"বস্ত্র প্রকৌশলী" না "দর্জি" - Textile Lab | Textile Learning Blog
শিক্ষাগত যোগ্যতা "বস্ত্র প্রকৌশলী" হওয়ার জন্য অনেকেই ঠাট্টা স্বরুপ "দর্জি" খেতাব দেন।



বিশ্বাস করেন এ নিয়ে কখনোই আমি বিরোধিতা করিনি। কারন , একজন বস্ত্র প্রকৌশলী অবশ্যই দর্জির কাজ জানেন। তবে পার্থক্য এই যে, তারা শুধুমাত্র দর্জির কাজ না; একটা Fiber এর জন্ম থেকে ঐ পোশাক তৈরি করা পর্যন্ত পুরো পদ্ধতির আদ্যোপান্ত, সীমাবদ্ধতা, সমাধান সম্পর্কে জ্ঞান বা ধারণা রাখেন।

তার কাছে একটা পোশাক শুধু কিছু টাকা দিয়ে কেনা একটা product না।

এই ক্ষেত্রে পড়াশোনার আগে পর্যন্ত আমি জানতাম না যে একটা পোশাক তৈরীর পিছনে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান নয়; বরং পুরো পৃথিবীর কৃতিত্ব আছে।
পুরো পৃথিবীর কথা বললাম; কারন আমরা যে সব Natural Fiber ব্যবহার করি, সেখানে বিশ্ব প্রকৃতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে। আবার যে Manmade fiber ব্যবহার করি তাও এই পৃথিবীর পরিবেশ এবং মানুষের অবদান। এই Fiber থেকে যে পদ্ধতি এবং spinning machine, Dyeing&finishing machine, weaving/knitting machine দিয়ে ঐ একটা fiber কে Fabric এর রুপ দিয়ে তারপর তা দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক বানানো হয়; এই পুরো process টাতেই শুধু কোন ব্যক্তি বা দেশের একা কৃতিত্ব নেই।

এই বিশাল পরিসরের মানুষ গুলোর সকাল থেকে রাতের স্বপ্ন পর্যন্ত একটা চিন্তা-ভাবনা, ভালোলাগা , খারাপ লাগা সবটুকু জুড়েই থাকে আপনার বা আপনাদের শরীরের পোশাক।

আপনার পড়নের পোশাকের কাপড়টি অতি যত্নে বুনন , সেলাই, গুণগত মান পর্যবেক্ষণ এবং প্রায় তেরোটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে।

আর সেই পোশাকটির প্রতিটি সুতার রং পোশাক ডিজাইনারের কল্পনা আর শ্রমে আঁকা ভালোবাসার কথা বলে, একজন পোশাক শ্রমিকের ঘাম ঝড়ানো শরীরের হাস্যোজ্জ্বল মুখের কারন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসা দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মাথা ব্যথা আর মানসিক চাপ এবং শারীরিক শ্রমের সফলতার প্রতিচ্ছবি।

এরপরও, কোন পোশাক কারখানায় কবে আগুন লেগেছে, শ্রমিকদের ধর্মঘট চলেছে; এমন দুঃসংবাদ গুলো গণমাধ্যম তথা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত গতিতে। অথচ, এমন দুই একটা দুংসংবাদের চাপে অপ্রকাশিত থেকে যায় বিশ্ব বাজারে অর্জিত এদেশের পোশাক খাতের গর্ব করার মত খবর গুলো।

আপনারা হয়তো জানেন না যে, ঐ দুঃসংবাদ গুলোর বিস্তর প্রচার বিশ্ব বাজারে পোশাক খাত সম্পর্কে কতটা negative ধারনা সৃষ্টি করে। আর, সেই ধারনা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক দূর্বলতা তথা এই দেশের মানুষ সম্পর্কে এক প্রকার খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে।

কারন, আমরা শুধু দূর্ঘটনা গুলো তুলে ধরি; কিন্তু নিজেদের সফলতার গল্প তুলে ধরি না।

যে শ্রমিক মারা গেছেন; তার জন্য আমরা সম্মান, ভালবাসা প্রকাশ করি। কিন্তু, সে যতদিন বেঁচে ছিলেন, তখন তার কোন সংবাদপত্রে তো দূরে থাক; কোনদিন তার হাতে হাত রেখে বলেনি যে, "আপনার শ্রমেই আমরা সফলতার মুকুট পাই।"

সুতার উৎপত্তি থেকে শুরু করে পোশাক ক্রেতা পর্যন্ত সকল সম্পৃক্ত ব‍্যক্তিদের ব‍্যর্থ এবং সফল শ্রমেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

হয়তো, সবার আরেকটু সাহায্য আর উৎসাহে আমরা পোশাক শিল্পে দ্বিতীয় থেকে প্রথম স্থান অর্জন করতে পারি খুব দ্রুত 😊

কৃতজ্ঞতা এবং প্রত‍্যাশা জানাই তাই এই দেশের প্রতিটি জীবিত ও মৃত মানুষের কাছে; এবং প্রতিটি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে।

Copied from
Farhana Afroze Shraboni

"বস্ত্র প্রকৌশলী" না "দর্জি"

শিক্ষাগত যোগ্যতা "বস্ত্র প্রকৌশলী" হওয়ার জন্য অনেকেই ঠাট্টা স্বরুপ "দর্জি" খেতাব দেন।



বিশ্বাস করেন এ নিয়ে কখনোই আমি বিরোধিতা করিনি। কারন , একজন বস্ত্র প্রকৌশলী অবশ্যই দর্জির কাজ জানেন। তবে পার্থক্য এই যে, তারা শুধুমাত্র দর্জির কাজ না; একটা Fiber এর জন্ম থেকে ঐ পোশাক তৈরি করা পর্যন্ত পুরো পদ্ধতির আদ্যোপান্ত, সীমাবদ্ধতা, সমাধান সম্পর্কে জ্ঞান বা ধারণা রাখেন।

তার কাছে একটা পোশাক শুধু কিছু টাকা দিয়ে কেনা একটা product না।

এই ক্ষেত্রে পড়াশোনার আগে পর্যন্ত আমি জানতাম না যে একটা পোশাক তৈরীর পিছনে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান নয়; বরং পুরো পৃথিবীর কৃতিত্ব আছে।
পুরো পৃথিবীর কথা বললাম; কারন আমরা যে সব Natural Fiber ব্যবহার করি, সেখানে বিশ্ব প্রকৃতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে। আবার যে Manmade fiber ব্যবহার করি তাও এই পৃথিবীর পরিবেশ এবং মানুষের অবদান। এই Fiber থেকে যে পদ্ধতি এবং spinning machine, Dyeing&finishing machine, weaving/knitting machine দিয়ে ঐ একটা fiber কে Fabric এর রুপ দিয়ে তারপর তা দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক বানানো হয়; এই পুরো process টাতেই শুধু কোন ব্যক্তি বা দেশের একা কৃতিত্ব নেই।

এই বিশাল পরিসরের মানুষ গুলোর সকাল থেকে রাতের স্বপ্ন পর্যন্ত একটা চিন্তা-ভাবনা, ভালোলাগা , খারাপ লাগা সবটুকু জুড়েই থাকে আপনার বা আপনাদের শরীরের পোশাক।

আপনার পড়নের পোশাকের কাপড়টি অতি যত্নে বুনন , সেলাই, গুণগত মান পর্যবেক্ষণ এবং প্রায় তেরোটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে।

আর সেই পোশাকটির প্রতিটি সুতার রং পোশাক ডিজাইনারের কল্পনা আর শ্রমে আঁকা ভালোবাসার কথা বলে, একজন পোশাক শ্রমিকের ঘাম ঝড়ানো শরীরের হাস্যোজ্জ্বল মুখের কারন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসা দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মাথা ব্যথা আর মানসিক চাপ এবং শারীরিক শ্রমের সফলতার প্রতিচ্ছবি।

এরপরও, কোন পোশাক কারখানায় কবে আগুন লেগেছে, শ্রমিকদের ধর্মঘট চলেছে; এমন দুঃসংবাদ গুলো গণমাধ্যম তথা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত গতিতে। অথচ, এমন দুই একটা দুংসংবাদের চাপে অপ্রকাশিত থেকে যায় বিশ্ব বাজারে অর্জিত এদেশের পোশাক খাতের গর্ব করার মত খবর গুলো।

আপনারা হয়তো জানেন না যে, ঐ দুঃসংবাদ গুলোর বিস্তর প্রচার বিশ্ব বাজারে পোশাক খাত সম্পর্কে কতটা negative ধারনা সৃষ্টি করে। আর, সেই ধারনা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক দূর্বলতা তথা এই দেশের মানুষ সম্পর্কে এক প্রকার খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে।

কারন, আমরা শুধু দূর্ঘটনা গুলো তুলে ধরি; কিন্তু নিজেদের সফলতার গল্প তুলে ধরি না।

যে শ্রমিক মারা গেছেন; তার জন্য আমরা সম্মান, ভালবাসা প্রকাশ করি। কিন্তু, সে যতদিন বেঁচে ছিলেন, তখন তার কোন সংবাদপত্রে তো দূরে থাক; কোনদিন তার হাতে হাত রেখে বলেনি যে, "আপনার শ্রমেই আমরা সফলতার মুকুট পাই।"

সুতার উৎপত্তি থেকে শুরু করে পোশাক ক্রেতা পর্যন্ত সকল সম্পৃক্ত ব‍্যক্তিদের ব‍্যর্থ এবং সফল শ্রমেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

হয়তো, সবার আরেকটু সাহায্য আর উৎসাহে আমরা পোশাক শিল্পে দ্বিতীয় থেকে প্রথম স্থান অর্জন করতে পারি খুব দ্রুত 😊

কৃতজ্ঞতা এবং প্রত‍্যাশা জানাই তাই এই দেশের প্রতিটি জীবিত ও মৃত মানুষের কাছে; এবং প্রতিটি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে।

Copied from
Farhana Afroze Shraboni

কোন মন্তব্য নেই: