে দলীয় সদস্যদের মাঠ পর্যায়ের ব্যাপক অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয় এবং যেসব শ্রমিক প্রতিদিন মেশিনে কাজ করে তারাই সবচেয়ে ভাল জানে যে এক্ষেত্রে কি কি ঝুঁকি রয়েছে এবং তারাই এসব বিপজ্জনক অবস্থা এবং উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল বলতে পারবে।

সেইফটি কমিটির সফলতা নির্ভর করে মূলত শ্রমিকদের সহযোগিতা এবং সেইফটি নির্দেশনা মেনে চলতে তাদের সম্পৃক্ততার ওপর তাছাড়া পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি পদ্ধতির খসড়া প্রস্তুত ও তা বাস্তবায়নে শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিলেই প্রতিষ্ঠানের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি ব্যবস্থা সম্পর্কে যথাযথভাবে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত সভা আয়োজন করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রের স্বাস্থ্য ও সেইফটি ব্যবস্থা যেমন- দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, অনুপস্থিতি কমিয়ে আনা, দুর্ঘটনার আইনগত ও আর্থিক ক্ষতি প্রতিরোধ করা এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয় এরূপ অবস্থা এড়িয়ে চলা ইত্যাদি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো কার্যক্রমের একটি হচ্ছে সেইফটি কমিটি গঠন করা ।

২. কিভাবে সেইফটি কমিটি গঠন করতে হবে?
How to form a safety committee? (Safety Committee Formation)

কাদের নিয়ে কমিটি গঠিত হবে? কমিটির আকার কি হবে?

কমিটির মোট সদস্য সংখ্যার ৫০ ভাগ অর্থাৎ অর্ধেক হবে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি এবং অন্য ৫০ ভাগ হবে মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি। মোট কথা উভয়পক্ষের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি থাকবে। বিধি- ৮১(২): বিএলআর

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার ৮১ (২)-এ বলা হয়েছে যে সেইফটি কমিটিতে মোট সদস্য সংখ্যা ৬ এর কম এবং ১২ এর বেশি হবেনা এবং উহাতে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সমসংখ্যক প্রতিনিধি থাকবে। 

শ্রমিকের সংখ্যা অনুযায়ী সেইফটি কমিটির সদস্য সংখার আনুপাতিক হার হবে নি¤œরূপ:

মোট শ্রমিকের সংখ্যা - কমিটির সদস্য সংখ্যা

৫০০ জনরে কম - ৬ জন

৫০১ থকেে ১০০০ - ৮ জন

১০০১ থকেে ৩০০০ - ১০ জন

৩০০১ থেকে এর অধকি - ১২ জন

প্রতিষ্ঠান পুঞ্জের মালিকগণ এলাকাভিত্তিক বা উপজেলাভিত্তিক সেইফটি কমিটি গঠন করবে।

কিভাবে সেইফটি কমিটি গঠন করতে হবে? (বিধি- ৮১(৮-১৩), বিএলআর)
How to form a safety committee?

শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি:

যেক্ষেত্রে কোন কারখানায় মাত্র একটি ইউনিয়ন আছে সেক্ষেত্রে তা যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং উক্ত ইউনিয়ন সেইফটি কমিটিতে তাদের পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করবে।
যেক্ষেত্রে কোন কারখানায় এক এর অধিক ইউনিয়ন আছে, সেক্ষেত্রে যে ইউনিয়ন যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি বা সিবিএ নির্বাচিত হয়েছে তারা কমিটিতে তাদের পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করবে।

ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির উচিত প্রতিষ্ঠানের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সেইফটি কমিটিতে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা। শ্রম বিধি অনুযায়ী এসব সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ/ফ্লোর/শাখা/গোডাউন/ইউনিট থেকে মনোনীত হতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে ।

যেক্ষেত্রে কোন কারখানায় কোন ইউনিয়ন নেই , সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী কমিটির শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিভাগ/ফ্লোর/ শাখা/গোডাউন/ইউনিট থেকে সেইফটি কমিটিতে তাদের পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করবে। এরূপ ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে যারা পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটির  প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাদের কারখানায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যারা পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও যাদের যোগাযোগ দক্ষতা ভাল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই যাঁচাই-বাছাই করতে হবে এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, যেসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের এক তৃতীয়াংশ নারী সসেব প্রতষ্ঠিানে সইেফটি কমটিতিে শ্রমকি পক্ষরে মনোনীত প্রতনিধিদিরে মধ্যে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ নারী রয়েছে (বিধি- ৮১(১৩), বিএলআর)।

মালিক পক্ষের প্রতিনিধি:

মালিক সেইফটি কমিটিতে তার পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত  করবে। কারখানার পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি অফিসারকে এ কমিটির সদস্য মনোনীত করা প্রয়োজন। সাধারনত অন্যান্য যেসব কর্মকর্তা এ কমিটিতে মনোনীত হতে পারেন তারা হলেন: ম্যানেজার, কল্যান কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, সুপারভাইজার, ফিজিসিয়ান ও নার্স। সেইফটি কমিটির কাজের গুণগতমান   নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ কমিটিতে এমন একজন সিনিয়র ম্যানেজারকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা উচিত যার সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। এক্ষেত্রে জেন্ডারের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।  শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত হবার ৭ দিনের মধ্যে মালিক/ ব্যবস্থাপনা পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করতে হবে।

সেইফটি কমিটি কত দিনের মধ্যে গঠন করতে হবে ?
Safety committee should be formed in how many days?

উভয় পক্ষ তাদের প্রতিনিধি মনোনীত করার ১৫ দিনের মধ্যে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে।

• ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে যেসব প্রতিষ্ঠান চালু ছিল তাদের ক্ষেত্রে ১৫ মার্চ ২০১৬।

• ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরের পরে যেসব প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে বা হবে তাদের ক্ষেত্রে উৎপাদন শুরুর ৯ মাসের মধ্যে।

কমিটি সম্পর্কে শ্রমিক-কর্মচারী ও মহাপরিদর্শককে জানাতে হবে।

• সেইফটি কমিটির ভূমিকা এবং এ কমিটির সদস্যদের বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারীগণকে মালিক কর্তৃক জানাতে হবে। তাছাড়া সেইফটি কমিটি সম্পর্কিত ১ পৃষ্ঠার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ বিভিন্ন জায়গায় বা দেয়ালে সেটে দেওয়া যেতে পারে। প্রতিক্ষেত্রে কমিটির সদস্যদের তালিকা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। 

• কমটিরি প্রথম সভা অনুষ্ঠতি হবার ১০ দিনের মধ্যে সভাপতি কমিটির সদস্যদের তালিকা মহাপরিদর্শক বরাবরে প্রেরণ করবে (বিধি- ৮১(১২), বিএলআর)। 

কমিটির মেয়াদ কি হবে ? যদি কোন প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন বা অংশগ্রহণকারী কমিটি গঠিত নাহয় তাহলে কি হবে?

সেইফটি কমিটির মেয়াদ কাল হবে ২ বছর, যার গণনা শুরু হবে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবার দিন থেকে (বিধি-৮৩, বিএলআর)। 



৩. সেইফটি কমিটির কার্যক্রম এবং উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সহায়তাঃ
Safety Committee Function/activities and support from senior management authorities

সেইফটি কমিটির কার্যক্রম কি হবে?
Safety Committee Functions

লাইন ম্যানেজমেন্ট, মালিক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকলেরই দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সেইফটি কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে ম্যানেজমেন্টকে পরামর্শ প্রদান, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইন, বিধি বাস্তবায়নে ম্যানেজমেন্টকে সহায়তা করা, প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি আইন ও বিধি-বিধান বাস্তবায়নে শ্রমিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা (বিধি-৮৫ ও তফসিল-৪,বিএলআর)।

কমিটির সদস্যদের প্রধান প্রধান কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে:

প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এ অংশগ্রহণ করা (তফসিল-৪ (২ক), বিএলআর);

অগ্নি নির্বাপন দল, জরুরী উদ্ধারকারী দল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দল গঠন ও প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা করা;

কারাখানার নিরাপত্তা সম্পর্কিত ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করতে চেকলিস্ট তৈরি করা;

চেকলিস্ট এর মাধ্যমে নিয়মিত ঝুঁকি নিরূপণ করা এবং ঝুঁকি মোকাবেলা করার উপায় বের করা।

মাসিক ভিত্তিতে কারখানার নিরাপত্তা সম্পর্কিত সকল বিষয়াদি পরীক্ষা করা এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বলে দেয়া;

যদি কোন ঝুঁকি চিহ্নিত হয়ে থাকে তাহলে সাথে সাথে মালিককে জানানো (তফসিল-৪. ১১(খ), বিএলআর)
শ্রমিকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত সমস্যাসমূহ জানা এবং সে সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান ও সমাধানে সহায়তা করা;

শ্রমিকের জীবনের প্রতি মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে এরূপ কোন বিষয় চিহ্নিত হলে প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মালিক/ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা এবং শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। (তফসিল-৪ (২) (খ) (১) (ঘ), বি এল আর);

প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রচারের উদ্যেগ ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা;

দুর্ঘটনা সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করা; 

পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করা;

অগ্নি সেইফটি এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি সম্পর্কিত আইন, বিধিমালা, বিল্ডিং কোড ও সার্কুলার এর সর্বশেষ অনুলিপি সংরক্ষণ করা;

কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে শ্রমিক ও মালিক/ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবগত করা (যার মধ্যে রয়েছেশ্রমিকরা যেসব সমস্যা উত্থাপন করেছে তার সমাধান সম্পর্কে /সমাধানে বিলম্ব হলে বিলম্বের কারণ সম্পর্কে জানাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিতযোগাযোগ রক্ষা করা, বিশেষ করে সেইফটি কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশ মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিকট পৌছানোর ৭ দিনের মধ্যে যদি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে সে বিষয়ে শ্রমপরিদর্শককে জানানো। (ধারা-৩১৫, বিএলএ; তফসিল-৪ (১) (ঙ) ও ৪ (১১) (ক) ও (গ), বিএলআর)
সেইফটি কমিটিকে তাদের নিজস্ব গাইডলাইন প্রস্তুত করতে হবে (তফসিল-৪ (২) (ক)।



৪. কতদিন পর পর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে?

সেইফটি কমিটির সভা প্রতি ৩ মাসে কমপক্ষে একবার অনুষ্ঠিত হবে [তফসিল-৪(৩), বিএলআর]
প্রয়োজনে যেকোন সময়ে সভা আহবান করা যাবে। [তফসিল-৪(৩), বিএলআর]
যদি কোন কারনে ৩ মাসের ব্যবধানে সভা অনুষ্ঠিত না হয় সেক্ষেত্রে যে কোন পক্ষ শ্রমপরিদর্শকের সহায়তা চাইতে পারবে।

মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সহায়তা
বাস্তবে যদি এমন হয় যে সেইফটি কমিটি কোন সভা আয়োজন করে না, কমিটির সদস্যরা নিয়মিত সভায় উপস্থিত থাকে না বা সভায় উপস্থিত থাকার জন্য কমিটির সদস্যদের সেভাবে অনুপ্রেরণা প্রদান করা হয় না, তাহলে- 

সভায় উপস্থিত থাকার জন্য কমিটির সদস্যদের অবশ্যই যথেষ্ট সময় দিতে হবে (সভার বিষয়ে অগ্রীম ঘোষণা প্রদান করতে হবে ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে); সাধারনত উভয় পক্ষের অর্ধেক সংখ্যক সদস্য উপস্থিত থাকলেই কোরাম পূর্ণ হবে।
সদস্যগণকে সভার আগে নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের করণীয় নির্ধারণ ও সভার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সময় দিতে হবে।

কমিটির করণীয় নির্ধারণ করার জন্য সদস্যরা যে সময় ব্যয় করে তা তাদের কর্ম-সময় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং এর জন্য তাদের কোন আর্থিক ক্ষতি বা মজুরি কর্তন করা যাবে না (যারা পিচ-রেট এ কাজ করে তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)

কমিটির সুপারিশ নিয়ে মালিক বা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার জন্য তাদের সাথে সভাপতি ও সহসভাপতির নিয়মিত যোগাযোগ ও সহজ প্রবেশাধিকার থাকবে।

কমিটি প্রয়োজনে প্রশাসনিক সহায়তা নিতে পারবে (উদাহরণ সিসেবে বলা যায়- কোন ডকুমেন্ট ছাপানোর জন্য)।

কাজ চলাকালীন সময়ে বা কর্ম- ঘন্টার বাইরে কারখানার প্রতিটি কর্ম-এলাকায় কমিটির সদস্যদের প্রবেশাধিকার থাকবে।

কাজের মূল্যায়ন/পদোন্নতির ক্ষেত্রে সেইফটি কমিটিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা মারাত্মক ও আশু বিপদের সম্ভাবনা ইত্যাদির কারণে শ্রমিক পক্ষের কোন সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ বা দোষী করা যাবে না। যেমন শ্রমপরিদর্শককে কোন কিছু জানানো অথবা মারাত্মক কোন ঝুঁকি চিহ্নিত হলে কাজ থেকে বিরত থাকা। [তফসিল-৪ (১১) ও ৪ (১২), বিএলআর]।

৫. সেইফটি কমিটির সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণ

যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া সেইফটি কমিটির সদস্যরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার মত সক্ষমতা অর্জন করবে না। কমিটির প্রত্যক সদস্যকে সেইফটি কমিটির কার্যক্রম ও পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া ঝুঁকি নিরুপণ, দুর্ঘটনার তথ্যানুসন্ধান, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়সমূহ উত্থাপন ও সমাধান ইত্যাদি বিষয়েও তাদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

উল্লেখিত বিষয়ে যদি সেইফটি অফিসারের যথেষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা থাকে তাহলে এসব প্রশিক্ষণ অভ্যন্তরীণভাবে আয়োজন করা যায়। এছাড়াও বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এই প্রকাশনা সিরিজের অন্যান্য পুস্তিকা থেকেও এ বিষয়ে জানতে পারবেন। সেইফটি অফিসারকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সেইফটি কমিটির সকল সদস্য আইনের সর্বশেষ পরিবর্তন সম্পর্কে এবং প্রতিষ্ঠানের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিবি-বিধানে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সে সম্পর্কে জানে। এসব প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আয়োজনের ব্যবস্থা মালিককেই করতে হবে: যেমন- কর্ম-ঘন্টার মধ্য থেকে প্রশিক্ষণের সময় দেয়া, উপযুক্ত কক্ষের ব্যবস্থা করা এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত সকল ব্যয় বহন করা [তফসিল-৪(১১) ও ৪(১৩), বিএলআর]।

কোন মন্তব্য নেই: