প্রিয় শাহআলম,
গত কাল তুৃমি এসএমএস করে পরিচয় দিলা তুমি শাহঅালম,সান্জি টেক্সটাইলের প্রোডাকশন সুপারভাইজার । জানতে চাইলা অামরা কেমন অাছি।অামি কোন উত্তর দিতে পারিনাই। সারাদিন তোমাকে সহ সফিউল,স্টোরের অালিম,ড্রাইভার দুলাল,ড্রাইভার পলাশ, সহ অারো যারা অামার সাথে ১৯৯২-৯৩ সালে সাভারের কর্ণপাড়ায় ছোট পরিসরে ইস্কান্দার ইন্জিনিয়ারিং এর বানানো সেলাই সুতার মেশিন দিয়ে স্থাপিত অামার প্রথম কারখানা ' ওয়েল থ্রেড লিঃ এ কাজ করতে।অামার এখনো মনে অাছে তোমার পাশের মেশিনটা অামিও চালাতাম।অামি তোমাদের কাউকে ভূলিনি।১৯৯৬-৯৭ সালে ওয়েল থ্রেডের মেশিনপত্র পাঠিয়ে দিলাম অামার শহর চট্টগ্রামে।নতুন করে শুরু করলাম সান্জি টেক্সটাইল মিলস লিঃ নামে।' ওয়েল থ্রেড' রয়ে গেল ব্র্যান্ড হিসাবে। তুৃমি, সফিউল ও অালীম সহ অারো ক'জন চলে অাসলা চট্টগ্রামে অামার মায়ায়।তোমরা এখনো অাছ!! অামি থেকে গেলাম ঢাকায় তোমাদের বানানো সূতা বিক্রির কাজে।
ড্রাইভার দূলাল এখনো অাছে।অামার গাড়ি চালায়।ড্রাইভার পলাশও অাছে।
অাছে।কোমরের ব্যাথা নিয়ে গাড়ি চালাতে পারেনা বলে ঢাকা অফিসে বসে থাকে।ডেলিভারী শাখার নতুন ২০-২৫ ড্রাইভারের সাথে পুরামো সোবহান ও রাজ্জাকও অাছে।ক'দিন অাগে ড্রাইভার সোবহানের সাথে দেখা ঢাকা অফিসে। কেমন বুড়া হয়ে গেছে।কাছে ডেকে জানতে চাইলাম,কি সোবহান বুড়া হয়ে গেলে যে! বায়স কত? বলল, এই সত্তুরের কাছাকাছি। হাসতে হাসতে বললাম, তোমার সত্তুর হলে অামার কি ৮০?জানতে চাইলাম, এখনো কি গাড়ি চালাও? বলল, হ স্যার।তবে দুরের ডিউটি করিনা।হাত কাপে।চোখেও দেখিনা।কিছু না বলে লজিস্টিক ম্যানেজার কে বললাম,ড্রাইভার সোবহান অার গাড়ি চালাবেনা।ড্রাইভার পলাশের মত অফিস থাকবে। অামার কেনা প্রথম গাড়ি চট্টমেট্রো ম-৩৭, যেটা চালিয়ে ড্রাইভার দুলাল সারাদিন সুতা ডেলিভারি দিয়ে বিকেল অামাকে দিয়ে যেত। সন্ধ্যায় অামি তোমার ভাবিকে নিয়ে ঐ গাড়ি চালিয়ে সংসদ ভবনের পেছন ক্রিসেন্ট লেকে ফুসকা খেতে যেতাম, এখনো অাছে।ডেলিভারি অফিসার
হেলাল এখনো ঢাকা অফিসে অাছে।কথা একটু বেশী বলে, তাই সবাই পাগলা হেলাল বলে ডাকে।অামি কিছু বলিনা।কথা অামিও বেশী বলি।কিন্তু অামি পাগল না।কারণ অামিতো সিইও!! হেলাল পাগল।কারণ সে....
HR Manager ক'দিন অাগে এসে বলল,স্যার,হেলাল সাহেবের কোন অাউটপুট নেই। কাজ কর্ম করেনা। বিদায় করে দিলে ভাল হয়।অামি হেসে বললাম,না থাক।যেটুকু পারুক করুক।অার মনে মনে বললাম,হেলালের চাকুরী অামি বেঁচে থাকতে কোনদিন যাবেনা।১৯৯২-৯৩ তে যেই হলাল অামার সাথে রিক্সা ভ্যানে করে মালিবাগ, মিরপুরের গার্মেন্টস কারাখানায় সুতার ডেলিবারি দিয়ে ওয়েল থ্রেডকে অাজ দেশের বিখ্যাত ব্র্যান্ড বানিয়েছে সেই হেলালের চাকুরী যাবে? বল কি ম্যানেজার?শামীমও এখনো অাছে।মতিনকে ছেড়ে দিতে হল।তার ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল।নিজে দাড়িয়ে থেকে ব্রেইন ওপারেশন করালাম।সুস্থ হয়ে ফিরে অাসল।কিন্তু পরে কাজের লোড নিতে পারছিলনা।নিজে কিছু করবে বলে চাকুরী ছেড়ে দিল।মোয়াজ্জেম এখনো একাউন্টস দেখে।মন্জুর সাহেবও অাছেন এখনো। কারখানাগুলোতে কাজ করা হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীদের মাঝে তুৃমি,অালিম, শফিউল সহ অন্যরা যেমন অামার স্মৃতিতে এখনো অম্লান তেমনি ঢাকা অফিসে শত শত কর্মকর্তার মাঝে অামি এখনো এদের খোঁজি।
শাহআলম,
তুৃমি জানতে চেয়েছ অামি কেমন অাছি?অাছি, অনেক ভাল অাছি।পল্টনের ৬০০০ টাকার ভাড়া বাসা থেকে ধানমন্ডির এপার্টমেন্টে উঠেছিলাম ১৯৯৬ এ।এখনো ঐ বাসায় অাছি।মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে থাকে।ছেলে বিদেশে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।ব্যবসাটা তোমাদের হাতের উপর অনেক বড় হয়ে গেছে।তোমাদের সেই দেশীয় লক্কর ঝক্কর মেশিন গুলোর যায়গায় বসেছে সুইজারল্যান্ডের অত্যাধুনিক এসএসএম মেশিন।পুরানো ডাইনিং মেশিনগুলোর যায়গায় সব অাধুনিক ডাইনিং মেশিন।তোমরা মেশিনের যন্ত্রণায় এখন অার এদিক সেদিক ছুটাছুটি করনা।মেশিন চলে চোখের পলকে।তোমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখ। মান্নান সাহেবের কাঁচা সুতার জন্য এখন অার তোমাদের অপেক্ষা করতে হয়না।নিজেদের স্পিনিং মেশিনে সুতা তৈরী হয়ে চলে অাসে সরাসরি তোমাদের ডাইনিং ইউনিটে।সেখান থেকে তোমাদের মেশিনে।অাহারে,কোথায় ছিলাম। অার এখন কোথায়!! অাল্লহুঅাকবর।
সাভারের কর্নপাড়ার ছোট একচালা ঘর থেকে অাজ কত বড় দালানে তোমরা।পাশে স্পিনিং, টুইস্টিং,ডাইং,হাজার হাজার মেশিনের গার্মেন্টস কারখানা। প্রায় পুরা কালুরঘাট বিসিক জুড়েই তোমরা।
সেলাই সুতার কারাখানা দিয়ে শুরু ওয়েল গ্রুপ এখন কতবড় , মাশাল্লাহ। সুতা বানাও।কাপড় বানাও।সেই কাপড় কেটে গার্মেন্টস বানাও,সেই গার্মেন্টস ধুয়ে মুছে নিজেদের বানানো পলিব্যাগ ও কার্টন ভরে বিদেশে পাঠাও।রুটি বানাও,কেক বিস্কুট বানাও। অারও কত কি?প্রায় ২৫০০০ হাজার পরিবারের ঠিকানা তোমদের ওয়েল গ্রুপ।
অামি ভাল নাই কি ভাবে বলি?
চারিদিকে নাম ডাক।সরকার কতবার যে সিঅাইপি সনদ দিয়েছে তার হিসাব এখন অার রাখিনা।রিক্সা বাস ছেড়ে দামি গাড়িতে চড়ি।পল্টনের এক রুমের অফিস থেকে মহাখালীতে এসে বিশাল অফিসের এসি রুমে বসে কাজ করি।দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াই।
সবতো তোমাদের হাতে গড়া। অাজ এই দুঃসময়ে খবর নেওয়ার কথা অামার।খবর নিলা তুমি!!লজ্জায় গত তিনদিন ঘুমাতে পারিনি।ভাবছি অামার অামিত্ব অার অাভিজাত্য অামাকে কোথায় নিয়ে ঠেকেছে!!!
তোমার একটি এসএমএস অামার জীবনবোধ বদলে দিয়েছে। এবার যদি এই মহামারী থেকে বেঁচে যাই ফিরে যাব অাগের যায়গায়। তোমাদের হাতে গড়া ওয়েলগ্রুপের প্রধান নির্বাহী হিসাবে তোমাদের জন্য গত ২৮-৩০ বছরে কি করতে পেরেছি জানিনা।এবার যদি বেচে যাই ফিরে এসে তোমাদের হিসাবের খাতাটা নিয়ে বসব প্রথমে।অাকাশের দিকে তাকিয়ে অমার নিশ্বাসের মালিকের সাথে কথা বলব।অার নিচের দিকে তাকিয়ে তোমাদের খোঁজব।মাঝখানের পৃথিবীটা অার দেখবনা।
অনেক হয়েছে।অনেক দেখেছি। অার না।যদি এবার বেঁচে যাই নতুন সুর্য্য উঠা দেখব।নতুন হাওয়ায় শ্বাস নেব।নতুন করে শুরু করে তোমাদের সাথে নিয়ে নাফিরার দেশে যাব।
তোমরা সবাই ভাল থেকো।সাবধানে থেকো।সবাইকে নিয়ে বাসায় থেকো।কিছুক্ষন পর পর সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া টা এখন অনেক জরুরী। অকারনে যেওনা।প্রয়োজনে বাহিরে যেতে হলে মুখে মাস্ক দিও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন